মাহাবুবুর রহমান: রোগিদের বেডে ছাড় পোকা, চারিদিকে নোংরা আবর্জনা, অপারেশন থিয়েটার থেকে ব্রাদার আবার ম্যানেজার সবই একজন এছাড়া কে আয়া কে নার্স বুঝা বড় মুসকিল। মোট কথা হাসপাতালের কোন লক্ষন না থাকলেও এটি হাসপাতাল বলেই রোগিদের ভর্তি করিয়ে টাকা হাতিয়ে নেয়। তাদের নিজস্ব দালাল আছে যারা হাসপাতাল থেকে রোগিদের বাগিয়ে আনবে তাদের জন্য ও রয়েছে আলাদা বখসিস। এভারে দীর্ঘ দিন ধরে সাধারন মানুষ কে বোকা বানিয়ে হাসপাতালের নামে প্রতারনা করছে খানাকাহ মসজিদ রোডের কক্স ন্যাশনাল হাসপাতাল নামের একটি প্রতিস্টান।
ঈদগড় থেকে আসা মাসুদ আলম (৫০) তার মাকে নিয়ে কক্সবাজারে সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৬ দিন আগে, মায়ে ব্রেইন টিউমার বলেছে ডাক্তাররা। তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করলেও টাকার অভাবে যেতে পারছে না। পরে সমিতি পাড়ার আনোয়ার নামে এক আত্বীয় তাকে নিয়ে গেছে আরো উন্নত চিকিৎসার জন্য কক্স ন্যাশনাল হাসপাতালে সেখানে মরিয়ম নামের ঐ রোগিকে নরমাল ডিএস স্যালাইন নিয়েই বেডে ভর্তি দিয়েছে। আলাপ কালে মাসুদ বলেন আমরা গ্রামের মানুষ কিছু বুঝিনা। আমার পরিচিত আনোয়ার এখানে ভর্তি করিয়েছে ভাল চিকিৎসার কথা বলে দৈনিক ৭০০ টাকা বেড খরচ বলে। এখানে এসে দেখছি আমাদের যে বেড দেওয়া হয়েছে তাতে বেডসিড নেই বেডে ছাড় পোকা আছে বেশি তাছাড়া চারিদিকে ময়লা নোংকা পরিবেশ আর গন্ধে ভরা। আর আমরা ছাড়া কোন রোগি নেই। বুঝতে পারছি না কি করবো। এ বিষয়ে জানতে চাইলে কর্তব্যরত এক মহিলা নিজেকে নার্স পরিচয় দিয়ে বলেন ডাক্তার মহিউদ্দিন মোঃ আলমগীরের তত্তাবধানে এখানে ভর্তি হয়েছে উনার প্রেসক্রিপসন অনুযায়ী চিকিৎসা চলছে। রোগি পচন্ড পাগলামি করলেও তাকে আর কোন চিকিৎসা দেওয়া কথা ভাবছে না তারা। পরে হাসপাতালের ভেতরে আরো কি আছে কৌতহল বসত দেখতে গিয়ে দেখা যায় ৩ তলার পুরানো ভবনে ২ তলায় একটি রুমে ৩ টি বেড পড়ে আছে ময়লা অবস্থায়, আরেক পাশে ২ টি বেড নিয়ে অপারেশন থিয়েটার। অপারেশন থিয়েটারের ভেতরে গিয়ে আরো হতবাক অপারেশনের জন্য দরকারি তেমন কিছুই নেই। এমন কি অপারেশনের লাইটও ঠিকমত জলে না। মনে হয় দীর্ঘ দিন ব্যবহার নেই। এদিকে আরেক রোগি ভর্তি হতে দেখে জানতে চাইলে জানা যায় রোগিঙ্গা এই রোগি হাসপাতালে ভর্তি ছিল। সেখানে এক জন বলেছে সরকারি হাসপাতালে থাকলে কোন চিকিৎসা হবে না। তাই কম টাকায় ভাল চিকিৎসা পেতে এখানে ভর্তি হয়েছি। এ সময় তার সাথে কথা বলতে চাইলে কৌশলে সরে যায়।
এ সময় কক্স ন্যাশনাল হাসপাতালের দায়িত্বরত নিকাশ নামের এক যুবক বলেন তার দায়িত্ব অপারেশন থিয়েটারের সহকারী তার ডিগ্রি সম্পর্কে জানতে চাইলে অভিজ্ঞতা বলে জানান । তবে সে নিজ কাজে সাথে ব্রাদার আবার সহকারী ম্যানেজারের দায়িত্বও পালন করে। আর ভেতরে গিয়ে দেখা যায় কয়েক জন মহিলা খোশ গল্পে মজে আছে তাদের মধ্যে কে আয়া কে নার্স বুঝা বড় মুসকিল। সবাই নাকি নার্স আবার সবাই আয়া।
এদিকে পার্শবর্তি কয়েক জন ব্যবসায়ি থেকে জানতে চাইলে বলেন আসলে দীর্ঘ দিন ধরে কক্স ন্যাশনাল হাসপাতাল টি সাধারন রোগিদের সাথে প্রতারনা করে আসছে। তারা মুলত বেশ কয়েক জন দালাল রেখেছে যারা সরকারি হাসপাতালে ভর্তি রোগিদের ভুল বুঝিয়ে এখানে ভর্তি করিয়ে দেয়। বিনিময়ে তারা তাদের কমিশন পায়। আর তাদের ভবনের নিচে একজন ডাক্তার বসে উনিও এখানে সহযোগিতা করেন। আর মাঝে মধ্যে ডাঃ মহিউদ্দিন আলমগীরের নাম ব্যবহার করে সেটা কৌশল। আর তাদের নিজস্ব কোন ল্যাব নেই এক্সরে নেই এমন কি রক্তের গ্রুপও পরিক্ষা করতে পারে না তাহলে তারা কিভাবে হাসপাতালের দাবি করে ? এটা সম্পূর্ন প্রতারনা। আর তাদের অনুমদন আছে কিনা সেটা যাচাই করা দরকার। সব ছেয়ে বড় কথা ভেতরে গেলে রোগি সুস্থ হওয়ার বদলে অসুস্থ হয়ে যাবে এরকম ময়লা দূর্গন্ধ। একবার ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান হলে সব কিছু বের হয়ে আসতো।
এ ব্যাপারে কক্স ন্যাশনাল হাসপাতালের ম্যানেজার শাহেদ বলেন আমাদের হাসপাতালে ২০০৮ সালে প্রতিস্টিত। মুলত এখানে গরিব মানুষের চিকিৎসা করা হয়। তবে দালাল দিয়ে কাজ করার কথা অস্বিকার করেন তিনি।
এদিকে ডাঃ মহিউদ্দিন মোঃ আলমগীর বলেন আমি ব্যাক্তিগত ভাবে কাউকে কক্স ন্যাশনাল হাসপাতালে ভর্তি হতে বলিনি। এটা ভুল কথা। তবে কোন গরীব রোগি থাকলে তারাও আমাকে বল্লে আমি দেখে দি। এসময় তিনি এই হাসপাতালের ভুতুড়ে ও বিশৃংখল অবস্থার কথা স্বীকার করেন।
কক্স ন্যাশনাল হাসপাতালের বেহাল দশা
