ভয়াবহ সেই সাইবার হামলা হয়েছে বাংলাদেশেও…

অনলাইন ডেস্ক:বিশ্বব্যাপী ভয়াবহ সেই সাইবার হামলার কবলে বাংলাদেশও ছিল। কিন্তু এই হামলা তেমন কোন প্রভাব ফেলতে পারেনি। বিশ্বের ১৫০টি দেশে হ্যাকারদের চালানো সাইবার আক্রমণে প্রায় ২ লক্ষ কম্পিউটার আক্রান্ত হয়েছে- সেই তালিকায় বাংলাদেশও রয়েছে বলে ইতোমধ্যেই নিশ্চিত হওয়া গেছে। অর্থাৎ ম্যালওয়্যারটেক নামে যে প্রতিষ্ঠানটির হিটম্যাপ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো ব্যাবহার করছে সেখানে আক্রান্ত ১৫০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশও আছে বলে পরিলক্ষিত হয়েছে। অবশ্য এতে বাংলাদেশকে চিহ্নিত করা হয়েছে নীল রঙ দিয়ে, যার অর্থ হামলার তীব্রতা খুবই কম । সর্বাধিক আক্রান্ত দেশগুলো হলুদ বা কমলা রঙে দেখানো হচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশে কারা এসব হামলার শিকার হয়েছে তা জানা কঠিন বলে প্রতীয়মান হচ্ছে, কারণ আতংক সৃষ্টির ভয়ে আক্রান্ত প্রতিষ্ঠানগুলো এব্যাপারে কড়া গোপনীয়তা বজায় রাখছে।

বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর বলে বিবেচিত হচ্ছে বাংলাদেশে, কারণ ব্যাংকিং ব্যবস্থাসহ অর্থণীতি ও বাণিজ্য বিষয়ক নানা প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যারা মনে করছে এই ব্যাপারটি নিয়ে ভুল বা কোন স্পর্শকাতর তথ্য বাজারে চাউর হয়ে গেলে জনগণের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হতে পারে।ফলে যেসব প্রতিষ্ঠান এই সাইবার হামলার, সুনির্দিষ্ট করে বললে র‌্যানসমওয়্যার হামলার শিকার হয়েছে, তারা এ নিয়ে খোলাসা করে কিছু বলতে চাইছে না। অনেকেই স্বীকারই করতে চাইছে না। যারা স্বীকার করছে, তারাও শর্ত জুড়ে দিচ্ছে যে তার বা তার প্রতিষ্ঠানের নাম প্রকাশ করা যাবে না।
আজ রোববার সারাদিন ধরে নানা পর্যায়ে অনুসন্ধান চালিয়ে অন্তত দুটি ব্যাংক, একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এই র‌্যানসমওয়্যার হামলার শিকার হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে তথ্য পাওয়া গেছে। যে টেলিভিশন চ্যানেলটির কম্পিউটার আক্রান্ত হয়েছিল, জানা যাচ্ছে তারা নিজেরাই র‌্যানসমওয়্যার নিয়ে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তৈরির প্রস্তুতি নিচ্ছিল এবং এরই এক পর্যায়ে তারা আবিষ্কার করে যে তাদেরই কয়েকটি কম্পিউটার র‌্যানসমওয়্যারের আক্রমণের শিকার।
আর ব্যক্তি পর্যায়ে কয়েক ডজন কম্পিউটার আক্রান্ত হবার খবরও পাওয়া গেছে, যে তথ্যগুলো মূলত আসছে গত শুক্রবার থেকে। এর মধ্যে অন্তত দুটি কম্পিউটারের স্ক্রিনশটের ছবির সঙ্গে ওয়ানাক্রাই নামক র‌্যানসমওয়্যারটির হুবহু মিল পাওয়া যাচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা গ্রাহকেরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েতে পারে- এই আশঙ্কায় এ নিয়ে মুখ খুলতে চাইছে না।
হামলার শিকার একটি ব্যাংকের সূত্রে বলা হয়েছে, এরকম হামলা আসতে পারে সেরকম আভাস তারা আগেই পেয়েছিলেন, ফলে প্রস্তুত ছিলেন , ফলে কোন র‌্যানসমওয়্যার হামলার শিকার হওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। তবে বিশেষ করে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো এই র‌্যানসমওয়্যার হামলার শুরু হবার পর খুবই তটস্থ হয়ে রয়েছে। অবশ্য বাংলাদেশে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অধীনস্ত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে সাধারণত প্রতিদিনের যে কর্মকা- তার অন্তত তিনটি ডিজিটাল ব্যাকআপ থাকে, এর মধ্যে অন্তত একটি ব্যাকআপ থাকে সমস্ত নেটওয়ার্ক থেকে বিযুক্ত বা আইসোলেটেড অবস্থায়, ফলে ব্যাংকিং নেটওয়ার্ক যদি এই র‌্যানসমওয়্যারের কবজায় পড়েও, তাতেও বড় কোন ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াই পুরো ব্যাকআপ রিস্টোর করার সক্ষমতা ব্যাংকগুলোর রয়েছে। এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাথে যোগাযোগ করা হলে মুখপাত্র শুভঙ্কর সাহা বলেছেন, তারা এ নিয়ে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য আগামীকাল দেবেন। তিনি বলেন, আজই কর্মদিবস শুরু হওয়ায় পুরো চিত্রটা তারা এখনো হাতে পাননি। তবে দিনের শুরুতেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সমস্ত কম্পিউটার ব্যবস্থা তারা স্ক্যান করেছেন এবং সেগুলো ঠিকঠাকই আছে বলেও জানান তিনি।
তবে তফসিলি ব্যাংক ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কি অবস্থা সেটা আগামীকালকের আগে জানাতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরাসরি তত্ত্বাবধানে পরিচালিত প্রকল্প একসেস টু ইনফরমেশন বা এটুআইয়ের মুখপাত্র নাইমুজ্জামান মুক্তা আমাকে বলেছেন, বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত যে কম্পিউটারগুলো এই সাইবার হামলার শিকার হয়েছে বলে তারা তথ্য পাচ্ছেন তা বৈশ্বিক বিবেচনায় তার ভাষায় খুবই ইনসিগনিফিকেন্ট বা নগণ্য।