মজলুমের পাশে দাঁড়ানো ঈমানি দায়িত্ব

বিভাগীয় ডেস্ক:
মানুষ সামাজিক জীব। সমাজে তার বসবাস। মানুষের হাতে সমাজ, দেশ, রাষ্ট্র ও পৃথিবী পরিচালিত হয়। একটা সমাজ রাষ্ট্রে মুসলিম অমুসলিম বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী আবাস গাড়ে। ধনী, চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী, কৃষক-মজুর, খেটেখাওয়া মানুষ নিয়ে দেশ গঠিত। মানুষ একে অপরকে ছাড়া চলতে পারে না। জীবনের বাস্তবতায় সময়ের প্রয়োজনে মানুষ মানুষের কাছে আসতে হয়। পরস্পর শরণাপন্ন হতে হয়। অতএব কারও ওপর অন্যায়ভাবে জুলুম-অত্যাচার অনৈতিক মানবতা বিরুদ্ধ কর্মকা- করা যাবে না। টাকার প্রাচুর্যতায়, বংশের দাম্ভিকতায়, কটু কথায় ও ঘৃণার আস্ফালনে গরিবকে কষ্ট দেয়া যাবে না।
মানুষকে অত্যাচার করা অবৈধ। এমনকি কোনো জীবকেও। অত্যাচার-অনাচার ইসলামে নিষিদ্ধ। অত্যাচারীকে আল্লাহ পছন্দ করেন না। আল্লাহ মজলুমের পক্ষে। তার প্রতি সাহায্যের হাত বাড়াতে আল্লাহ মানবকুলকে প্রত্যাদেশ দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন, ‘হে ঈমানদাররা, আর তোমাদের কী হলো যে, তোমরা আল্লাহর রাহে লড়াই করছ না, দুর্বল সেই পুুরুষ, নারী ও শিশুদের পক্ষে, যারা বলে হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদের এ জনপদ থেকে নিষ্কৃতি দান করো! এখানকার অধিবাসীরা যে অত্যাচারী! আর তোমার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য পক্ষাবলম্বনকারী নির্ধারণ করে দাও এবং তোমার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য সাহায্যকারী নির্ধারণ করে দাও।’ (সূরা নিসা : ৭৫)।
অত্যাচারী আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত। শান্তির আলয় জান্নাত থেকে বিতাড়িত। জালেমের বিরুদ্ধে আল্লাহর অবস্থান কঠোর। তিনি জালেমকে অপছন্দ করেন। তিনি জালেমের বিরুদ্ধে যুদ্ধাভিযান চালাতে ও তাদের মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকতে বলেছেন। এরশাদ করেন, ‘তোমরা জালেম সম্প্রদায়ের মোকাবিলায় তোমাদের সাধ্যানুযায়ী প্রস্তুতি গ্রহণ করো।’ (সূরা আনফাল : ৬০)। জালেম স্বীয় প্রভুর হুকুম অমান্যকারী। নাফরমানি। জালেমের ওপর আল্লাহর অভিসম্পাত। আল্লাহ বলেন, ‘সাবধান! জালেমদের ওপর আল্লাহর অভিশাপ।’ (সূরা হুদ : ৮)।
মজলুমকে সাহায্য করা পুণ্যের কাজ। তাকে সাহায্য করলে আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সা.) খুশি হন। মজলুমকে সাহায্যের মাধ্যমে আল্লাহর খুশি ও সন্তুষ্টি অর্জন করা যায়। আল্লাহ স্বয়ং মজলুমের পক্ষে। আনাস (রা.) বলেন, নবী (সা.) বলেন, ‘তোমার ভাইকে সাহায্য করো। সে জালেম হোক অথবা মজলুম।’ আনাস (রা.) বলেন, হে আল্লাহর রাসুল! মজলুমকে সাহায্য করব তা তো বুঝলাম কিন্তু জালেমকে কী করে সাহায্য করব? তিনি বললেন, ‘তুমি তার হাত ধরে তাকে বিরত রাখবে।’ (বোখারি : ২৪৪৪)। আরেক হাদিসে বিধৃত হয়েছে, বারা ইবনে আজিব থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) আমাকে সাতটি বিষয়ের হুকুম দিয়েছেন, যার মধ্যে অন্যতম হলো, ‘রোগীর শুশ্রুষা করা ও মজলুমকে সহায়তা দান করা।’ (বোখারি : ৫১৭৫)।
মজলুম ব্যক্তির ফরিয়াদ আল্লাহর কাছে খুব তাড়াতাড়ি পৌঁছে। আল্লাহ তার ডাক শোনেন। মোনাজাত কবুল করেন। আল্লাহ মজলুমের অসহায়ত্ব মানুষকে অনুধাবন করতে বলেন। মজলুমের ‘আহ’ শব্দ আল্লাহর সহ্য হয় না। আল্লাহ মজলুমের বন্ধু। তিনি মজলুমের অভিভাবক। তিনি মজলুমের ফরিয়াদ শোনেন। ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, নবী (সা.) যখন মুআজকে ইয়েমেনে পাঠান, তাকে বলেন, ‘মজলুমের ফরিয়াদকে ভয় করবে। কেননা, তার ফরিয়াদ এবং আল্লাহর মাঝে কোনো পর্দা থাকে না।’ (বোখারি : ২৪৪৮)।
জুলুম অন্ধকার। পাপ-পঙ্কিলতায় ভরপুর। জুলুম শয়তানের কাজ ও তার পছন্দ। জুলুম ব্যক্তির জন্য কেয়ামত দিবসে বিরুদ্ধ সাক্ষী হবে। জুলুম অত্যাচারীকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবে। ইবনে ওমর (রা.) বর্ণনা করেন, নবী (সা.) বলেছেন, ‘জুলুম কেয়ামতের দিন অনেক অন্ধকার রূপ নেবে। (বোখারি : ২৪৪৭)।