নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনা :
খুলনা জেলা বিএনপির সাংগাঠনিক সম্পাদক ও ফুলতলার প্রাক্তন উপজেলা চেয়ারম্যান সরদার আলাউদ্দীন মিঠু ও তার দেহরক্ষী নওশের আলী হত্যাকাণ্ডের মোটিভ উদঘাটনের দাবি করেছে পুলিশ।
মঙ্গলবার দুপুরে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি দিদার আহমেদ এ দাবি করেন।
এ ঘটনায় গ্রেপ্তার অপর বিএনপি নেতা হাসনাত রিজভী মার্শালের ১৬৪ ধারায় জবানবন্দির উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এবং ফুলতলার জামিরা ইউপির প্রাক্তন চেয়ারম্যান, লন্ডন প্রবাসী ড. মামুন রহমান হত্যাকাণ্ড বাস্তবায়নে অর্থের যোগান দেয়।
এর আগে মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় ফুলতলা উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব হাসনাত রিজভী মার্শাল খুলনার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কান্তি দালালের আদালতে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়।
সোমবার সন্ধ্যায় র্যাব সদস্যরা খুলনা জিলা স্কুল এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে। এ নিয়ে জোড়া খুনের মামলায় চারজনকে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে পুলিশ। এর মধ্যে শিমুল হাওলাদার এবং মুশফিকুর রহমান রিফাতও হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ত থাকার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দেয়। তবে অস্ত্র ও গুলিসহ গ্রেপ্তার তাইজুল ইসলাম রনিকে রিমান্ডে নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে হাসনাত রিজভী মার্শাল ফুলতলা উপজেলার দামোদর ভূইয়া পাড়ার মৃত আব্দুল হান্নান ভূইয়ার ছেলে, মুশফিকুর রহমান রিফাত একই উপজেলার দামোদর গ্রামের মৃত জিন্নাহ ভূইয়ার ছেলে, শিমুল হাওলাদার একই গ্রামের মো. মিজানুর রহমানের ছেলে এবং অস্ত্রধারী তাইজুল ইসলাম রনি দামোদর পশ্চিমপাড়ার ওপর আলী মোড়ল ওরফে সুদে মোড়লের ছেলে।
প্রেস ব্রিফিংয়ে ডিআইজি দিদার আহমেদ জানান, হাসনাত রিজভী মার্শাল জবানবন্দিতে স্বীকার করেছে, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ড. মামুন রহমান এবং জেলা বিএনপির সাংগাঠনিক সম্পাদক সরদার আলাউদ্দীন মিঠু আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খুলনা-৫ (ফুলতলা-ডুমুরিয়া) আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিল। কিন্তু মিঠু থাকলে মামুন রহমান মনোনয়ন না পাওয়ার আশংকা থেকেই তাকে হত্যার পরিকল্পনা করে। সে মোতাবেক মার্শালের মাধ্যমে তিনি ৩০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেন। যা ২০ লাখ এবং ১০ লাখ করে দুই কিস্তিতে পরিশোধ করা হয়।
আর মার্শাল চরমপন্থী সংগঠন পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টির (এমএল-জনযুদ্ধ) প্রধান শিমুল ভূইয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করে কিলার ভাড়া করে। চুক্তি অনুযায়ী মার্শাল ৩০ লাখ টাকা নিয়ে ২০ লাখ টাকা শিমুলেরর হাতে দেন। বাকি ১০ লাখ টাকা অন্যান্য কাজে খরচের জন্য রেখে দেন। ২৫ মে শিমুলের নেতৃত্বেই মিঠু ও তার দেহরক্ষী নওশের গাজীকে হত্যা করা হয়।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে রেঞ্জ ডিআইজি বলেন, পূর্ব শত্রুতা, অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও পারিবারিক কারণেই চরমপন্থীদের দিয়ে মিঠুকে হত্যা করা হয়েছে। এ পর্যন্ত চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আরও চারজনকে গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এর সঙ্গে স্থানীয় উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা আকরাম হোসেনসহ অন্য কেউ জড়িত আছে-কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
তিনি জানান, পুলিশের ওপর কোনো রাজনৈতিক চাপ নেই। যার বিরুদ্ধেই ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগ পাওয়া যাবে- তাকেই গ্রেপ্তার করা হবে। তবে মামলার তদন্তের স্বার্থে সব তথ্য এ মুহূর্তে প্রকাশ করা সম্ভব হচ্ছে না বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
প্রেসব্রিফিংয়ে র্যাব-৬ খুলনার পরিচালক খোন্দকার রফিকুল ইসলাম, অতিরিক্ত ডিআইজি মো. হাবিবুর রহমান ও একরামুল হক, ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার এসএম শফিউল্লাহসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ঘনিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ড. মামুন রহমান বর্তমানে লন্ডনে অবস্থান করছেন। তিনি গত সপ্তাহ খানেক আগে খুলনা ত্যাগ করেন। ফলে তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
উল্লেখ্য, ২৫ মে রাতে দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে ফুলতলার দামোদরে নিজ অফিসে বৈঠক করছিলেন বিএনপি নেতা মিঠু। এ সময় কালো জ্যাকেট পরে অস্ত্রধারীরা সেখানে প্রবেশ করে মিঠুর মাথায় গুলি করে। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। এ সময় মিঠুর দেহরক্ষী নওশের আলী অফিসের শাটার বন্ধ করার চেষ্টা করলে তাকেও গুলি করা হয়। পরে তাকে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে তার মৃত্যু হয়।