মাহাবুবুর রহমান,কক্সবাজার
বালির বদলে পাহাড়ের মাটি, কংকরের বদলে নিম্নমানের ভাঙ্গা ইট, গর্তগুলো ভালভাবে ভরাট না করা, নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহারসহ বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মধ্য দিয়ে চলছে বহু কাঙ্খিত রামু থেকে মরিচ্যা যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম রামু-মরিচ্যা সড়কের সংস্কার কাজ।
জানা যায়, গত বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ী ঢল ও ভারী যানবাহন চলাচলের ফলে বর্তমানে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়া রামু-মরিচ্যা সড়ক সংস্কারের জন্য সরকার প্রায় ১২ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়। আর উক্ত সংস্কার কাজ করার দায়িত্ব পায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান তাহের ব্রাদার্স। কিন্তু তাহের ব্রাদার্স উক্ত কাজটি নিজে না করে সাব-ঠিকাদার হিসাবে অন্য একজন ঠিকাদারকে দিয়ে দেন। আর উক্ত প্রকল্পে সেকশন অফিসার হিসাবে দায়িত্বে রয়েছেন কক্সবাজার সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী পলাশ চাকমা।
নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার ও দায়সারাভাবে কাজ করে প্রকল্পের টাকা লুটপাট করার অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদার ও উপ-সহকারী প্রকৌশলী পলাশ চাকমার বিরুদ্ধে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ অনিয়ম, দুর্নীতি ও নিন্মমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করার ফলে সংস্কার করা গর্ত একদিন পার হতে না হতেই পুনরায় গর্তের সৃষ্টি হচ্ছে।
সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে, রামু চৌমুহনী থেকে কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের মরিচ্যা চেকপোস্ট মোড় পর্যন্ত প্রায় ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সড়কের কালুর দোকান, বড়ডেবা, দারিয়ারদীঘি, কমিউনিটি ক্লিনিক, ধেছুয়াপালং উচ্চ বিদ্যালয়সহ যেখানে কাজ চলছে সেখানে সড়কের বিভিন্ন অংশে শত শত গর্ত কোন প্রকার সংস্কার ছাড়াই তার উপর নিম্নমানের ভাঙ্গা ইট বসিয়ে দেয়া হয়েছে। যার কারণে যানবাহন চলাচলের সময় উক্ত ভাঙ্গা ইটগুলো উঠে গিয়ে পুনরায় গর্ত সৃষ্টি হচ্ছে। বড় বড় গর্তগুলোতে নিচে পাহাড়ের মাটি দিয়ে উপরে নিম্নমানের ইট বসিয়ে দিয়ে চালিয়ে যাচ্ছে সংস্কার কাজ।
খুনিয়াপালং ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদের জানান,এ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন শত শত যানবাহন চলাচল করে থাকে। তাদের যাথায়াতের জন্য এ সড়কটি ছাড়া আর কোন মাধ্যম নেই। কিন্তু বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ী ঢল এবং ভারী যানবাহন চলাচল করায় সড়কের বেহাল দশার সৃষ্টি হয়েছিল। তারই ফলশ্রুতিতে কাঙ্কিত উক্ত সড়কের সংস্কার কাজের জন্য সরকার প্রায় ১২ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়। কিন্তু যেভাবে কাজ হচ্ছে সেভাবে চললে আগামী বর্ষা মৌসুমের আগেই সড়কটি পুনরায় চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়বে। আর তাতেই ভোগান্তির মুখে পড়বে এ সড়ক দিয়ে যাতায়াত করা লাখো মানুষ।
