রাজশাহীতে কালবৈশাখী ঝড়ে মৃতের সংখ্যা ৪

অনলাইন ডেস্ক: রাজশাহীতে কালবৈশাখী ঝড়ের কবলে পড়ে চারজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। যাদের মধ্যে রাজশাহী নগরের দুইজন, চারঘাটের একজন এবং গোদাগাড়ীর একজন বলে পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঝড়ের সময় একজন নিহত ও পদ্মা নদীতে নৌকা ডুবে তিনজন নিখোঁজের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

সোমবার দুপুর পর্যন্ত পদ্মায় নিখোঁজ কারও খোঁজ পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক কাজী আশরাফ উদ্দীন।

নিহতরা হলেন, রাজশাহী নগরের বোয়ালিয়া থানার সপুরা এলাকার আজিজুল ইসলামের ছেলে ফরিদুল ইসলাম(৪৮), মতিহার থানার বেলঘরিয়া এলাকার হারুন অর রশিদের ছেলে মুনছুর রহমান (৪০), চারঘাট উপজেলার বেলঘরিয়া শ্যামপুর গ্রামের আনসার আলীর স্ত্রী আছিয়া বেগম (৪৫) ও গোদাগাড়ী উপজেলার কাকনহাট পৌরসভার কলাবাগান এলাকার আলম আলী মুন্সি (৫০)।

এদের মধ্যে তিনজন রাজশাহী মেডিকলে কলেজ হাসপাতালে মারা যান। ঝড়ের সময় আহত হয়ে তাদের মৃত্যু হয় বলে হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির খাতায় উল্লেখ্য করা হয়েছে।

রাজশাহী মেডিকলে কলেজ হাসপাতাল ফাঁড়ি ও ওয়ার্ড মাস্টার দপ্তর সূত্র জানায়, ঝড়ের সময় গাছের ডাল পড়ে আছিয়া বেগম আহত হন। হাসপাতালে নেয়ার পর তার মৃত্যু হয়। অপরদিকে ঝড়ের সময় দৌড়ে বাড়ি ফেরার সময় রাস্তার উপর পড়ে গিয়ে আহত হন মুনছুর রহমান। হাসপাতালে নেয়ার পর জরুরী বিভাগের চিকিৎসকরা তাকে মৃতু ঘোষণা করেন।

অন্যদিকে, ঝড়ের সময় বজ্রপাত ঘটলে অসুস্থ্য হয়ে পড়েন ফরিদুল ইসলাম। পরে হাসপাতালে ভর্তি করা হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ১টা ১০ মিনিটে তার মৃত্যু হয় বলে জানা গেছে।

এদিকে, গোদাগাড়ী থানার ওসি হিফজুল আলম মন্সি বলেন, কালবৈশাখী ঝড়ের সময় গাছে ডাল ভেঙে পড়ে আহত হন গোদাগাড়ী উপজেলার কাকনহাট পৌরসভার কলাবাগান এলাকার আলম আলী মুন্সি। পরে তাকে স্থানীয় স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নেয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এদিকে, কালবৈশাখীর কবলে পড়ে পদ্মা নদীতে নৌকা ডুবিতে নিখোঁজ চার জনের সন্ধ্যান পাওয়া যায়নি। খোঁজ মেলেনি উল্টে যাওয়া নৌকাও। দুপুর ২টি পর্যন্ত দমকল কর্মীরা পদ্মা তল্লাশী চালায়।

রাজশাহী ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার ফরহাদ হোসেন বলেন, কোন স্থানে নৌকাটি ডুবে গেছে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এ কারণে খোঁজে পাওয়া সমস্যা হচ্ছে। তবে নৌকা ডুবে যাওয়ার পর দুইজন সাঁতার কেড়ে পাড়ে উছিল তারা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। তাদের একজনকে নিয়ে গিয়ে নৌকা ডুবে যাওয়ার স্থান চিহ্নত করার চেষ্টা করা হয়েছে। তবে সে কেন স্থানে নৌকা ডুবেছে তা নিশ্চিত করতে পারেনি। কারণ নৌকা ছাড়ার পর ঝড়ে তার বেশকিছুর চলে গিয়ে উল্টে যায়। সে সময় অন্ধকার ছিল। পানিতে ডুবে রফিক, রবিন ও আসাদুল নামের তিনজন নিখোঁজ হওয়ার কথা জানিয়েছেন ওই নৌকায় থাকা অন্যরা বলে জানান তিনি।

রাজশাহী জেলা প্রশাসক কাজি আশরাফ উদ্দীন বলেন, কালবৈশাখীতে রাজশাহীতে কি পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা এখনো জানা যায়নি। তবে ক্ষতির পরিমাণ নিরুপন করতে উপজেলা প্রশাসন কাজ করছে। ইতোমধ্যেই জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বেশী ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ শুরু করে হয়েছে। পর্যাপ্ত ত্রাণ মজুদ রয়েছে। পর্যাক্রমে ক্ষতিগ্রস্থ সবাইকে ত্রাণ দেয়া হবে বলে জানান তিনি।

উল্লেখ্য, রোববার সন্ধ্যা ৭টা থেকে প্রায় পৌনে এক ঘন্টা রাজশাহীর ওপর দিয়ে কালবৈশাখী। যার গতিবেগ ছিল ঘন্টায় ৯০ থেকে ৯৫ কিলোমিটার। কালবৈশাখীতে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় রাজশাহী অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকা। কাঁচা বাড়ি-ঘর, গাছ-পালা এবং আম ও ফজলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে বিদ্যুৎ বিছিন্ন পড়ে রাজশাহী অঞ্চল।