বিজয়ের মাসে স্বাধীনতা বিরুধী চক্রের ষড়যন্ত্রে শিকার:বীর মুক্তিযোদ্বা হাফিজ মুন্সী

বিশেষ রিপোট:আজ ১৬ ডিসেম্বর, মহান বিজয় দিবস। বাংলাদেশের ইতিহাসের শ্রেষ্ঠতম গৌরব ও অহঙ্কারের দিন। পৃথিবীর মানচিত্রে এ জাতির বীরত্বের আত্মপ্রকাশের আজ ৪৫তম বার্ষিকী। ১৯৭১ সালের এ দিনে বিশ্বের মানচিত্রে জন্ম হয় স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের। হানাদার পাকিস্তানি সেনারা যে অস্ত্র দিয়ে নির্বিচারে গুলি চালিয়েছে এ জাতির বুকে, হাতের সেই অস্ত্র পায়ের কাছে নামিয়ে রেখে একাত্তর সালের এ দিনে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের সামনে। আজ তাই রক্তনদী পেরিয়ে আসা আনন্দ-বেদনায় মিশ্র বিজয় দিবস। বিজয়ের গৌরবের বাঁধভাঙা আনন্দের দিন। একই সঙ্গে আজ লাখো স্বজন হারানোর শোকে ব্যথাতুর-বিহ্বল হওয়ারও দিন। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী একাত্তর সালের এ দিনে ঢাকার ওই সময়ের রেসকোর্স ময়দানে (এখন সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) আত্মসমর্পণ করে। নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে জাতি স্বাধীনতা সংগ্রামের মাধ্যমে চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করে। সেদিন জাতি নির্ভয়ে গেয়ে উঠেছিল বিজয়ের অবিনাশী গান। সেই থেকে ১৬ ডিসেম্বর এ জাতির অহঙ্কারের বিজয় দিবস। কিন্তু আজ ও থেমে নেই  স্বাধীনতা বিরুধীচক্র, ব্যক্তি স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে  একজন মুক্তিযোদ্বা কে অপ্রচার চালিয়ে ভুয়া মুক্তি যোদ্বা বানানোর একের পর এক অপ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।মুক্তিযোদ্ধা সনদ ‘জাল’ বলে ষড়যন্ত্র করছে একটি কুচক্রি মহল ।কিছুদিন থেকে খুবই তোলপাড় চলছে  গণর্পূতের প্রধান প্রকৌশলী হাফিজ মুন্সীকে নিয়ে।হাফিজমুন্সী নাকি একজন ভুযা মুক্তিযোদ্বা তার বিরুদ্বে পোষ্টারিং বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় ঘৃন্য অপপ্রচার। এর প্রতিবাদে গত ৪ ডিসেম্বর  গণর্পূত অধিদপ্তরের, সর্বস্তরের প্রকৌশলী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা এক বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সভার আয়োজন করে পূর্ত ভবন চত্বরে।    15356932_1010961162366162_675365204_n মুক্তিযোদ্বা দের সম্মানে সরকার যে বয়স সীমা ১বছর বাড়ানো হয়েছে । সেই সুবাধে হাফিজ মুন্সী এখন চাকরী করছেন।যখন হাফিজ মুন্সী কে মুক্তিযোদ্বা কোঠায় গণর্পূতের প্রধান প্রকৌশলী করা হয়। তখন কি সরকারী সংস্থার কর্মকর্তারা তার সনদ যাচাই বাছাই ছাড়াই কি অধিদপ্তরের প্রধান করেছেন ?এমন প্রশ্ন উঠেছে প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে সম্প্রতি এ বিষয়ে মুখ খুলেছেন, বঙ্গবীর ও কাদের বাহিনীর প্রধান বীর উত্তম কাদের সিদ্দিকী। গত১৪ নভেম্বর, ২০১৬  বহুল প্রচারিত জাতীয় একটি পত্রিকার কলামে তিনি উল্লেখ করেছেন,