স্থানীয় হামিদুল হক জানান, সড়কটিতে সংস্কার কাজে চরম অনিয়ম-দুর্নীতি হচ্ছে। ব্যবহার করা হচ্ছে নিম্নমানের ইট, বালি ও পাহাড়ের মাটি। গর্তগুলোও ভালভাবে সংস্কার করা হচ্ছে না।
এ ব্যাপারে স্থানীয় খুনিয়াপালং ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আবু তাহের বলেন, এত বড় একটা প্রকল্পে এরকম নিম্নমানের কাজ আমি আগে দেখিনি। এভাবে লুটপাট করার কারণে সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ডে ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে। তাই আমি এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে সাংসদ সাইমুম সরওয়ার কমলসহ সরকারের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষন করছি।
এ ব্যাপারে খুনিয়াপালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল মাবুদ বলেন, লোকজন অহরহ অভিযোগ জানাচ্ছে। আমিও দেখেছি সংস্কার কাজ প্রধান সড়কের পাশে ভালভাবে করলেও যেখানে লোকসমাগম কম সেখানে দায়সারা ভাবে চালিয়ে যাচ্ছে। তাই আমি ঠিকাদার ও উক্ত সড়কটির সংস্কারের দায়িত্বে থাকা সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে আহ্বান জানাচ্ছি, বিপুল জনসাধারণের যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম এ সড়কটির কাজ যেন সুষ্টভাবে সম্পন্ন করেন। কারণ সড়ক সংস্কারে কোন প্রকার অনিয়ম দুর্নীতি হলে জনগণ তা মেনে নেবে না।
রামু-মরিচ্যা সড়কে নিম্নমানের বালি, ভাঙ্গা ইট ও পাহাড়ের মাটি ব্যবহারের ব্যাপারে সড়কের সংস্কার কাজে দায়িত্বে থাকা সুপারভাইজার তাজুল ইসলামকে অনিয়মের বিভিন্ন অংশ দেখালে তিনি বলেন, এগুলো আমাদের কাজ ছিল না কিন্তু তারপরও আমরা করে দিচ্ছি। তাকে সড়কে সংস্কার কাজে ব্যবহৃত পাহাড়ের মাটিগুলো দেখালে তিনি বলেন, আসলে এগুলো মাটি নয়, দেখতে মাটির মতো। এগুলো ড্রেনেজ বালি। উক্ত বালি ব্যবহার করার নিয়ম আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি কোন উত্তর না দিয়ে উপ-সহকারী প্রকৌশলী পলাশ চাকমার সাথে যোগাযোগ করতে বলেন। তিনি আরও বলেন, স্যার (উপ-সহকারী প্রকৌশলী পলাশ চাকমা) যেভাবে বলেছেন আমরা সেভাবে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।
সড়কের বিভিন্ন অংশে এরকম অনিয়মের ব্যাপারে সাইড ইঞ্জিনিয়ার নাহিদকে ফোন করা হলে তিনিও একই উত্তর দেন। তিনি বলেন, এসব ব্যাপারে আমি কিছু জানি না। স্যার (উপ-সহকারী প্রকৌশলী পলাশ চাকমা) যেভাবে বলেছেন আমরা সেভাবে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। আপনার কিছু জানা থাকলে স্যারের কাছে জানতে পারেন।
প্রকল্পের ব্যাপারে উপ-সহকারী প্রকৌশলী পলাশ চাকমাকে কয়েক বার অফিসে গিয়ে পাওয়া না গিয়ে ফোনে জানতে চাইলে তিনি কোন তথ্য বা কথা বলতে রাজি হয়নি। বরং ব্যাক্তিগত ভাবে যোগোযোগ করতে বলেন।
সচেতন মহলের দাবী, সড়কটি সংস্কারে এরকম অনিয়ম চলতে থাকলে ভুক্তভোগীদের দুর্দশা লাঘব হবে না। তাই সংশ্লিষ্ট উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন তারা। আর উক্ত প্রকল্প থেকে দুর্নীতিবাজ কক্সবাজার সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী পলাশ চাকমারও অপসারণ চান তারা।
এ ব্যপারে কক্সবাজার সওজ এর নির্বাহী প্রকৌশরী পিন্টু চাকমা বলেন,বিষয়টি আমি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।