‘যুবলীগ নেতাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে ওসির নেতৃত্বে নির্যাতন’

যশোর প্রতিনিধি :   যশোরের কেশবপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে যুবলীগ নেতাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে নির্যাতনের পর তিনটি মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ উঠেছে। শুক্রবার দুপুরে প্রেসক্লাব যশোর মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেছেন স্বজনরা। নির্যাতনের শিকার আশরাফুল ইসলাম কেশবপুর উপজেলার মজিদপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সহ-সভাপতি ও উপজেলার দেউলি গ্রামের আব্বাস উদ্দীনের ছেলে।

জানতে চাইলে সব অভিযোগ অস্বীকার করে কেশবপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘পরিবারের অভিযোগ সঠিক নয়। আশরাফুলকে ঘটনাস্থল থেকে আটক করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি ডাকাতির মামলা রয়েছে।’

সংবাদ সম্মেলনে আশরাফুলের বাবা আব্বাস উদ্দীন অভিযোগ করেন, প্রায় এক মাস আগে আমাদের গ্রামের চৌরাস্তা মোড়ে কেশবপুরের বুলু বিশ্বাস ও সেনপুর গ্রামের হাসান আলী পৃথক দুটি ইট ভাটা স্থাপনের তোড়জোড় শুরু করে। ফসলি জমি নষ্ট ও পরিবেশ দূষণ করে ইট ভাটা স্থাপনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শুরু করে এলাকাবাসী। আমার ছেলে আশরাফুল এলাকাবাসীর সঙ্গে একাত্ম হয়ে গত ১১ এপ্রিল প্রতিবাদ সমাবেশ যোগদান করেন। সেখানে এলাকার শতশত নারী পুরুষ অংশগ্রহণ করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ভাটা মালিক বুলু বিশ্বাস ও হাসান আলী ও কেশবপুর বিএনপি নেতা আবু বকর এবং আবু সামাদ বিশ্বাস ষড়যন্ত্র করে লাখ লাখ টাকার বিনিময়ে পুলিশকে ম্যানেজ করে। তারই ধারাবাহিকতায় গত ১৯ এপ্রিল গভীর রাতে কেশবপুর থানার ওসি শহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে একদল পুলিশ আমার বাড়িতে হানা দেয়। তখন আমার ছেলে আশরাফুল ঘরে ঘুমিয়ে ছিল। তাকে ডেকে তুলে গায়ের কালো গেঞ্জি খুলে পুরনো একটি লাল গেঞ্জি পরিয়ে মারতে মারতে বাইরে আনা হয়। এ সময় কেন আশরাফুলকে মারপিট করছেন জানতে চাইলে স্বজনদের লাথি মেরে ফেলে দেন ওসি।

পরে তাকে দেউলি মোড়ে নিয়ে চোখ ও হাত-পা বেঁধে বেদম মারপিট করা হয়। কিছুক্ষণ পর একজন অপরিচিত লোককে ক্রসফায়ার মাধ্যমে হত্যা করে পুলিশ দল। পুলিশ ঘটনাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে দু’দল ডাকাতদের গুলিবর্ষণে ১ জন নিহত ও অপর একজন আহত হয়েছে বলে প্রচার করা হয়। থানায় খোঁজ নিতে গেলে আমাদের তাড়িয়ে দেওয়া হয়। পরে জানতে পারি ছেলে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তার সঙ্গে দেখা করে জানতে পেরেছি অমানুষিক নির্যাতনের বর্ণনা। পরে আশরাফুলকে হত্যা, ডাকাতি ও অস্ত্র মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। বর্তমানে আশরাফুল যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আমার ছেলে সম্পূর্ণ নির্দোষ। তাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী আবু বকর নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে থানা পুলিশের সঙ্গে অর্থ বাণিজ্য করে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিভিন্ন মামলায় হয়রানি করা হচ্ছে।

এ সময় ছেলের নিঃশর্ত মুক্তি ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে আশরাফুলের মা মজিদপুর ইউনিয়ন মহিলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মনোয়ারা বেগম বলেন, রাতে ঘরে ঘুমিয়ে থাকা ছেলেডারে ওসি সাহেবের নেতৃত্বে পুলিশ মারপিট করতে করতে তুলে নিয়ে আসে। ছেলেকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য পায়ে জড়িয়ে ধরি। আমাকে লাথি মেরে ফেলে দেয় ওরা। পরের দিন থানায় খোঁজ নিতে গেলে দুই ঘণ্টা বসিয়ে রেখে পরে তাড়িয়ে দেয়। আমি ছেলের নির্যাতনকারীদের শাস্তি চাই।