একটি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী মনগড়া ও ভিত্তিহীন অভিযোগ দিয়ে এই অপপ্রচার চালাচ্ছে বলে দাবি করেছেন তিনি কাদেরিয়া বাহিনীর নির্ভিক সৈনিক হাফিজুর রহমান মুন্সী। জীবনের এই অবস্থায় এসে নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা প্রমাণ করতে হবে তা তিনি কল্পনাও করেননি। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে যারা জীবনবাজি রেখে দেশকে শত্রুমুক্ত করলেন, তাদেরই আজ বলা হচ্ছে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা। তাও আবার স্বাধীনতার স্বপক্ষের সরকার যখন ক্ষমতায়। হাফিজ মুন্সীর মুক্তিযোদ্ধা সনদ জাল যারা দাবি করছে তারা কারা, তাদের প্রকৃত পরিচয় কি, এ নিয়ে প্রশ্ন তুলছে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা। তাদের দাবি, এসব স্বাধীনতা বিরোধী ও পাকিস্তানি প্রেত্মাতারা যতদিন পর্যন্ত বিচারের আওতায় না আসবে ততদিন প্রকৃত দেশপ্রেমিকরা পদে পদে লাঞ্ছিত ও অপমানিত করেছেন, । হাফিজ মুক্তিযুদ্ধের সময় স্কুলের ছাত্র ছিল। সব মুক্তিযোদ্ধাকে আমার চেনার কথা নয়। কিন্তু সে প্রমাণ করেছে মুক্তিযুদ্ধে কাদেরিয়া বাহিনীতে ছিল। ২০১০ সালে সে মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় গেজেটভুক্ত হয়। সঙ্গে সঙ্গে তার প্রতিদ্বন্দ্বীরা তাকে অমুক্তিযোদ্ধা বলে নানা জায়গায় অভিযোগ করে। একপর্যায়ে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অভিযোগ যায় দুদকে। সেখান থেকে একসময় তাকে নির্দোষ ঘোষণা করা হয়। সবকিছু সেখানেই চুকেবুকে যায়। এরপর আবার গত ডিসেম্বরে সে পিডব্লিউটির চিফ ইঞ্জিনিয়ার হলে আবার সেসব অভিযোগ মাথাচাড়া দেয়। চাকরিতে প্রতিপক্ষরা সরকারি ছত্রচ্ছায়ায় আবার তার নামে নানা অভিযোগ তুলতে থাকে। তা নিয়ে এখন ভীষণ তোলপাড়। কিন্তু আমি বুঝতে পারি না, যারা ভুয়া বলে অভিযোগ করেন তারা কতটা আসল। অন্য কোনো ক্ষেত্রে গোপন অভিযোগ নিয়ে তেমন দৌড়াদৌড়ি, ছোটাছুটি না হলেও যেই কোনো মুক্তিযোদ্ধার নামে কিছু বলা হয় অমনি প্রশাসন হুমড়ি খেয়ে পড়ে। ভুয়া বলে কোনো কোনো সময় যেমন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাকে হয়রানি করা হয় তেমন মুক্তিযুদ্ধের চেতনাও নষ্ট হয়। হাফিজকে নিয়েই বলি। হাফিজ মুক্তিযোদ্ধা না যারা বলছে তারা কারা? তাদের বাড়ি কোথায়? মুক্তিযুদ্ধের সময় তারা কি হাফিজের এলাকার মুক্তিযোদ্ধা যে তারা তাকে দেখেনি। আর কাদেরিয়া বাহিনীর ১৮ হাজার যোদ্ধার কখনো সব যোদ্ধার একজন আরেকজনকে দেখার সুযোগ ছিল না। নাকি যারা অভিযোগ করেছে তারা রাজাকার-আলবদর ছিল। আর মুন্সী তাদের সঙ্গে রাজাকার দলে ছিল বলে মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় নাম দেখে বিস্মিত হয়েছে। একজন রাজাকার মুক্তিযোদ্ধা হয়ে যাচ্ছে বলে তারা অভিযোগ করেছে। তালিকাভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা সে আসল না নকল এটা