রাষ্ট্রায়াত্ত কোম্পানির শেয়ার ছাড়তে অর্থমন্ত্রীর উদ্যোগ

একাত্তরলাইভডেস্ক: পুঁজিবাজার স্থিতিশীল রাখতে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানিগুলোর শেয়ার বাজারে ছাড়ার সব উদ্যোগ ব্যর্থ হওয়ার পর এবার অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত নিজেই এ বিষয়ে উদ্যোগ নিচ্ছেন। তার আগে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন। এ বিষয়ে তিনি আগামী বছর মার্চে বড় পরিসরে একটি বৈঠক ডাকবেন বলে জানা গেছে। সূত্র জানায়, বিনিয়োগকারীদের সুবিধার্থে শেয়ারবাজারে রাষ্ট্রীয় মালিকনাধীন কোম্পানিগুলোর শেয়ার বাজারে ছাড়তে বেশ কয়েকবার নির্দেশনাসহ সময়সীমাও বেঁধে দেওয়া হয়। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলা নানা কারণ দেখিয়ে বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে শেয়ার বাজারে ছাড়তে ব্যর্থ হয়।  এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে অর্থমন্ত্রী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এবার তিনি নিজেই এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করবেন।  এরই পরিপ্রেক্ষিতে অর্থমন্ত্রী আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি বা মার্চ মাসে এ বিষয়ে একটি বৈঠক আহ্বান করার নির্দেশ দিয়েছেন। এই বৈঠকে  দেখা হবে কী কারণে বারবার তাগিদ দেয়া সত্ত্বেও সরকারি কোম্পানিগুলোর শেয়ার পুঁজিবাজারে ছাড়া সম্ভব হচ্ছে না। এর পেছনে কারা দায়ী তাও সভায় চিহ্নিত করা হবে। একই সঙ্গে সরকারি কোম্পানিগুলোর শেয়ার বাজারে ছাড়ার জন্য একটি চূড়ান্ত সময়সীমাও বেঁধে দেয়া হবে। সূত্র জানায়, পুঁজিবাজারে সরকারি কোম্পানিগুলোর শেয়ার ছাড়ার বিষয়ে কোনো অগ্রগতি নেই। দফায় দফায় বৈঠক হয়েছে, অসংখ্যবার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে; কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এসব কোম্পানির বেশির ভাগই তাদের শেয়ার পুঁজিবাজারে ছাড়েনি। এ ক্ষেত্রে যুক্তি দেখানো হয়েছে, কোম্পানি লোকসানে আছে, নতুবা সম্পদের মূল্যায়ন বা পুনর্মূল্যায়ন করা সম্ভব হয়নি। আবার কখনো বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ শেয়ার ছাড়ার বিষয়ে অনুমোদন দেয়নি বা এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি।অর্থমন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, পুঁজিবাজারে ভালো সিকিউরিটিজের সরবরাহ বাড়ানোর উদ্দেশ্যে বিভিন্ন বিভাগ ও মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ সরকারি মালিকানাধীন কোম্পানিগুলোর শেয়ার অফলোড সংক্রান্ত কার্যক্রম বাস্তবায়নের অগ্রগতি পর্যালোচনার জন্য গত সেপ্টেম্বর মাসে ব্যাংকিং বিভাগের সচিবের সভাপতিত্বে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এই সভার কার্যবিবরণী অর্থমন্ত্রীর কাছে গত মাসে পাঠনো হয়। এতে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘এই বিষয় নিয়ে আগামী বছর ফেব্রুয়ারি-মার্চে আমি একটি বৈঠক করতে চাই। সেই উদ্দেশ্যে যেসব কোম্পানির শেয়ার ছাড়ার কথা (যেগুলো স্থগিত রাখা হয়েছে তা ছাড়া) তাদের সম্পর্কে প্রত্যেকের কী কার্যক্রম সে ব্যাপারে প্রতিবেদন পাঠাতে বলুন। এই প্রতিবেদন ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে পাঠাতে বলতে হবে। ’সূত্র জানায়, বছরের পর বছর ধরে রাষ্ট্রায়ত্ব কোম্পানিগুলোর শেয়ার বাজারে ছাড়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। এর মধ্যে অনেক কোম্পানির শেয়ার বাজারে এসেছে। অনেকগুলোর শেয়ার আবার বাজারে ছাড়া সম্ভব হচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিতে কর্মরত এক শ্রেণীর আমলার ইচ্ছের অভাবকে দায়ী করা যায়। এই বিষয় এখন অর্থমন্ত্রী নিজে তত্ত্বাবধান করবেন বলে আমাদের মনে হচ্ছে। তাই তিনি নিজে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি বা মার্চে একটি বৈঠক আহ্বান করতে বলেছেন, যাতে একটি সুনির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেয়া হবে, ওই সময়ের মধ্যে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোর শেয়ার বাজারে ছাড়তে হবে।