মহানবী (সা.) এর পারিবারিক জীবন

একাত্তর লাইভ ডেস্ক:
মহানবী (সা.) সবার জন্য ছিলেন কোমল, ভদ্র, নম্র, শান্তশিষ্ট। উগ্র বা বদ মেজাজের নন। যিনি সার্বিকভাবে সবার জন্য উত্তম আদর্শের অধিকারী ছিলেন। পারিবারিকভাবেও তিনি ছিলেন সবার প্রিয়, সর্বোৎকৃষ্ট, আদর্শবান। যার তুলনা হয় না। মহানবী (সা.) এরশাদ করেন, ‘তোমাদের মধ্যে সে সর্বোত্তম, যে তার পরিবারের কাছে সর্বোত্তম। আর আমি আমার পরিবারের কাছে সর্বোত্তম।’ (তিরমিজি)।
রাসুল (সা.) এর জীবনের সর্বক্ষেত্রে আদর্শ বিদ্যমান। পারিবারিক জীবনও এর বহির্ভূত নয়। পারিবারিক সম্পর্ক ও আদর্শের ক্ষেত্রে রাসুল (সা.) সর্বশ্রেষ্ঠ পরিবার প্রধান। নিজের খাদেমের সঙ্গে যে আচরণ করেছিলেন বর্তমান সময়ে তা নিজের মা-বাবার সঙ্গেও এরকম আচরণ পাওয়া দুষ্কর। শুনে নেয়া যাক, হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, (যিনি নবীর খাদেম ছিলেন) তিনি বলেন, ‘আমি নবী করিম (সা.) এর খাদেম হিসেবে ১০ বছর খেদমত করেছি, তিনি কখনও আমার ক্ষেত্রে উফ শব্দ ব্যবহার করেননি। আমি কোনো কাজ করলে কখনও বলেননি, কেন তুমি এটা করলে? অথবা আমি কোনো কাজ করিনি তখনও তিনি বলেননি, কেন তুমি এটা করনি? আর তিনি ছিলেন মানুষের মধ্যে চরিত্রের দিক থেকে অধিক উত্তম।’ (বোখারি, মুসলিম)।
রাসুলে আকরাম (সা.) পরিবারের সবার প্রতি ছিলেন সদয়। উম্মাহাতুল মুমিনিনদের সবাইকে বেশি পছন্দ করতেন। তাদের প্রতি মহব্বতের কারণে হজরত আনাস (রা.) রাসুল (সা.) থেকে বর্ণনা করে বলেন, রাসুল (সা.) এরশাদ করেন, ‘দুনিয়ার মধ্য থেকে তিনটি জিনিসকে আমার কাছে প্রিয় করে দেয়া হয়েছে। নারী, সুগন্ধী এবং নামাজে চক্ষুর শীতলতা।’ (আহমদ)। যার কাছে পরিবারের প্রত্যেক সদস্য প্রিয় থাকেন, তিনিই তো পরিবারের সবার প্রিয় হয়ে ওঠেন। রাসুল (সা.) ছিলেন পরিবার পরিজনের প্রতি অধিক উদারশীল। আর তাই তো তিনি এরশাদ করেন, ‘নিশ্চয়ই মুমিনদের মধ্যে ঈমানের দিক থেকে ওই ব্যক্তি পরিপূর্ণ ঈমানদার, যিনি সচ্চরিত্রবান এবং তার পরিবার পরিজনের প্রতি অধিক উদারশীল।’ (তিরমিজি)।
রাসুলুল্লাহ (সা.) উম্মাহাতুল মুমিনিনদের সঙ্গে সদা হাসিসুলভ, প্রসন্ন মনোভাবের থাকতেন। তাদের মাঝে মধ্যে সুড়সুড়ি দিতেন। তাদের প্রতি ব্যয় করতে প্রসারিত এবং উদার ছিলেন। এমনকি মাঝে মাঝে দৌড় প্রতিযোগিতা করতেন। উম্মুল মুমিনিন হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘একদা আমি রাসুল (সা.) এর সঙ্গে এক সফরে ছিলাম। সেখানে রাসুল (সা.) এর সঙ্গে দৌড় প্রতিযোগিতায় আমি তাঁর অগ্রবর্তী হয়ে যাই। পরে আরেকবার দৌড় প্রতিযোগিতায় রাসুল (সা.) আমার অগ্রবর্তী হয়ে যান। অতঃপর তিনি বলেন, এবারের প্রতিযোগিতা ওই প্রতিযোগিতার প্রতিশোধ।’ (তিরমিজি)।
রাসুল (সা.) স্ত্রীদের ঘরোয়া কাজে সাহায্য করতেন। হজরত আসওয়াদ (রহ.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমি হজরত আয়েশা (রা.) কে জিজ্ঞেস করলাম, রাসুলুল্লাহ (সা.) ঘরে কী কাজ করতেন? তিনি বললেন, তিনি সাধারণত ঘরোয়া কাজে ব্যস্ত থাকতেন। আর নামাজের সময় হলে উঠে নামাজে চলে যেতেন।’ (বোখারি)।
রাসুল (সা.) উম্মাহাতুল মুমিনিনদের সঙ্গে একসঙ্গে গোসল করতেন। এ ক্ষেত্রে হজরত আয়েশা (রা.) বর্ণনা করে বলেন, ‘আমি ও রাসুলুল্লাহ (সা.) একই পাত্র থেকে গোসল করতাম।’ (বোখারি)। শুধু তাই নয়, তাদের সঙ্গে একত্রে পানাহার করতেন। চলাফেরা, বসবাস করতেন। রাসুল (সা.) এর মাথা আঁচড়ে দিতেন।
হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, ‘আমি ঋতুবতী অবস্থায় রাসুলুল্লাহ (সা.) এর মাথা আঁচড়ে দিয়েছি।’ (বোখারি)।
তিনিই তো মহানবী, তিনিই তো আদর্শ, তিনিই তো সর্বকালের, সর্বযুগের, সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব। যার আদর্শ সর্বক্ষেত্রে সবার জন্য অনুসরণীয়, অনুকরণীয়। যার আদর্শ মানব জাতির নাজাতের একমাত্র উসিলা। মানব জীবনের এমন কোনো দিক নেই, যে পর্যায়ে মহানবী (সা.) এর উত্তম আদর্শ প্রস্ফুটিত হয়নি। রাসুল (সা.) এরশাদ করেন, ‘আমি উত্তম আদর্শ পরিপূর্ণতা প্রদানের জন্য প্রেরিত হয়েছি।’ পারিবারিক ক্ষেত্রে তাঁর আদর্শ ছিল পরিপূর্ণ। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, ‘যারা আল্লাহ ও শেষ দিবসের আশা রাখে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে তাদের জন্য রাসুলুল্লাহর মধ্যে উত্তম আদর্শ রয়েছে।’ (সূরা আল আহজাব : ২১)।