মাহাবুবুর রহমান,কক্সবাজার : বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে যাবতীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে মিয়ানমার। নভেম্বরের মাঝামাঝি ২ হাজার রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নেবে তারা।
বুধবার (৩১ অক্টোবর) দুপুরে উখিয়ার কুতুপালংয়ের ডি-৫ ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের সাথে আলোচনা শেষে এসব কথা বলেন মিয়ানমারের পররাষ্ট্র সচিব মিন্ট থোয়ে।
পররাষ্ট্র সচিব মিন্ট থোয়ে বলেন, ৮ হাজার ৩০ রোহিঙ্গাকে শনাক্ত করা হয়েছে। সেখান থেকে প্রথম ধাপে ২ হাজার ও দ্বিতীয় ধাপে আরও ৫ হাজার রোহিঙ্গা মিয়ানমার ফেরত যাবে। পর্যায়ক্রমে বাকিদেরও ফিরিয়ে নেয়া হবে।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। তারমধ্যে, স্যানিটেশন, স্বাস্থ্য ও বাসস্থানসহ যাবতীয় সব প্রস্ততি নেয়া হয়েছে।
মিন্ট থোয়ে’র নেতৃত্বে আসা মিয়ানমারের ১৬ প্রতিনিধি ছাড়া বাংলাদেশের পক্ষে উপস্থি ছিলেন, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মো. শহিদুল হক, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার আব্দুল মান্নান, দুর্যোগ ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার আবুল কালাম, জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেনসহ প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিরা।
এরআগে সকাল ১০ টার দিকে কক্সবাজার বিমানবন্দর ও সাড়ে ১১ টার দিকে উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পৌছান মিয়ানমারের প্রতিনিধি দলটি। সেখানে তারা বিভিন্ন রোহিঙ্গা সাথে আলোচনা ও ক্যাম্প ঘুরে দেখেন।
ক্যাম্প পরিদর্শন করে ডি-৫ এলাকায় ইন্টার সেক্টর কো-অর্ডিনেশন (আইএসসিজি) এর সম্মেলন কক্ষে প্রায় ৫০ জন রোহিঙ্গাদের সাথে বৈঠক করেন মিন্ট থোয়ে। এতে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন। এই বৈঠকে রোহিঙ্গারা মিয়ানমার ফিরে যাওয়ার বিষয়ে মিন্ট থোয়ের কাছে ৬টি দাবী তুলে ধরেন।
বৈঠকে রোহিঙ্গা নেতা মাস্টার আব্দুর রহিম, ছেনুয়ারা বেগমসহ বেশ কয়েকজন কথা বলেন। তারা বলেন, ফিরে যাওয়ার বিষয়ে তাদের কিছু শর্ত আছে। সেই শর্ত গুলো মেনে নিলে তারা ফিরবে।
শর্ত গুলো হলো-
১, জমিজমা ফেরত : মিয়ানমারে তাদের সমস্ত সম্পত্তি ও বসতভিটা কেড়ে নেওয়া হয়েছে। তাদের এই সম্পত্তি অবশ্যই ফেরত দিতে হবে। এবং তারা মিয়ানমারে ফেরত যাওয়ার আগেই এই ব্যবস্থা করতে হবে।
২, মিয়ানমারের নাগরিকত্ব প্রদান: মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হয়েছে। এরফলে সবকিছু বঞ্চিত তারা। এই নাগরিকত্ব ফেরত দিতে হবে।
৩, রোহিঙ্গা নির্যাতনের বিচার: রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের উপর বর্বর নির্যাতন চালানো হয়েছে। নির্বিচারে গণহত্যা করা হয়েছে। তারা এই নির্যাতনের দৃষ্টান্ত বিচার চায়।
৪, মিয়ানমারে ক্যাম্পে থাকতে পারবে না রোহিঙ্গা : বিভিন্ন মাধ্যমে রোহিঙ্গারা খবর পেয়েছে, সেখানে (মিয়ানমারে) তাদেরকে রাখার জন্য ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু তারা সেখানে (মিয়ানমার) গিয়ে ক্যাম্পে থাকতে পারবে না। তারা চায়, মিয়ানমারে তাদের ফেলে আসা বসতভিটায় থাকবে।
৫, নিরাপত্তা জোরদার : রাখাইন রাজ্যে যেসব জায়গায় রোহিঙ্গাদের বসতি ছিল সেখানে কঠোর নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে। যাতে রোহিঙ্গাদের উপর আর কোন নির্যাতন না হয়।
৬, আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে সামনে সব শর্ত মেনে নেওয়া: রোহিঙ্গারা যেসব শর্তে মিয়ানমারে ফেরত যাবে, সেগুলো আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের সামনে এসে মেনে নিতে হবে। যাতে করে ওয়াদা ভঙ্গ করতে না পারে।
রোহিঙ্গাদের দাবী গুলোর বিষয়ে তাৎক্ষণিক কোন উত্তর দেননি মিয়ানমরের পররাষ্ট্র সচিব মিন্ট থোয়ে। একারণে অসন্তোষ্ট রোহিঙ্গারা।
রোহিঙ্গাদের দাবী গুলোর বিষয়ে পররাষ্ট্র সচিব মিন্ট থোয়ে সাংবাদিকদের বলেন, রোহিঙ্গাদের দেয়া দাবিগুলো মিয়ানমার সরকারের কাছে যথাযথভাবে পৌছে দেয়া হবে। পাশাপাশি বাকি রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার বিষয়েও আলোচনা করা হবে।
উল্লেখ্য যে, মিয়ানমার নির্যাতনেরমূখে গত বছরের ২৪ আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছে ১২ লাখের মতো রোহিঙ্গা। উখিয়া-টেকনাফের মোট ৩০টি ক্যাম্পে তারা অস্থায়ীভাবে বসবাস করছেন।