দীর্ঘ ৮ ঘন্টা দাড় করিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ফুলের শুভেচ্ছা নিলেন না:গঞ্জ পুলিশ সুপার

প্রতিনিধি নারায়ণগঞ্জ : নারায়ণগঞ্জে জেলা পুলিশ সুপার মঈনুল হক পিপিএম ফতুল্লা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে আসবেন তাই সকাল ৮টার মধ্যে স্কুল প্রাঙ্গনে হাজির হওয়ার জন্য কোমলমতি ছাত্র ছাত্রীদের নির্দেশ দেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসেন। প্রধান শিক্ষকের নির্দেশ মতো শিশুদের সকলেই হাজির হওয়ার পর সারাদিন না খেয়ে বিকেল ৪ টা ৩৫ মিনিট পর্যন্ত ফুলের ঝুঁড়ি নিয়ে ঠায় দাড়িয়ে থাকার পর অভুক্ত শিশুদের মুক্তি মিলে। তারও আবার সংবাদ কর্মীদের জেরার কারণে । নইলে সমাবেশ শেষ করে বাড়ী ফেরা নির্দেশনা ছিলো শিশুদের প্রতি।


ঘটনাটি ঘটেছে  রোববার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত । শিশুদের এমন অভুক্ত রেখে সরকারের কঠোর নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও কি করে দীর্ঘ ৮ ঘন্টা রোদ ও টিপটিপ বৃস্টির মধ্যে দাড় করিয়ে রাখা হলো এমন প্রশ্নে বিদ্যালয়টির অভিবাবক প্রতিনিধি কয়েকজন কোন উত্তর না দিয়ে প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসেনকে দেখিয়ে সটকে পরে। প্রধান শিক্ষকও পুলিশ সুপার আগমনকে ঘিরে ব্যস্ততা দেখিয়ে কোন উত্তর দিতে রাজি হন নাই। পরে ফোন ও বন্ধ করে রাখেন আনোয়ার হোসেন।


অসংখ্য অভিভাবকদের অভিযোগের ভিত্তিতে জানান যায়,  রোববার দুপুর ১২ টায় ছাত্র চাত্রীদের ইতিহাস পরীক্ষা থাকার পরও পরীক্ষার প্রস্তুতি না নিয়েই ফতুল্লা পাইলট স্কুলে সকাল ৮ টার মধ্যে হাজির হতে বলা হলে শিক্ষকদের কথামতো ছাত্র ছাত্রীরা হাজির হয় বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে। এরপর কমিনিটি পুলিশ আয়োজিত জঙ্গিবাদ ও মাদক বিরোধী সমাবেশকে ঘিরে শিক্ষার্থীদের দেয়া হয় মহড়া। দুপুর ১২ টায় ইতিহাস পরীক্ষা নেয়া হলেও কোন শিক্ষার্থীকে আর বিদ্যালয় থেকে বের হতে দেয়া হয় নাই ।

 

দুপুর ২ টা থেকে আবার বিদ্যালয়ের গেইটে ফুল ও ফুলের পাপড়ী ভর্তি ঝুড়ি হাতে দিয়ে বিকেল ৪টা ৩৫ মিনিট পর্যন্ত প্রধান অতিথি  জেলা পুলিশ সুপার মঈনুল হককে বরণ করতে সকল শিক্ষার্থীদের দাড় করিয়ে রাখা হয় । কোন শিক্ষার্থী যাতে পালিয়ে যেতে না পারে সে জন্য বিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষকদের পাহাড়ার ও ব্যবস্থা করা হয় ।
যথারীতি সাইরেন বাজিয়ে পুলিশ সুপার মঈনুল হক সরকারী গাড়ীযোগে বিদ্যালয়ে প্রবেশের সময় ফুলে ফুলে ঢেকে ফেলে গাড়ী। গাড়ী থেকে নামার পর আবারো ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে স্বাগতম জানানো হয় অতিথিদের।

এ সময় ভুক্তভোগী এক  শিক্ষার্থীর  সাথে কৌশলে জানতে চাইলে জানায়, আমাদের সকাল ৮ টায় আসতে বলে। সকালে খেয়ে এসেছি আর কিছুই খাই নাই।
অভিভাবক প্রতিনিধি সাংবাদিক আনিসুজ্জামন অনু ও সহিদুল ইসলামের সামনেই দাড় করিয়ে রাখা শিশুদের সাথে এমন আলাপের সময় দুইজন প্রতিনিধিকে প্রশ্ন করলে তারা এ বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে জানান। এই অনুষ্ঠান  বিদ্যালয়ের নয় বলেও অবহিত করে প্রধান শিক্ষককে দেখিয়ে দেন।

এ সময় পুলিশের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের জন্য বিশাল খাবারের প্যাকেট ও কোমল পানীয় নিয়ে আনা হলেও বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে কোন শিশুকেই কোন খাবার দেয়া হয় নাই বলে জানায় দাড়িয়ে থাকা শিক্ষার্থীরা।বিষয়টি স্বীকারও করেন অভিভাবক প্রতিনিধিগণ।
বিদ্যালয় মাঠে কমিউনিটি পুলিশিং, ফতুল্লা ইউনিয়ন কমিটি আয়োজিত জঙ্গিবাদ ও মাদক বিরোধী সমাবেশ চলাকালীন সময়ে  সন্ধ্যায় কয়েকজন অভিভাবক কঠোর সমালোচনা করে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কঠোর নির্দেশ ছিলো কোন মন্ত্রী, সংসদ সদস্য কিংবা কোন বিশেষ ব্যক্তিরা কোন অবস্থাতেই যেন শিক্ষার্থীদের দাড় করিয়ে রেখে সবংর্ধনা গ্রহন না করেন ।

খোদ নারায়ণগঞ্জ ৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমানও এমন কাজটি করতে দেন না । সে ক্ষেত্রে জেলা পুলিশ সুপার মঈনুল হক এমন সম্ভর্ধনা নেয়ার আগে কেন শিশুদের এভাবে দাড় করিয়ে রাখার বিষয়টি খেয়াল করলেন না ।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ছাড়া অনেকেই কেন বিষয়টি দেখার প্রয়োজন বোধ করলেন না ?

 

অতিথিদের জন্য দারোগা আতাউর বিশাল খাবার গাড়ী ভর্তি করে নিয়ে আসলেন, শিশুদের বিষয়টি দেখার জন্য কোন শিক্ষক, অভিভাবক ও কর্মকর্তাদের  দৃস্টি পরলো না কেন ? এই দায় কার ?  অভিভাবকদের এমন ক্ষোভের বিষয়ে কাউকেই খুজে পাওয়া য়ায় নাই ।