সংবাদ প্রকাশের পর শিকলের বন্দি দশা থেকে মুক্তি পেল মজনু

এম এ মুছা (সিরাজগঞ্জ) বেলকুচি:
গত ৮মে জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল একাওর লাইভ ডট কমে “১০ বছর ধরে শিকলে বাঁধা মজনুর জীবন” শিরোনামে একটি সচিত্র সংবাদ প্রকাশিত হয়। খবরটি খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ এন্ড হাসপাতালের চিকিৎসকদের নজরে আসে। তারা হাসপাতালের পরিচালক ড. রুবায়েৎ ফারজানাকে বিষয়টি অবগত করেন।

বুধবার দুপুরে পরিচালকের নির্দেশে মজনুকে বাড়ি থেকে এনে হাসপতালে ভর্তি করা হয়েছে। তার চিকিৎসার ব্যায়ভার বহন করবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। মানষিক রোগ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা: চঞ্চল আজাদের তত্ত্বাবধানে দেয়া হচ্ছে চিকিৎসা সেবা।

জানা যায়, সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানার সরাতৈল গ্রামের দিনমুজুর সুলতান শেখের ছেলে মজনু (২১) সুস্থ ও স্বাভাবিক ভাবে জন্মগ্রহন করে। এক বছর বয়সে বন্ধুদের সাথে খেলতে গিয়ে হঠাৎ করে মাথায় আঘাত পায়। সে সময় হত-দরিদ্র বাবা-মা ঝাঁড়ফুক ছাড়া উন্নত চিকিৎসাসেবা দিতে পারেনি। যে কারনে ওই সময় থেকেই মাথায় ব্যাথা নিয়ে বেড়ে ওঠে মজনু।

৯ বছর বয়সে তার চলাফেরা ও কথাবর্তায় কিছুটা অস্বাভাবিক দিক লক্ষ্য করা যায়। তখন থেকে বস্ত্রহীন হয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুড়ে বেড়ায়, পানিতে পড়ে থাকে, ছোট ছেলে-মেয়েদের মারধর করে এবং কুকুর সহ গরু-ছাগলের মুখে হাত দিয়ে খেলা করে। পরে মজনুর জীবনের নিরাপত্তা ও অন্যের অনিষ্ট করা থেকে বিরত রাখতে ১১ বছর ধরে শিকলে বেঁধে রাখা হয়েছে।

এমন খবর স্থানীয় সংবাদকর্মী জহুরুল ইসলামের সহায়তায় বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় সচিত্র প্রকাশ করে। ঐ খবরটি নজরে আসলে খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকরা কর্তৃপক্ষের নির্দেশে মজনুর বাড়ি থেকে নিয়ে এসে হাসপতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দিচ্ছে।
এবিষয়ে মজনুর মা মমতা বেগম জানায়, দেশ বাসীর কাছে মজনুর চিকিৎসায় সহযোগীতা চেয়ে ছিলাম। খাজা হাসপাতালের ডাক্তারা পত্রিকায় আমার ছেলের করুন দশা দেখে চিকিৎসা দেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করায় কর্তৃপক্ষকে আমি ধন্যবাদ জানাই। আমি অত্যন্ত খুশি, আল্লাহ যেন আমার মজনুকে সুস্থ ও সুন্দর করে আমদের মাঝে ফিরিয়ে দেয়, আপনারা দোয়া করবেন।
এদিকে সংবাদ কর্মী জহুরুল ইসলাম বলেন, সাংবাদিকরা যদি তাদের নিজ নিজ দায়িত্বের জায়গা থেকে সমাজের অবহেলিত মানুষ গুলোর কথা তুলে ধরে তাহলে নিশ্চয় দেশের বিত্তবানরা এগিয়ে আসবে অসহায়দের পাশে । যার উৎকৃষ্ট উদাহারন প্রতিবন্ধী মজনু। সংবাদটি সকল গনমাধ্যমে প্রকাশ করায় সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
এ ব্যাপারে খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ এন্ড হাসপাতালের মানষিক রোগ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা: চঞ্চল আজাদ বলেন, মজনুকে হাসতপাল কর্তৃপক্ষের নির্দেশনায় চিকিৎসাসেবা দেয়া হচ্ছে। পরীক্ষা নিরীক্ষার পর রোগ সর্ম্পকে সুস্পষ্ট জানা যাবে। তবে মাথায় প্রচন্ড আঘাতের কারনেই সমস্যার সুত্রপাত বলে প্রাথমিক ভাবে ধারনা করছি। আশা করি স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আসবে ইনশাআল্লাহ।