প্রমাণে মুক্তিযোদ্ধার কোনো দায় থাকার কথা নয়। যারা নকল বলার চেষ্টা করবে বা করে তাদেরই প্রমাণ করা উচিত। কেন তাকে নকল মুক্তিযোদ্ধা বলেছে? মুক্তিযুদ্ধটা এখনকার মতো আমজনতার ব্যাপার ছিল না। পাশের বাড়ির লোকেরাও কে মুক্তিযোদ্ধা জানার কথা ছিল না। এমন অনেক ঘটনা আছে ছেলে মুক্তিযুদ্ধে গেছে তা বাপ-চাচারাও জানতেন না। মুন্সীর সবকিছু ঠিকঠাক থাকতেও কতিপয় স্বার্থান্বেষীর তৎপরতায় তাকে অমুক্তিযোদ্ধা বলতে যাওয়া এ তো দেখছি কাদেরিয়া বাহিনীকেই অস্বীকার করার শামিল। যারা অভিযোগ করেছে তারা আসল না নকল, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী আপনার এবং মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীর কাছে বিচারের সনির্বন্ধ অনুরোধ জানাচ্ছি। কারণ আপনাদের সদয় দৃষ্টি ছাড়া এখন আর কিছু হবে না।’টিপু মুন্সি ‘দেশ রক্ষা বিভাগ স্বাধীনতা সংগ্রামের সনদ’ এবং ১১ নম্বর সেক্টরে কাদেরিয়া বাহিনীর ১ নম্বর হাতেম আলী কোম্পানী কমান্ডার লোকমান হোসেনের নামে ২০০৭ সালের ২৫ মে স্বাক্ষরিত ‘১১ নং সেক্টর, কাদেরিয়া বাহিনী, ১নং হাতেম কোম্পান, রণাঙ্গন ৭১ নামে সনদ জমা দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট দপ্তরে। স্বাধীনতার পর বুয়েটে ভর্তি হওয়ার সময় নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ঘোষণা দিয়েছিলেন টিপু মুন্সি। বঙ্গবন্ধু প্রদেয় মুক্তিযোদ্ধা ভাতা ১৩ টাকা ৬৭ পয়সা গ্রহণ করেছিলেন তিনি। যা স্কুলের রেজিষ্ট্রার খাতায় লিপিবদ্ধ আছে। গণপূর্র্তের ভিতরে একটি চক্র এই কর্মকান্ডের সাথে জড়িত। প্রধান প্রকৌশলীর সুদৃঢ় কর্মকান্ডে ঈর্ষান্বীত হয়ে তাকে বিব্রতকর পরিস্থিতি ফেলতেই বারবার এই বিষয়টি সামনে আনা হচ্ছে।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জামুকা’র এক সদস্য জানায়, টিপু মুন্সির মুক্তিযোদ্ধা সনদ বাতিলের সুযোগ নেই। কারণ তার সনদটি যে জাল এমন কোন প্রমান নেই।জামুকার অপর এক কর্মকর্তা বলেন, হাফিজুর রহমানকে যে সনদ দেয়া হয়েছে (সদস্য নং ম-১৫৮২৮৪) তা যাচাই-বাছাই করে দেখা গেছে, এটি সঠিক। কাজেই জামুকার বৈঠকে তার সনদ বাতিলের কোন প্রশ্নই আসেনা। এছাড়া, মুক্তিযুদ্ধে যারা অংশ গ্রহণ করেছে তাদের সর্বনিম্নবয়স ধরা হয়েছিল ১৩ বছর। এই হিসাবে ১৯৫৬ সালের ২৮ ডিসেম্বর জন্ম নেয়া হাফিজুর রহমান মুন্সীর মুক্তিযুদ্ধকালীন বয়স ছিল ১৪ বছর তিন মাস। এক্ষেত্রে তার বয়স প্রমাণ করে তিনি এই বয়সে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতেই পারেন।এ ব্যাপারে টিপু মুন্সী বলেন, তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা এবং একাত্তরে রনাঙ্গণে পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছি। এ ব্যাপারে থানা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধ মো. নুরুল ইসলাম বলেন, টিপু মুন্সী একজন মুক্তিযোদ্ধা। আমরা একসাথেই মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছি।