শিক্ষিকা হাসনা হেনার মুক্তির দাবিতে রাস্তায় শিক্ষার্থীরা

অনলাইন ডেস্ক : ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণির ছাত্রী অরিত্রি অধিকারীর আত্মহত্যার ঘটনায় গ্রেফতার শিক্ষক হাসনা হেনার মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীরা।

শুক্রবার দুপুর ২টার দিকে বেইলি রোডে অবস্থিত স্কুলের মূল ফটকের সামনে অবস্থান নিয়ে তারা এ বিক্ষোভ শুরু করে। ‘ভিকারুননিসা স্কুল অ্যান্ড কলেজের বর্তমান ও প্রাক্তন ছাত্রীবৃন্দ’ ব্যানারে এতে বতর্মান শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন বেশ কিছু সাবেক ছাত্রীও।

এসময় হাসনা হেনাকে নির্দোষ দাবি করেন তারা। অনেককেই ‘যাদের হাত মানুষ গড়ার, তাদের হাতে কেন হাতকড়া,’ ‘শিক্ষক যদি সম্মান না পায়, এমন শিক্ষার দরকার কী’-এমন নানা স্লোগান দিতে দেখা গেছে। তাকে অবিলম্বে মুক্তি না দেয়া হলে নতুন কর্মসূচি দেয়া হবে বলে জানান আন্দোলনকারীরা।

রোববার পরীক্ষার হলে মোবাইল ফোন সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিল অরিত্রি অধিকারী (১৫)। ফোনে নকল থাকার অভিযোগ তুলে তাকে পরীক্ষা থেকে বহিষ্কার করা হয়।

এরপর ওই ছাত্রীর বাবা-মাকে ডেকে পাঠায় স্কুল কর্তৃপক্ষ। সোমবার সকালে তারা স্কুলে যান এবং মেয়ের হয়ে দফায় দফায় ক্ষমা চান। কিন্তু এরপরও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ তাদের অপমান করেন এবং স্কুল থেকে অরিত্রি অধিকারীকে ছাড়পত্র দেওয়ার ঘোষণা দেন।

নিজের সামনে বাবা-মায়ের এমন অপমান সইতে না পেরে ওইদিন দুপুরে শান্তিনগরের বাসায় ফিরে গলায় ওড়না দিয়ে ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে ওই ছাত্রী। ওই ঘটনার জেরে মঙ্গলবার শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের আন্দোলনে উত্তাল হয়ে উঠে বেইলি রোডে ভিকারুননিসার ক্যাম্পাস।

মঙ্গলবার রাতে অরিত্রির আত্মহত্যার ঘটনায় পল্টন থানায় ওই মামলা করেন তার বাবা। আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে হওয়া মামলায় শিক্ষা ভিকারুননিসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌস, প্রভাতি শাখার প্রধান জিনাত আরা এবং হাসনা হেনাকে আসামি করা হয়।

বুধবারও চলে আন্দোলন। এসময় অধ্যক্ষের পদত্যাগ ও তাকে আত্মহত্যায় প্ররোচণার দায়ে শাস্তিসহ ছয় দফা দাবি জানায় শিক্ষার্থীরা। বিকেলে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি স্থগিতের ঘোষণা দেয় তারা।

পরে সন্ধ্যায় ভিকারুননিসা স্কুল অ্যান্ড কলেজের গভর্নিং বডির এক জরুরি সভায় ওই তিনজনকে বহিষ্কার করা হয়।

এদিন দুপুরে অরিত্রির আত্মহত্যার ঘটনায় গঠিত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের সারাংশ তুলে ধরেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। এতে বলা হয়, অভিযুক্তরা মানসিকভাবে অরিত্রিকে বিপর্যস্ত করে তোলে এবং তাকে আত্মহত্যায় প্ররোচিত করে। এ জন্য কমিটি তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে বলেছে।

এর মধ্যে বুধবার রাতেই রাজধানীর উত্তরা থেকে গ্রেফতার করা হয় শিক্ষক হাসনা হেনাকে। বৃহস্পতিবার তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।

পূর্বঘোষণা অনুযায়ী বৃহস্পতিবার সকালে ক্যাম্পাসের সামনে অবস্থান নিয়ে বেশ কিছু শিক্ষার্থী তৃতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ করে। তারা ক্লাস পরীক্ষায় ফেরার শর্ত হিসেবে অধ্যক্ষকে অরিত্রির বাবা-মায়ের কাছে আনুষ্ঠানিক ক্ষমা চাওয়াসহ বেশ কিছু দাবি জানায়।

এক পর্যায়ে প্রতিষ্ঠানটি গভর্নিং বডির সভাপতি সাংবাদিকদের সামনে অরিত্রির বাবা-মায়ের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে বলেন, প্রয়োজনে তিনি পদত্যাগ করবেন।