একাত্তর লাইভ ডেস্ক:
একাদশ হিজরি সনের ১২ রবিউল আউয়াল সোমবার। সকালের সূর্যকিরণ যখন তীব্র হলো, নবী (সা.) তখন ইন্তেকাল করলেন। এটি ছিল ইসলামের ইতিহাসের সবচেয়ে তমসাচ্ছন্ন দিন। হজরত আনাস বিন মালিক (রা.) বলেন, ‘যেদিন আল্লাহর রাসুল (সা.) মদিনায় আগমন করলেন সেদিনের চেয়ে সুন্দর আলোকিত দিন আমি আর কখনও দেখিনি। আর যেদিন আল্লাহর রাসুল (সা.) ইন্তেকাল করলেন সেদিনের চেয়ে অধিকতর মন্দ ও তমসাচ্ছন্ন দিন আমি আর কখনও দেখিনি।’ (দারিমি)।
সেদিনের ব্যাপারে আনাস (রা.) থেকে বর্ণনা করা হয়েছে, তিনি বলেন, ‘সোমবার যখন তারা ফজরের নামাজে মশগুল ছিলেন, হজরত আবু বকর (রা.) তাদের নিয়ে নামাজ আদায় করছিলেন, আচানক রাসুল (সা.) আয়েশা (রা.) এর ঘরের পর্দা ওঠালেন। তাদের নামাজের কাতারে দ-ায়মান দেখে মুচকি হাসলেন। রাসুল (সা.) নামাজে আসবেন ভেবে হজরত আবু বকর (রা.) কাতারে মিশে যেতে পিছিয়ে এলেন।’ আনাস (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) এর আগমনের খুশিতে মুসলমানরা তাদের নামাজে মনোযোগী হওয়ার মনস্থ করল, কিন্তু রাসুল (সা.) তাদের প্রতি হাতে ইশারা করে বললেন, ‘তোমরা তোমাদের নামাজ পূর্ণ করো।’ অতঃপর রাসুল (সা.) ঘরে প্রবেশ করলেন এবং পর্দা ঝুলিয়ে দিলেন। (বোখারি)।
এ নামাজের পর নবী (সা.) এর জীবনে আর কোনো নামাজের ওয়াক্ত আসেনি। এরই মধ্যে তাঁর মৃত্যুপূর্বাবস্থা শুরু হয়ে যায়। আয়েশা (রা.) নবী (সা.) কে ধরে তার দিকে ভর করে শোয়ান। যেমনটি হজরত আয়েশা (রা.) বললেন, ‘আমার ওপর মহান আল্লাহর নেয়ামতরাজির এটিও অন্যতম যে, আল্লাহর রাসুল (সা.) এর ইন্তেকাল আমার ঘরে আমার ফুসফুস ও বুকের উপরিভাগে থাকাবস্থায় হয়েছে। এমনকি তাঁর মৃত্যুর সময় আল্লাহ আমার থুতু ও তাঁর থুতু একত্রিত করেছেন। রাসুল (সা.) আমার ওপর হেলান দিয়ে থাকাবস্থায়ই আবদুর রহমান বিন আবু বকর মিসওয়াক হাতে ঘরে প্রবেশ করেন। আমি তাঁকে দেখলাম তার দিকে বারবার তাকাচ্ছেন। এতে আমি বুঝতে পারলাম, তিনি মিসওয়াক চাচ্ছেন। তাই আমি তাঁকে বললাম, সেটি কি আপনার জন্য এনে দেব? তিনি মাথায় ইশারা করে বললেন, হ্যাঁ। আমি এনে দিলাম। কিন্তু তা দিয়ে মিসওয়াক করা তাঁর জন্য কঠিন হয়ে গেল। আমি বললাম, এটি কি আমি আপনার জন্য নরম করে দেব? তিনি মাথায় ইশারা করে বললেন, হ্যাঁ। অতঃপর আমি তা নরম করে দিলাম।’ (বোখারি)।
এরপর মিসওয়াক করা অবস্থায়ই সহসা তাঁর এক হাত ও এক আঙুল উপরে তুললেন এবং দেয়ালের দিকে চোখ ফেরালেন। অতঃপর বিড়বিড় করে দুই ঠোঁট নাড়লেন। আয়েশা (রা.) কান লাগিয়ে শুনলেন, তিনি বলছেন, “আমাকে তুমি নেয়ামত দান করেছ নবী, সিদ্দিক, শহীদ ও সালেহিনদের সঙ্গে। হে আল্লাহ! আমাকে তুমি ক্ষমা করে দাও! আমার ওপর দয়া করো আর আমাকে তুমি রফিকে আলা তথা সর্বোত্তম বন্ধুর সঙ্গে মিলিয়ে দাও। হে আল্লাহ! তুমিই সর্বোত্তম বন্ধু। ‘আল্লাহুম্মার রাফিকুল আলা’ এ শেষ বাক্যটি তিনি তিনবার পুনরাবৃত্তি করলেন। এরপর তাঁর হাত নিচে নেমে গেল। তিনি রফিকে আলার সঙ্গে মিলিত হয়ে গেলেন।”