নির্বাচন আর পেছানোর সুযোগ নেই: ইসি সচিব

একাত্তরলাইভডেস্ক: আগামী ৩০ ডিসেম্বের পর আর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণের তারিখ পেছানোর সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ।

তিনি বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা ও চার নির্বাচন কমিশনার আজ সকালে বৈঠক করেছেন। বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১৫ নভেম্বর) বিকেল সোয়া ৪টার দিকে আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন ভবনে এক ব্রিফিংয়ে ইসি সচিব এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, জানুয়ারিতে আইনি ও সাংবিধানিক কিছু বিষয় রয়েছে। ঐক্যফ্যন্টের দাবি চুলচেরা বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা করে ইসি সিদ্ধান্ত দিয়েছে, ৩০ ডিসেম্বরের পর ভোট আর পেছানোর কোনো সুযোগ নেই।

এর আগে, ২৩ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণের তারিখ ঠিক করে গত ৮ নভেম্বর তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা। তবে তফসিল ঘোষণার পর ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট একমাস ও সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন জোট যুক্তফ্রন্ট ভোটগ্রহণের তারিখ এক সপ্তাহ পিছিয়ে পুনঃতফসিল ঘোষণার দাবি জানায়। নির্বাচন কমিশন বৈঠক করে ভোটগ্রহণের তারিখ এক সপ্তাহ পিছিয়ে ৩০ ডিসেম্বর ঠিক করে ১২ নভেম্বর পুনঃতফসিল ঘোষণা করে।

তবে এরপরও নির্বাচন পেছানোর দাবি জানায় ঐক্যফ্রন্ট। গতকাল বুধবার (১৪ নভেম্বর) জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের একটি প্রতিনিধি দল ইসির সঙ্গে ভোট পেছানোসহ বিভিন্ন দাবি নিয়ে বৈঠক করেন। ৩০ ডিসেম্বরের পর আরও তিন সপ্তাহ ভোট পেছানোর দাবি জানান ঐক্যফ্রন্ট নেতারা।

কিন্তু ৩০ ডিসেম্বর ভোটগ্রহণের পরও গুরুত্বপূর্ণ কিছু কাজ থাকায় ঐক্যফ্রন্টের এই দাবি মেনে নেওয়া সম্ভব নয় বলে মনে করছে নির্বাচন কমিশন। ইসি সচিব বলেন, ৩০ ডিসেম্বর ভোটের পর কিছু আইনি ও সাংবিধানিক কাজের বিষয় রয়েছে। ভোটের গেজেট প্রকাশ, শূন্য আসনে উপনির্বাচন, স্থগিত হওয়া ভোটকেন্দ্রে তদন্ত, পুনঃভোট ও তার গেজেট প্রকাশ, সংসদ সদস্যদের শপথের মতো গুরুত্বপূর্ণ সব কাজ রয়েছে। যথেষ্ট সময় নিয়ে এসব কাজ করতে হবে। ফলে কমিশন মনে করছে, নির্বাচন পেছানোর আর কোনো সুযোগ নেই।

হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, এছাড়া, জানুয়ারির দ্বিতীয় ও তৃতীয় সপ্তাহে রয়েছে বিশ্ব ইজতেমা। ৩০ থেকে ৪০ লাখ মানুষ ইজতেমায় জমায়েত হয়। সবকিছু বিবেচনা করে ৩০ ডিসেম্বরের পরে ভোট পেছানো যুক্তিযুক্ত ও বাস্তবসম্মত নয় বলে কমিশন মনে করে। এই মর্মেই ইসি সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এদিকে, বুধবার ইসির সঙ্গে ঐক্যফ্রন্টের প্রতিনিধি দলের বৈঠকের পর আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দলও ইসির সঙ্গে বৈঠক করে। নির্বাচন যেন ৩০ ডিসেম্বরের পর আর একদিনও পেছানো না হয়, সে দাবি ইসির কাছে জানায় ক্ষমতাসীনদের এই প্রতিনিধি দল।

৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণের তারিখে অনড় থাকার সিদ্ধান্ত নেওয়ার মাধ্যমে ইসি সরকারের দাবি মেনে নিল কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে ইসি সচিব বলেন, কমিশন স্বাধীন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। কমিশন নিজেরাই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে। কমিশন অন্য কারও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেনি। তবে স্টেকহোল্ডার হিসেবে ইসি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মতামত নিয়ে থাকে।

সংবাদ সম্মেলনে ইসির যুগ্মসচিব এস এম আসাদুজ্জামান ও খোন্দকার মিজানুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, ১২ নভেম্বর ঘোষিত পুনঃতফসিল অনুযায়ী, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে আগ্রহীদের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ ২৮ নভেম্বর। এরপর ২ ডিসেম্বর পর্যন্ত মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই চলবে। এরপর যোগ্য প্রার্থীর তালিকা প্রকাশের পর প্রার্থীরা ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে পারবেন। পরদিন ১০ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দের পর আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে প্রার্থীদের প্রচারণা। এরপর ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে ভোটগ্রহণ।