‘শালিসের নামে বাদীনীকে ডেকে নিয়ে পিটিয়ে বাড়ীঘর ছাড়া করেছে ইউপি চেয়ারম্যান নাদিম সরকার’

নরসিংদী প্রতিনিধি : ফৌজদারী মামলায় নিশ্চিত সাজা হবে জেনে রোজিনা নামে এক বাদীনী ও তার সন্তানদেরকে ডেকে নিয়ে পিটিয়ে গ্রাম ছাড়া করে দিয়েছে জয়নগর ইউপি চেয়ারম্যান নাদিম সরকার ও তার ঠেঙ্গারে বাহিনী। গত ১০ মে শিবপুর উপজেলার জনগর গ্রামে এই ঘটনাটি ঘটেছে। মামলা করার জন্য ১৯ দিন থানায় ঘোরাঘুরি করে ব্যর্থ হয়ে গত সোমবার রোজিনা বেগম নরসিংদী পুলিশ সুপারের নিকট একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছে।
ঘটনার সংক্ষিপ্ত বিবরণ থেকে জানা গেছে, শিবপুর উপজেলার জয়নগর গ্রামের জসিম উদ্দিনের স্ত্রী রোজিনা বেগম স্বামীর পৈত্রিক সূত্রে পাপ্ত জমির সীমানা নিয়ে প্রতিবেশী হুমায়ূন কবির ও হাসনাত গংদের সাথে বিরোধ চলে আসছে। ২০১৩ সালের ১ আগস্ট তার জমি থেকে গাছ কেটে নিয়ে যাবার ঘটনা নিয়ে রোজিনার সাথে আসামীদের ঝগড়া হয়। একই দিন রাত ৯টায় আসামীরা রোজিনার বাড়ীতে হামলা চালিয়ে ব্যাপক মারধোর, ভাংচুর ও লুটপাট করে। এই ঘটনায় রোজিনা বেগম বাদী হয়ে হুমায়ুন কবীর হাসনাত, জাহান, রহিছ, আমজাদ ও রকিব সহ ৫জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করে। আদালতে মামলাটির বিচার কার্যের সাক্ষ্য প্রমান দেয়ার পর স্পষ্ট হয়ে যায় যে রোজিনার মামলায় আসামীদের নিশ্চিত সাজা হবে। এই অবস্থায় আদালতের সাজা থেকে বাঁচার জন্য আসামীরা জয়নগর ইউপি চেয়ারম্যান নাদিম সরকারের আশ্রয় নেয়। চেয়ারম্যান নাদিম সরকার আদালতকে পাশ কাটিয়ে স্থানীয় সিরাজুল ইসলামের বাড়ীতে শালিস দরবারের কথা বলে গত ১০ মে রোজিনা বেগম ও তার ছেলে নাজমুল ও সাজিমকে ডেকে নেয়। সেখানে চেয়ারম্যান নাদিম সরকার আসামীদের পক্ষ নিয়ে রোজিনা ও তার দুই ছেলে নাজমুল ও সাজিমকে মারধোর করে। চেয়ারম্যান নাদিম, নাজমুলকে চর থাপ্পর মারার পর আসামীরা রোজিনা ও তার সন্তানদেরকে মারধোর করে বাড়ীঘর ছেড়ে চলে যাবার নির্দেশ দেয়। অন্যথায় তাকে ও তার ছেলেকে হত্যা করার হুমকি দেয়। এই অবস্থায় রোজিনা ও তার দুই ছেলে দৌড়ে গিয়ে পার্শ্ববর্তী শহীদ স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিলে চেয়ারম্যান ও মামলার আসামীরা সেখানেও গিয়েও রোজিনা ও তার সন্তানদের মারধোর করে। এই অবস্থায় উচ্চ বিদ্যালয়ের কয়েকজন ছাত্রী জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। রোজিনা বেগম সেখান থেকে পালিয়ে শিবপুর থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ তার মামলা নেয়নি। পুলিশ উল্টো বলে দিয়েছে, তুই চেয়ারম্যান নাদিম সরকারকে জুতা দিয়ে পিটিয়েছিস, তোর ব্যাপারে এসপির কাছে নালিশ করা হয়েছে। তোর মামলা নেয়া যাবে না। চেয়ারম্যান নাদিম সরকারের নিষেধের কারণে শিবপুর থানা পুলিশ দীর্ঘ ১৮ দিন রোজিনার মামলা গ্রহণ করেনি। এরই মধ্যে রোজিনার দাখিলকৃত মামলায় কয়েকজন আসামীকে আদালত বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ডের আদেশ দিয়েছে। এরপরও থানা কর্তৃপক্ষ রোজিনার মামলা গ্রহণ করেনি। পরে গত ২৯ মে সোমবার রোজিনা নরসিংদী প্রেস ক্লাবে গিয়ে তার এই দুঃখের কাহিনী বিবৃত করে। পরে সাংবাদিকদের পরামর্শে সে ঘটনাটি নরসিংদী পুলিশ সুপারকে লিখিতভাবে অবহিত করে।
উল্লেখ্য যে, ইতোপূর্বে জয়নগর ইউনিয়নে সালামত নামে এক আসামী লালমিয়া নামে এক ব্যক্তিকে কুপিয়ে মারাত্মক যখম করে। তার দায়ের কুপে লাল মিয়ার মাথা দ্বি-খন্ডিত হয়ে যায়, হাসপাতালে নেয়ার পর তার মাথায় ৩৬টি সেলাই দিতে হয়। চেয়ারম্যান নাদিম সরকার এই আসামী সালমতের পক্ষে পরিষদের প্যাডে এক সাফাই পত্রে উল্লেখ করে যে সালামত একজন ভাল লোক। এই ঘটনা নিয়ে এলাকায় ব্যাপক সমালোচনার ঝড় উঠে। পরে অবস্থা বেগতিক দেখে সে সালামতকে ডেকে নিয়ে সাফাই পত্রের মূল কপি তার কাছ থেকে নিয়ে যায়।