ময়মনসিংহ বিভাগের অধিকাংশ হেলথ ক্লিনিকেই নানা সমস্যায় জর্জরিত

রেজাউল করিম বাদল, ময়মনসিংহ: ময়মনসিংহ বিভাগের ৪ জেলার বিভিন্ন উপজেলার কমিউনিটি হেলথ ক্লিনিকগুলোতে (সিএইচসি) অবকাঠামোগত সমস্যাসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত রয়েছে। এসব কারণে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর লাখ লাখ মানুষ সেবা নিতে গিয়ে উল্টো দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। গত কয়েকদিন ময়মনসিংহ জেলার বিভিন্ন উপজেলা ঘুরে এই চিত্র পাওয়া গেছে। এসব ভবন পরিদর্শন করে দেখা গেছে, এগুলোর ভেতরে স্যাঁতসেঁতে অবস্থা। ভবনগুলোতে বিদ্যুতের সংযোগ নেই। শৌচাগার ব্যবহারের অনুপযোগী এবং নলকূপও অকেজো। চাহিদার তুলনায় পর্যাপ্ত ওযুধ নেই। আবার কোথাও কোথাও সাধারণ মানুষ এটুকু সেবা পেয়েও অনেক সন্তুুষ্ট। কিন্তু ভবনের শোচনীয় অবস্থা ও বিদ্যুৎ সমস্যার কারণে রোগীদের কষ্ট হয় বলে অনেকেই জানিয়েছেন।স্বাস্থ্য বিভাগের একাধিক সূত্র জানায়, ১৯৯৬-২০০১ আওয়ামী লীগ সরকারের মেয়াদাকালে প্রত্যন্ত গ্রামা লে সিএইচসি ভবন নির্মাণ করে সিএইচসি প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। কিন্তু বিএনপি জোট সরকারের আমলে এই প্রকল্প বন্ধ থাকায় প্রায় সাত বছর ভবনগুলো অব্যবহƒত অবস্থায় পড়ে ছিল। ২০০৯ সালে এসব ভবন চুনকাম করে ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত করা হয়। স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কমিউনিটি হেলথ প্রোভাইডার (সিএইচপি) নিয়োগ দেয়া হয় । পরে তাঁদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দিয়ে সিএইচসিতে পাঠানো হয়। বর্তমানে ময়মনসিংহ বিভাগের ৪ জেলা ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, জামালপুর ও শেরপুরে এ রকম ক্লিনিকের সংখ্যা ১২৯৯টি। এরমধ্যে চালু আছে ৯০২টি। অনেকগুলোতে কমিউনিটি হেলথ প্রোভাইডার (সিএইচপি) না থাকায় কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। ময়মনসিংহ জেলায় ৫৮৯টির মধ্যে চালু ৪৯১টি ,নেত্রকোনা জেলায় ২৫৭টির মধ্যে চালু ২১৯টি, জামালপুর জেলায় ২৯০টির মধ্যে চালু ২৭৪ টি ও শেরপুর জেলায় ১৬৩টির মধ্যে চালু ১৬১টি । এর মধ্যে জনবল না থাকায় বন্ধ রয়েছে ২৪৩টি।ময়মনসিংহের নান্দাইলের অরণ্যপাশা গ্রামে অবস্থিত সিএইচসি ভবনে কর্মরত সিএইচপি মানসুরা বেগম বলেন, বর্ষাকালে ভবনের ছাদ চুঁইয়ে পানি পড়ে। মেঝেতে বড় ফাটল দেখা দিয়েছে। আলমারি ভাঙা থাকায় ওষুধ ও খাতাপত্র রক্ষা করা যায় না। সমস্যাগুলো উল্লেখ করে সিএইচসির প্রকল্প পরিচালক বরাবরে একাধিকবার চিঠি দেওয়া হয়েছে।হালুয়াঘাট উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে অবিস্থত কমিউনিটি কমিউনিটি হেলথ ক্লিনিক গুলোর অবস্থাও খারাপ। ওযুধ সংকট,বিদ্যুৎ না থাকা, নাজুক ভবনের কারণে পুরোপুরি সুবিধা পাচ্ছেন না সাধারণ দরিদ্র মানুষ। হালুয়াঘাট উপজেলার স্বদেশী ইউনিয়নের বাউসা কমিউনিটি ক্লিনিকের হেলথকেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) সাবিনা ইয়াছমিন বলেন, সরকার কর্তৃক বরাদ্দকৃত দেশের প্রতিটি কমিউনিটি ক্লিনিকে ২৮ প্রকার ওষুধ প্রদান করা হয়। এই কমিউনিটি ক্লিনিকে প্রতিদিন গড়ে ৫০-৬০ জন রোগীকে সেবা দেয়া হয়। সপ্তাহের ৬ দিন সকাল ৯ টা থেকে বিকাল ৩ টা পর্যন্ত চিকিৎসা কার্যক্রম চলে। স্বাস্থ্য সেবা নিতে আসা রোগীদের মাঝে গর্ভবতী ও নবজাতক শিশুদের সংখ্যায় বেশি সাধারণ রোগী চেয়ে তুলনামূলক বেশি। চিকিৎসা নিতে আসা নাছিমা আক্তার বলেন, এখন আর সামান্য সমস্যা হলে ১৫ কিলোমিটার দূরে হাসপাতালে যেতে হয় না। এখানে অল্প হলেও চিকিৎসা পাওয়া যায়। তবে হাসপাতালে বসার জায়গা কম। পানির ব্যবস্থা নেই। গরমে ফ্যান চলে না অন্ধকার বা শীতকালে বিদ্যুৎ না থাকায় সমস্যা হয়। ময়মনসিংহ জেলার প্রতিটি উপজেলায় কমিউনিটি হেলথ ক্লিনিকগুলোর এ রকম বেহাল দশার কথা বলেছেন কমিউনিটি হেলথ প্রোভাইডাররাহালুয়াঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকতা ডাঃ এম এ কাদের জানায়, উপজেলার কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর সমস্যা চিহ্নিত করা হয়েছে। সংস্কারের জন্য স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে লিখিত আবেদন করা হয়েছে। ।এ ব্যাপারে ময়মনসিংহ বিভাগের পরিচালক স্বাস্থ্য ডাঃ নূর মোহাম্মদ বলেন, সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি দাবী করেন স্বাস্থ্য সেবায় কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো ব্যাপক অবদান রাখছে। গ্রামের মানুষ এখন সরকারী হাসপাতালমুখী হয়েছে।