নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি : নারায়ণগঞ্জের রুপগঞ্জ উপজেলার পূর্বাচল উপশহরের একটিন খালে অভিযান চালিয়ে পুলিশ ৬২টি এসএমজি, দুইটি দূরবীন, দুটি রকেট লঞ্চার, পাঁচটি পিস্তল, ৪৯টি শেল, দুইটি ওয়াকিটকি, ৪২টি হ্যান্ড গ্রেনেড, বিভিন্ন ধরনের ডিভাইস, টাইম ফিউজসহ বিপুল পরিমাণ গোলা-বারুদ উদ্ধার করেছে। পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (গোপনীয় শাখা) মো. মনিরুজ্জামান শুক্রবার বিকেলে এসব উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। বৃহস্পতিবার রাত দেড়টায় শুরু হওয়া এ অভিযান সন্ধা পর্যন্ত চলে। তবে অভিযান পুরোপুরি শেষ হয়নি বলে জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) ফারুক হোসেন।
নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফারুক হোসেন এ অভিযানের নেতৃত্ব দেন। তিনি জানান, গুতিয়াব এলাকার একটি বাড়ির পাশের খালে বেশ কিছু অস্ত্র লুকানো আছে বলে আমরা খবর পাই। বৃহস্পতিবার রাতে ফায়ার ব্রিগেডসহ গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল সেখানে পানির নিচে অনুসন্ধান শুরু করে। ফলে একে একে পানির নিচ থেকে এসব উদ্ধার হয়। এসব অস্ত্র পানির নিচে বিশেষ ধরনের প্যাকে মোড়া ছিলো। যে ধরনের প্যাকে এগুলি মোড়া ছিলো সেসব প্যাক সাধারনত বিদেশ থেকে পণ্য আনার সময় ব্যাবহার করা হয়। প্রতিটি এসএমজি ক্রিকেট ব্যাট রাখার বিশেষ ব্যাগের মতো বড় ব্যাগে রাখা ছিলো। প্রতিটি অস্ত্রের গুলি অস্ত্রের সাথে আলাদা প্যাকে ছিলো।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফারুক হোসেন আরো জানান, গত মঙ্গলবার ২৯ মে রাতে উপজেলার দাউদপুর ইউনিয়নের বাগলা এলাকার মোসলেম উদ্দিনের ছেলে শরিফ মিয়ার বাড়িতে পুলিশ অভিযান চালায়। শরিফ মিয়া মাদক ব্যবসায়ী। মূলতঃ মাদকের সন্ধানে পুলিশ এ অভিযান চালায়। এ বাসা থেকে পুলিশ মাটি খুঁড়ে একটি এলএমজি উদ্ধার করে। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে ওইদিন শরিফ মিয়া পালিয়ে যায়। পরদিন নারায়ণগঞ্জের জালকুড়ি থেকে শরিফ মিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার স্বিকারোক্তি অনুযায়ী আটক করা হয় আরো দুইজনকে। পুলিশ আটক করা এই দুইজনের পরিচয় প্রকাশ করেনি। তারাই ঐ খালে অস্ত্র রয়েছে বলে জানায়।
অভিযানের খবর পেয়ে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক ঘটনাস্থলে আসেন। এ সময় স্থানীয় সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজী বীর প্রতীক, জেলা পুলিশ সুপার মঈনুল হক, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক উদ্ধারস্থলে জানান, কোনো অপরাধী চক্র বাংলাদেশকে নিয়ে অনেক ধরনের ষড়যন্ত্র করছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সফলতা ও উন্নয়ন এবং জনগণের জননিরাপত্তা নিয়ে একের পর এক ষড়যন্ত্র হচ্ছে। এটাও ষড়যন্ত্রের অংশ হতে পারে। তাদের ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করার জন্য কোনো অপরাধী চক্র এগুলো ব্যবহার করত। তিনি বলেন, তারা গত আড়াই-তিন মাস আগে এগুলো এখানে রেখেছিল। নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের গোয়েন্দাদের তৎপরতার কারণে এটা উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। যেহেতু এক ব্যক্তির স্বীকারোক্তি অনুযায়ী অস্ত্রগুলোর সন্ধান মিলেছে, আমরা আশা করছি এর পেছনের সূত্র পাব। সেটা তদন্তে বেরিয়ে আসবে। বড় ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা থাকতে পারে। তদন্ত শুরু হয়েছে ও জিজ্ঞাসাবাদ শেষে অপরাধী চক্রটিকে আটক করা হবে। তবে তিনি তার বক্তব্যে এ অস্ত্রের সাথে জঙ্গীদের সম্পৃক্ততা আছে কিনা সে ব্যাপারে কিছু বলেননি।
গত ২৭ মে জেলা পুলিশের আইন শৃঙ্খলা বিষয়ক এক সভায় পুলিশ সুপার জানিয়েছিলেন, নারায়ণগঞ্জ ও আশেপাশের এলাকায় জঙ্গী আস্তানা থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (গোপনীয় শাখা) মো. মনিরুজ্জামান উত্তরার জিয়াবাড়িতে যে ধরনের অস্ত্র পাওয়া গেছে, যেভাবে ব্যাগের ভিতরে যে অবস্থায় অস্ত্র রাখা ছিলো, আজকে উদ্ধার হওয়া অস্ত্র একই ভাবে ব্যাগের ভিতরে রাখা ছিলো। অস্ত্রগুলিও একই ধরনের। তাই আমার ধারনা একই গ্রুপ এ অস্ত্রগুলি রেখেছিলো। কিন্তু কারা, কেন এ অস্ত্র রেখেছিলো তা তদন্ত করে বলা যাবে।