আসাদুল হক পলাশ. প্রতিনিধি নরসিংদী:
রায়পুরার দুর্গম চরাঞ্চলের বাঁশগাড়ী ইউনিয়নের বাঁশগাড়ী গ্রামে আওয়ামী লীগের দুই লাঠিয়াল বাহিনীর মধ্যে বন্দুক ও টেটাযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে। সংঘর্ষ চলাকালে প্রতিপক্ষের গুলিতে শারফিন (১৮) নামে একজন নিহত এবং অন্তত: অর্ধশতাধিক লোক আহত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। একই ঘটনায় ভাংচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ হয়েছে কমমেশী ২০/২৫টি বাড়ীতে। আহতদের মধ্যে কাউছার (৩০), নূর মোহাম্মদ (২২), রহিম বাদশা (২২), নাহিদ (২৬), ইসমাইল (৩০) ও মাসুদ (২৯) নামে ৬ জনকে নরসিংদী সদর ও জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অন্যান্যরা বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসা নিচ্ছে বলে জানা গেছে।
এলাকা রনক্ষেত্রে পরিনত হয়েছে। দুই পক্ষের গোলাগুলি ও টেটাযুদ্ধের কারণে পুলিশ পর্যন্ত ঘটনাস্থলে যেতে পারেনি। অবস্থা বেগতিক দেখে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের জন্য রায়পুরা উপজেলা প্রশাসন সেখানে ১৪৪ ধারা জারী করে মাইকযোগে প্রচার করছে।
ঘটনার সংক্ষিপ্ত বিবরণ থেকে জানা গেছে, বিগত ইউপি নির্বাচনের সময় বাঁশগাড়ী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী ছিলেন বাশগাড়ী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হাফিজুর রহমান সাহেদ সরকার। কিন্তু বিগত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সাহেদ সরকার দলীয় প্রার্থী মিজানুর রহমান চৌধুরীর বিরুদ্ধে নির্বাচন করায় রায়পুরার এমপি সাবেক মন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু তার উপর ক্ষিপ্ত হয়। দলীয় শৃংখলা ভঙ্গের কারণে তিনি সেখানে মনোনয়ন দেন বিএনপি নেতা সিরাজুল হক সরকারকে। তিনি আওয়ামী লীগে যোগদান করার পর তাকে মনোনয়ন দেয়া হয়।
এ ঘটনা নিয়ে সেখানে আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতাকর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়। এই অবস্থায় আওয়ামী লীগ সভাপতি সাহেদ সরকার ঢাকায় গিয়ে কেন্দ্রীয় নেত্রীত্বের সাথে যোগাযোগ করে সেখান থেকে দলীয় মনোনয়ন তথা নৌকা প্রতীক নিয়ে এলাকায় নির্বাচনী প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হন। কিন্তু এমপি রাজু ও তার লোকজন নৌকা প্রতীকের বিরোধীতা করে সিরাজুল হক সরকারের পক্ষে প্রত্যক্ষভাবে নির্বাচন করায় সাহেদ সরকার নির্বাচনে পরাজিত হন। নির্বাচনের পরে তিনি কয়েকজন সাংবাদিকের নিকট এই অভিযোগ পেশ করেন। এরপর থেকে শুরু হয় এলাকায় দাঙ্গা হাঙ্গামা।
সিরাজুল হকের লাঠিয়াল বাহিনী ও সাহেদ সরকারের লাঠিয়াল বাহিনীর মধ্যে কয়েক দফা সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়। এতে ২ ব্যক্তি নিহত হয় আহত হয় অর্ধশত মানুষ। এই সংঘর্ষের পর সিরাজুল হকের সমর্থকদের হামলার মুখে সাহেদ সরকারের ২/৩ শত সমর্থক এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। দীর্ঘ প্রায় ১ বছর যাবৎ তারা নরসিংদী শহর, শহর এলাকা ও চরাঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করতে থাকে।
গত কয়েকদিন যাবৎ সাহেদ সরকার ও তার সমর্থকরা এলাকায় নিজেদের বাড়ী ঘরে উঠার জন্য প্রস্তুতি নিলে খবর পেয়ে সিরাজুল হকের সমর্থকরা এলাকায় ব্যাপকভাবে বোমাবাজি করতে থাকে।সিরাজের সমর্থকরা নদীর পাড়ে পাড়ে, রাস্তার মোড়ে মোড়ে দল বেধে পাহাড়া দিতে থাকে এবং ফাঁকা গুলি এবং ককটেল বিস্ফোরন ঘটিয়ে এলাকায় ব্যাপক আতংকের সৃষ্টি করে। এরই মধ্যে গত মঙ্গলবার তারা নিলক্ষা, চরমধুয়া, নবীনগর এবং বাঞ্ছারামপুর এলাকা থেকে ভাড়াটে লাঠিয়াল ও আগ্নেয়াস্ত্রধারী লোকজন নিয়ে চরমধুয়া জোড়বিলসহ বিভিন্ন এলাকা দিয়ে বাঁশগাড়ীতে উঠার প্রস্তুতি নেয়।
এ খবর জানাজানি হবার পর বুধবার সকালে রায়পুরা থানা পুলিশ এলাকায় দাঙ্গা পুলিশ নিয়োগ করে। কিন্তু ইতমধ্যেই সাহেদ সরকারের সমর্থকরা চারদিক থেকে হামলা চালিয়ে ব্যাপকভাবে গুলি বর্ষণ ও ককটেল নিক্ষেপ করতে থাকে। এ অবস্থায় সিরাজুল হকের সমর্থকরাও পাল্টা হামলা চালিয়ে গুলি বর্ষণ ও ককটেল বিস্ফোরন ঘটাতে শুরু করে।
এই অবস্থায় পুলিশ প্রাণহানী এড়াবার জন্যে তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে যেতে পারেনি। পরে এখবর নরসিংদীতে পৌছলে রায়পুরা উপজেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার (ভূমি) হুমায়ুন কবিরের নেতৃত্বে একটি মোবাইল কোর্ট ঘটনাস্থলে গিয়ে ১৪৪ ধারা জারী করে। এরিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে পারেনি। বিভিন্ন স্থানে বিক্ষিপ্তভাবে সংঘর্ষ অব্যাহত রয়েছে।
রায়পুরা থানার ডিউটি অফিসার এসআই শহিদুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে সাংবাদিকদেরকে বলেন, এ পর্যন্ত ১ জন নিহত ও ৩০ জন আহত হবার খবর পাওয়া গেছে। রায়পুরা সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার ও রায়পুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নেতৃত্বে সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রনে আনতে শতাধিক পুলিশ দাঙ্গা নিয়ন্ত্রনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
#