স্বাস্থ্য ডেস্ক:
শরীর ভালো না থাকলে মন ভালো থাকে না, এটা পুরনো প্রবাদ। বর্তমানে এ প্রতিযোগিতার জীবনে মানসিক সুস্থতার বিষয়টি অনেক ক্ষেত্রেই নজর এড়িয়ে যায়। বর্তমানে বাংলাদেশের মানুষ আগের চেয়ে অনেক শিক্ষিত। একই সঙ্গে শিক্ষা সচেতনও। তবে শিক্ষার্থীদের মানসিক বিকাশ ও সুস্থতা সম্পর্কে এখনও সবাই সচেতন নয়। বিশ্বে ক্রমেই বাড়ছে এ সমস্যা।
স্বভাবতই কৈশোরে শরীর ও মনের অন্যরকম পরিবর্তন আসে। এ পরিবর্তনকে সবাই একইভাবে গ্রহণ করতে পারে না। মেনে চলা ও মানিয়ে চলা এ দুইটির সামঞ্জস্য না হলেই ঘটে বিপত্তি। স্কুলজীবনে মনের অবস্থা থাকে একরকম। তবে শিশুকালেও যে মানসিক সমস্যা হয় না, তা নয়। আমাদের দেশে এরই মধ্যে ‘ঢ়বফরধঃৎরপ ঢ়ংুপযরধঃৎু’ বিভাগ খোলা হয়েছে।
এখনকার ছোট ছোট স্কুলমুখী বাচ্চাদের ভেতরেও অনেক মানসিক সমস্যা দেখা যায়। বিশেষ করে যেসব বাচ্চার বাবা-মা দুইজনই বাসার বাইরে থাকেন, চাকরি করেন, সেসব বাচ্চা সামাজিক মেলামেশার ক্ষেত্রে পরবর্তী সময়ে অসুবিধায় পড়ে। অনেক ক্ষেত্রে মা-বাবাও বুঝতে পারেন না শিশুদের ছোট মনের অভিব্যক্তিগুলো। মনে রাখবেন, ছোট বয়সের অভ্যাসগুলো বড় হয়ে গেলে সহজে পরিবর্তন হয় না। অনেক মাকেই ইদানীং দেখা যায়, টিভিতে গান ছেড়ে বাচ্চাকে খাওয়াতে। এ অভ্যাস হয়ে গেলে পরে টিভি না ছাড়লে খেতে চায় না শিশু। বর্তমানে ডিজিটাল বাংলাদেশে আমরা সবাই প্রযুক্তিনির্ভর। তাই প্রযুক্তির খারাপ দিক থেকে আপনার সন্তানকে দূরে রাখতে হবে। আমি এরকম বাবা দেখেছি যিনি বাসায় রিভর নিয়েছিলেন শুধু বাচ্চাদের দেখিয়ে খাবার খাওয়ার জন্য। শিশুর মানসিক বিকাশকে গোড়াতেই নষ্ট করে দেন এখনকার মা-বাবারা।
কলেজে ও বিশ্ববিদ্যালয়পড়–য়া সন্তানদের নিয়ে অভিভাবকরা আছেন মহাবিপদে। মানসিকভাবে ভেঙে পড়লেই আত্মহত্যাপ্রবণ হয়ে ওঠে ওরা। আবেগ, মোহ, প্রেম, আর্থিক অসচ্ছলতা, মা-বাবার আলাদা থাকা, পড়াশোনায় খারাপ করা ইত্যাদি কারণে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে তরুণরা। বেশিরভাগ সময় এ বয়সী ছেলেমেয়েরা পায় না। বরং মা-বাবার সঙ্গে ব্যবধান, ভুল বোঝাবুঝি বেড়ে যায়। অভিভাবকদের বুঝতে হবে, এ সময় খুব জরুরি। সন্তান ভুল করলেও রেগে গিয়ে মারধর করা যাবে না। ঠান্ডা মাথায় এগোতে হবে।
আরিফা, বয়স ১৬। মা বুঝতে পারেন মেয়ে প্রেম করছে। প্রতি মাসে মেয়ের মাসিক হয় কিনা খুব খবরদারি করেন মা। একবার দুই মাস পার হয়ে গেলেও মাসিক হলো না। তখন শুরু হলো মায়ের গালাগাল। কিন্তু আরিফার মায়ের মতো অনেক মা-ই জানেন না যে, একটি স্বাভাবিক মাসিক মেয়ের কোনো কারণ ছাড়াও তিন মাস বন্ধ থাকতে পারে। এতে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। এই যে, তিনি সন্দেহের তীর ছুড়ে দিলেন মেয়ের দিকে। এতেই তৈরি হয় নতুন সমস্যা।
