কে. এম. রুবেল, ফরিদপুর প্রতিনিধি
মায়ের মৃত্যুর তিন দিন পর অসহায় চার বছরের শিশু সোহানার ঠিকানা হলো বাবার বুকে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ফরিদপুরের জেলা প্রশাসন সোহানাকে বাবার কাছে হস্তান্তর করে।
গত শনিবার বিকেল ৬টার দিকে দুজন অজ্ঞাতনামা ব্যাক্তি শিশুটির মা তানজিলা সৌখিন (৩০)কে অসুস্থ অবস্থায় ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে দিয়ে যান। মায়ের সাথে আসে চার বছরের ওই শিশু।
মাকে হাসপাতালের মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ডের ১৮ নম্বর শয্যায় ভর্তি করা হয়। হাসপাতালে আসার মাত্র তিন ঘন্টা পর শিশুটির মা শনিবার নয়টার দিকে মারা যান।
এর পর শিশুটিকে নিয়ে বিপাকে পড়ে হাসপাতাল কতৃপক্ষ। শিশুটির কোনো পরিচয় বা সঠিক ঠিকানা না পেয়ে ফরিদপুর জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় জেলা সমাজ সেবা অফিস ওই হাসপাতালের সেবিকা সাজেদা বেগমের কাছে রাখে সোহানাকে। গত দুই দিন ধরে প্রশাসন বিভিন্ন স্থানে খোজ খবর করে শিশুটির বাবা ও আত্মীয়দের সন্ধ্যান পায়।
মঙ্গলবার বিকালে শিশুটির বাবা নারায়গঞ্জের বন্দর থানা এলাকার বাসিন্দা এস এম সোহাগ ফরিদপুরে আসেন।এর আগেই সোহানা ও তার ভাই সোয়াত (১৪) জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে নিয়ে আসা হয়।
জেলা প্রশাসক উম্মে সালমা তানজিয়া ও শহর সমাজ সেবা কর্মকর্তা নুরুল হুদা দীর্ঘ সময় এস এম সোহাগ ও তার আত্মীয়দের সাথে কথা বলে পরিচয় নিশ্চিত হয়ে শিশুটিকে বাবার কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
এ সময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক এরাদুল হক, এনডিসি পারভেজ মল্লিক, সাংবাদিক পান্না বালা, নির্মলেন্দু চক্রবর্তী, হাসানউজ্জামন, মফিজুর রহমান শিপন, সাজ্জাদ বাবু, খায়রুজ্জামান সোহাগ, আলীমুজ্জামান রনিসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বাবার কাছে শিশুটি হস্তান্তরের সময় এক হৃদয় বিদারকের দৃশ্যের অবতারনা ঘটে। সেবিকা সাজেদা বেগমের কোল থেকে সোহানা কোনো ভাবেই নামতে চাইছিলো না। শিশুটি চিৎকার করে বলছিলো আমার মা হাসপাতাল থেকে হারিয়ে গেছে। এ সময় উপস্থিত কেউই অশ্রু সংবরণ করতে পারেনি।
শিশু সোহানা ও সোয়াতের জন্য জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে নতুন পোষাক এবং বিভিন্ন উপহার সামগ্রী তুলে দেওয়া হয়।
বাবা এস এম সোহাগ জানান, হয়রানি মুলক একটি মামলায় গত দেড় বছর কারাগারে থাকায় আমি স্ত্রী ও সন্তানদের কোনো খোজ নিতে পারিনি।
তিনি বলেন, নারায়গঞ্জের আমার ভাড়া করা বাসার সমস্ত মালামাল বিক্রয় করে বছর খানেক সংসারের খরচ চলেছে। কোনো উপায় অন্ত না পেয়ে আমার স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে আমার শশুরবাড়ী ফরিদপুরে শিবরামপুরে চলে আসে। সেখান আশ্রয় না পেয়ে ফরিদপুর শহরের আসে কাজের সন্ধানে। গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় সে মানবেতর জীবন কাটাতে থাকে। এক পর্যায়ে আমার ছেলে সোয়াতকে মটর সাইকেল গ্যারেজে কাজ দেয় মো. আজাদ নামের এক ব্যাক্তি।
ব্লাষ্ট ফরিদপুরের সমন্বয়কারি অ্যাড. শিপ্রা গোস্বামী জানান, তানজিলা সৌখিন মৃত্যুর চারমাস আগে আমার কাছে এসেছিলো তার চিকিৎসার টাকার সংস্থানের জন্য পরামর্শ চাইতে। তার বাবার বাড়ীর প্রাপ্য সম্পদের হিস্যা চেয়ে আমরা নোটিশও করেছিলাম। একপর্যায়ে অসুস্থ তানজিলা সৌখিনকে আমরা ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে ছিলাম। পরে কিছুটা সুস্থ হয়ে সে ফরিদপুরের বিভিন্ন বাসাবাড়ীতে কাজ করতো।
ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক উম্মে সালমা তানজিয়া বলেন, অসহায় শিশু সোহানার ঠিকানা পেতে আমরা বিভিন্ন স্থানে যোগাযোগ করি । মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তার বাবার কাছে লিখিত ভাবে মা হারা এই শিশুটিকে তুলে দেওয়া হয় বাবার কাছে।
উল্লেখ্য, শনিবার বিকালে শহরের দুধ বাজার এলাকায় রাস্তায় পড়ে শিশুটিসহ অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকা তানজিলাকে স্থানীয়রা ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করলে ওই রাতেই সে মারা যায়।