ময়মনসিংহে সাবেক ডিলারের চালবাজিতে ১০ টাকার চাল পাচ্ছে না হতদরিদ্ররা

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
ময়মনসিংহ সদর উপজেলার ভাবখালী ইউনিয়নে মজিবুর নামের সাবেক এক ডিলারের চালবাজিতে ১০ টাকা কেজি দরে চাল পাচ্ছেন না হতদরিদ্ররা। বর্তমান ডিলার ও জাতীয় পার্টির স্থানীয় ইউনিয়ন আহবায়ক শহীদুলকে ফাঁসাতে কার্ডধারী দরিদ্রদের টিপসই জাল করে সাবেক ডিলার অভিযোগ করায় বন্ধ রয়েছে ফেয়ার প্রাইজের ১০ টাকা কেজি চাল। এতে করে ৩ হাজার ৬৯০ জন ফেয়ার প্রাইস কার্ডধারী হতদরিদ্র চাল থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। জানা যায়, স্থানীয় ভাবখালী ইউনিয়নে গত সেপ্টেম্বরে ফেয়ার প্রাইসের ডিলার হিসেবে নিয়োগ পান শহীদুল ইসলাম ও গোলাম মোস্তফা। পরবর্তীতে এ ইউনিয়নে ৩ হাজার ৬৯০ জন হতদরিদ্রদের মাঝে ফেয়ার প্রাইসের কার্ড বিতরণ করা হয়।
প্রথম দফায় সেপ্টেম্বর মাসে শহীদুল ১ হাজার ৭২৫ জন কার্ডধারীর মাঝে ৫১ হাজার ৭৫০ কেজি এবং মোস্তফা ১ হাজার ৭০৭ জনের মাঝে ৩০ কেজি করে ৫১ হাজার ২১০ কেজি চাল বিতরণ করেন। কিন্তু ডিলার নিয়োগ প্রতিদ্বন্দ্বীতায় বঞ্চিত হয়ে শহীদুলকে ফাঁসাতে নানা কুটকৌশলের আশ্রয় নেয় ডিলার মজিবুর। ওই সময় ভয়ভীতি দেখিয়ে ৭ জন হতদরিদ্রদের কাছ থেকে ফেয়ার প্রাইসের ৭ টি কার্ড হাতিয়ে নেন। পরবর্তীতে তাদের টিপসই জাল করে তারা স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে চাল না পাওয়ার ভ্রান্ত অভিযোগ করেন। এ ঘটনায় স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান একটি ও উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তাকে প্রধান করে আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। দু’টি তদন্ত কমিটির কাছেই অভিযোগকারীরা জানান, আসলে তারা অভিযোগকারী নন। মূলত তাদের টিপসই জাল করেই ব্যক্তি আক্রোশের জের ধরে মজিবুর ডিলার এ কাজ করেছেন।
স্থানীয় পণঘাগড়া এলাকার স্বল্পনা রাণী (৩২) ও উইনারপাড় এলাকার আবু তাহের (৪০) অভিযোগ করেন, মজিবুর ডিলারের কারসাজিতে আমাদের এলাকায় চাল সরবরাহ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এতে করে কোন রকম খেয়ে না খেয়ে আমাদের দিনাতিপাত করতে হচ্ছে। একই রকম অভিযোগ করেন ভাবখালীর সিরাজুল ইসলাম ও আব্দুল কদ্দুস।
স্থানীয় ২ নং চুরখাই ওয়ার্ডের হেলাল উদ্দিন বলেন, মজিবুর ডিলারের ষড়যন্ত্রের কারণে চাল পাচ্ছি না। খুব কষ্টে দিন যাচ্ছে। বেশি দামে চাল কেনার সামর্থ্য নেই।
এ ইউনিয়নের ১০ টাকা কেজি চালের আরেক ডিলার গোলাম মোস্তফা জানান, শহীদুলের সঙ্গে মজিবুরের ব্যক্তি আক্রোশে মিথ্যা অভিযোগ করায় ইউনিয়নে চাল বিতরণ বন্ধ রয়েছে। এতে করে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে। বর্তমান ডিলার ও জাতীয় পার্টির স্থানীয় ইউনিয়ন আহবায়ক শহীদুল বলেন, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ প্রকল্প বাস্তবায়নের স্বার্থে আমরা নীতিমালা অনুসরণ করে চাল বিতরণ করছি। কিন্তু মজিবুর ডিলার মিথ্যা আশ্রয় নিয়ে সরকারি বরাদ্দ বন্ধ করে প্রকল্পকে বাঁধাগ্রস্ত করে সরকারের সুনাম ক্ষুন্ন করছে।
ডিলার মজিবুরের এ চালবাজির ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের কারণেই চাল না দেয়ার এমন অভিযোগ উঠেছে। তদন্ত প্রতিবেদনে এর উল্লেখ রয়েছে। জানতে চাইলে ময়মনসিংহ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আ.ন.ম.ফয়জুল হক জানান, ঘটনাটি তদন্তে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি ইতোমধ্যে রিপোর্ট জমা দিয়েছে। রিপোর্ট পর্যালোচনা করে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।