এর আগে চলতি বছরের ৯ মে ব্যাংকিং বিভাগের সচিবের নেতৃত্বে এই বিষয় নিয়ে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেখানে নির্দেশ দেয়া হয় সরকারি মালিকানাধীন সব কোম্পানিকে তাদের সম্পদের পুনর্মূল্যায়ন করতে হবে। এ সম্পর্কিত একটি প্রস্তাব নিজ নিজ কোম্পানিগুলোকে ৩০ জুনের মধ্যে তাদের পরিচালনা পর্ষদে উত্থাপন করতে বলা হয়।সম্পদ পুনর্মূল্যায়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ও ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) সার্বক্ষণিক সহযোগিতা  করবে বলেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।  কিন্তু এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি।সূত্র জানায়, ওই বৈঠকে জানতে চাওয়া হয়, কয়েকবার সময় বেঁধে দেয়ার পরও কেন সরকারি কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে তাদের শেয়ার অফলোড করছে না বা করতে পারছে না। এ বিষয়ে আইসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বৈঠকে অবহিত করেন, পুঁজিবাজারে সরাসরি (ডিরেক্টট লিস্টিং) তালিকাভুক্তি হলে বিক্রিত শেয়ারের অর্থ কোম্পানির তহবিলে না এসে সরাসরি কোষাগারে জমা হয়, ফলে কোম্পানিগুলো এ পদ্ধতি পুঁজিবাজারে আসতে চায় না। অপর দিকে সরকারি বেশির ভাগ কোম্পানিই লোকসানি প্রতিষ্ঠান হওয়ার কারণে আইপিওর মাধ্যমেও পুঁজিবাজারে আসতে পারে না। তবে এরপরও এলপিজিএল, জালালাবাদ গ্যাস ফিল্ড কোম্পানি এবং অ্যাসেনশিয়াল ড্রাগ কোম্পানি লিমিটেড এই মুহূর্তে পুঁজিবাজারে আসতে পারে।বৈঠকে সিদ্ধান্ত  হয়, চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে এলপিজিএল (লিকুইফাইড পেট্রোলিয়াম গ্যাস লিমিটেড) তাদের ২৫ শতাংশ শেয়ার অফলোড করবে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য জ্বালনি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়কে অনুরোধও করা হয়।বৈঠকে ডেসকোর শেয়ার অফলোড বিষয়ে আলোচনা হয়। এ সময় বিদ্যুৎ বিভাগের প্রতিনিধি বলেন, ডেসকোর আরো ১০ শতাংশ শেয়ার অফলোডের সব কার্যক্রম সম্পন্ন্ হয়েছে। ডেসকো ইচ্ছে করলে যেকোনো সময় এই শেয়ার অফলোড করতে পারে। এর ফলে সভায় সিদ্ধান্ত হয়, জুনের (২০১৬) ৩০ তারিখের মধ্যে ডেসকোকে আরো ১০ শতাংশ শেয়ার অফলোড করতে হবে। বর্তমানে ডেসকোর ২৫ শতাংশ শেয়ার পুঁজিবাজারে রয়েছে।সরকারি মোবাইল ফোন কোম্পানি টেলিটকের বিষয়ে সভায় জানানো হয়, ২০১২-২০১৩ অর্থবছরে মুনাফা করলেও ২০১৩-২০১৪ এবং ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে কোম্পানিটি লোকসান করেছে। এ কারণে ওই কোম্পানির শেয়ার অফলোড কার্যক্রম সংশ্লিষ্ট পর্ষদ স্থগিত করেছে। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, টেলিটক কোম্পানি লোকসান করলেও আইপিওর মাধ্যমে শেয়ার অফলোড করা যায়। এ অবস্থায় আইসিবিকে ইস্যু ম্যানেজার হিসেবে নিয়োগ করে শেয়ার অফলোড করতে হবে। একইভাবে বিটিসিএলকেও আইসিবিকে ইস্যু ম্যানেজার নিযুক্ত করে আইপিওর মাধ্যমে শেয়ার ছাড়ার নির্দেশ দেয়া হয়।বৈঠকে অ্যাসেনশিয়ার ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেডের শেয়ার ছাড়ার বিষয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে উপস্থিত কোম্পানিটির প্রতিনিধি জানান, শেয়ার অফলোড পর্যালোচনার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সুপারিশের আলোকে ডিরেক্ট লিস্টিংয়ের মাধ্যমে এ কোম্পানির শেয়ার অফলোড কার্যক্রম বোর্ড স্থগিত করে এবং এ বিষয়ে আরো পর্যালোচনার সুপারিশ করে। কিন্তু এরপর চার মাস অতিবাহিত হলেও প্রায় কোনো সিদ্ধান্তই বাস্তবায়ন হয়নি।