শিক্ষক শ্যামল কান্তি জামিনে মুক্ত

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি : এমপি সেলিম ওসমানের দ্বারা লাঞ্ছিত প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত সাতদিন কারাবাসের পর জামিন পেয়েছেন। তাকে লাঞ্ছনার ঘটনায় মামলা দায়েরের দুইমাস পর ঐ স্কুলের শিক্ষিকা মোর্শেদা বেগম শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তের বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহনের অভিযোগে মামলা দায়ের করেন।
আসামীপক্ষের আইনজীবী সাখাওয়াৎ হোসেন খান জানান, বুধবার দুপুরে জেলা ও দায়রা জজ আদালতে শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তের জামিন আবেদনের শুনানি হয়। আমি আদালতে বলি, তার বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহনের যে মামলা করা হয়েছে সে মামলায় তিনি কখন কোথায় কথিত এ ঘুষ নিয়েছেন তা উল্লেখ করা নেই।

শুধু বলা আছে ২০১৪ সালের ২৪ ডিসেম্বর পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের স্কুলের ইংরেজী শিক্ষক মোর্শেদা বেগমকে এমপিওভুক্ত করে দেয়ার জন্য প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা ঘুষ নিয়েছেন। ঘুষ নেয়া হয়েছে ২০১৪ সালে। অথচ বাদিনী মামলা করলেন দুই বছর পরে ২০১৬ সালে। এমপি সেলিম ওসমান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে লাঞ্ছিত করার দুইমাস পরে। আগে কেন বাদিনী মামলা করলেন না ? তার উর্ধ্বতন কতৃপক্ষকে জানালেন না ? ২০১৪ সালের ডিসেম্বরের ২৪ তারিখ ঘুষ নিয়েছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে।

অথচ সেসময় স্কুল শীতকালীন ১৫ দিনের বন্ধ ছিলো। এ মামলায় সাক্ষি করা হয়েছে বাদিনীর দুই বোন আর স্বামীকে। সাক্ষিরা সবাই যেহেতু বাদিনী মোর্শেদা বেগমের আত্মীয় তাই তারা সবাই তার পক্ষে বলবেন এটা-ই স্বাভাবিক। প্রকৃত ঘটনা হচ্ছে ২০১৬ সালের ১৩ মে শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে ঐ স্কুল থেকে বের করে দেয়ার ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে তাকে ধর্মীয় অবমাননার অপবাদ দেয়া হয়। এ অপবাদ দিয়ে তাকে কানে ধরে ওঠবস করান ও মারধর করেন। এ ব্যাপারে উচ্চাদালতের সুয়োমটো নির্দেশে তদন্তের পর মামলা হয়েছে।

নিজের বিরুদ্ধে মামলার কারনে এমপি সেলিম ওসমান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে হয়রানী করতে পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে এ মামলা করিয়েছেন। এছাড়া শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত একজন অসুস্থ ব্যাক্তি। আমরা আদালতে তার চিকিৎসার কাগজপত্র দেখাই। শুনানী শেষে বিচারক সৈয়দ এনায়েত হোসেন তাকে আগামী ২০ জুলাই পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন জামিন মঞ্জুর করেন।
আদালতে এসময় শ্যামল কান্তি ভক্তের স্ত্রী সবিতা হালদার উপস্থিত ছিলেন। মামলাটি পরিকল্পিত মিথ্যা ও হয়রানিমূলক বলে দাবী করে সবিতা হালদার মামলাটি দ্রুত খারিজ করে দেয়ার জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিচারপতির কাছে জোর দাবী জানান। তিনি বলেন, আমাদের হয়রানি করতে এমপি সেলিম ওসমান এই মামলা করিয়েছেন।
২০১৬ সালের ১৩ মে শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে পিয়ার সাত্তার আব্দুল লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের ভেতরে লাঞ্ছিত করেন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য এ কে এম সেলিম ওসমান। শ্যামল কান্তি ভক্ত এ স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক। ঘটনাটির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে এ নিয়ে সাড়া দেশে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরী হয়। ওই ঘটনায় নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি হলেও পুলিশ ‘লাঞ্ছনার প্রমাণ পাওয়া যায়নি’ জানিয়ে অভিযোগ সত্য নয় বলে আদালতে প্রতিবেদন দেয়। কিন্তু পুলিশ প্রকৃত দোষীদের চিহ্নিত করতে ব্যর্থ হয়েছে বলে হাইকোর্ট পুরো ঘটনার বিচারিক তদন্তের নির্দেশ দেওয়ার পর ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম শেখ হাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি গঠিত হয়।

ওই কমিটি চলতি বছর ১৯ জানুয়ারি হাইকোর্টে প্রতিবেদন দাখিল করে। ২২ জানুয়ারি বিচারপতি মঈনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি এ জে বি এম হাসানের বেঞ্চ ওই তদন্ত প্রতিবেদন গ্রহণ করে জিডিসহ বিচারিক নথিপত্র অবিলম্বে ঢাকায় পাঠাতে নির্দেশ দেয়। পরে আদালতের নির্দেশে সেলিম ওসমানের বিরুদ্ধে ঢাকার সিএমএম আদালতে একটি নিয়মিত মামলা দায়ের করা হয়। এ মামলায় সেলিম ওসমান জামিনে রয়েছেন। আগামী ৪ জুলাই এ মামলার পরবর্তী তারিখ ধার্য্য করা হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জের বন্দরের পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের স্কুলের ইংরেজী শিক্ষক মোর্শেদা বেগম ঘুষ গ্রহনের অভিযোগে শিক্ষক শ্যামল কান্তির বিরুদ্ধে গত বছরের ২৭ জুলাই আদালতে মামলা দায়ের করেন। গত ২৪ মে আদালত শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করলে ওইদিন শ্যামল কান্তি স্বেচ্ছায় আদালতে আত্মসমর্পন করে জামিনের আবেদন করেন। আদালত আবেদন না মঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। তাকে জামিন না দেয়ার বিষয়টি ব্যাপকভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচিত হয়।বিকেল পাঁচটায় তিনি নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগার থেকে মুক্তি পান।