বর্তমানে মায়েরা প্রত্যক্ষ করেছেন মেয়েরা নানাভাবে উৎপীড়ন ও যৌন নিপীড়নের শিকার হয়, যা দেখে তারা মেয়েদের অনেক কাজে বাধা দেন। মেয়ে তখন মনে করে, মা স্বাধীনতা দিতে চান না, বিশ্বাস করেন না তাকে। মায়ের অবস্থান মা ভাবেন, তিনি ঠিক। মেয়ের অবস্থান মেয়ে ভাবে, সে ঠিক। মা আর মেয়ের ‘ঠিক’ এর মাঝে সঙ্ঘাত বাধে। সঙ্ঘাত থেকে ক্ষোভ ও ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হয়।
অনেক সমস্যার কথা বললাম। আসুন সমাধান নিয়ে আলোচনা করিÑ
বাচ্চা খেতে না চাইলে জোর করে খাওয়াবেন না। খাওয়ানোর জন্য টিভি, ইন্টারনেট, মোবাইল ইত্যাদির আশ্রয় নেবেন না। তাড়াহুড়ো না করে ধৈর্য ধরে অল্প অল্প করে খাওয়ান।
বাচ্চার সঙ্গে কথা বলুন, খেলা করুন। স্কুলে মনোযোগী কিনা, খেয়াল করুন। কোন অসুবিধা চোখে পড়লে সময় নষ্ট না করে দ্রুত শিশু সাইকোলজিস্টের শরণাপন্ন হন।
কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়পড়–য়া শিক্ষার্থীদের অতিরিক্ত শাসন, অতিরিক্ত স্বাধীনতা কোনোটাই দেবেন না। অতিরিক্ত সন্দেহও করা যাবে না। অভিভাবক হিসেবে সন্তানকে চোখে চোখে রাখবেন; কিন্তু তা বুঝতে দেবেন না। কোনো সমস্যা চোখে পড়লে সন্তানকে বুঝিয়ে বলুন।
ছোটবেলা থেকেই সন্তানদের সঙ্গে বন্ধুত্যপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলুন। কৈশোরে খেলবে-লাফাবে। সবকিছু আলোচনা করুন, বিশ্বাস ও আস্থা গড়ে তুলুন যাতে সন্তান তার মনের কথা সহজে আপনাকে খুলে বলতে পারে। কোনো জড়তা যেন কাজ না করে।
আর সন্তানদেরও মনে রাখতে হবে, মন যা চায় তা-ই সব সময় করা যাবে না। এ সময় মা-বাবার চেয়ে বন্ধুবান্ধব বেশি আপন মনে হয়। প্রকৃত বন্ধু আসলে নিজ পরিবার, এ কথা ভোলা যাবে না। মাঝে মাঝে নিজেকেই নিজের কাউন্সিলিং করতে হয়।
একটা মেয়ে যখন বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে দেখা করতে তৈরি হয় সে নিজেই তখন কাজলটা গাড় করে দেয়, লিপস্টিকটা বারবার চেক করে ইত্যাদি আচরণ মায়ের চোখ এড়ায় না। বিভিন্ন ভাবভঙ্গি দেখে মা আন্দাজ করতে পারেন মেয়ে কোথায় যাচ্ছে। তাই মেয়েকেও বুঝতে হবে, চাইলেই সব লুকানো যায় না। অনেক মা-বাবা তাদের অভিজ্ঞতা থেকেই বুঝতে পারেন। তাই চট করে মা-বাবার ওপর রেগে যাওয়া যাবে না।
আপনার সন্তান সিগারেটে আসক্ত বা মাদকাসক্ত, এটি যদি বুঝতে পারেন, দেরি না করে মানসিক ডাক্তারের কাছে যান। অবহেলা করবেন না। ধূমপানকেও প্রশ্রয় দেবেন না।
লেখাপড়ায় ভালো করতে চাই মানসিক সুস্থতা
