ভারত-শাসীত কাশ্মীরে বেসামরিক মানুষকে ঢাল হিসেবে ব্যবহারের অভিযোগে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে মামলা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক :   ভারত-শাসিত কাশ্মীরে সেনাবাহিনী একজন স্থানীয় বাসিন্দাকে তাদের জিপের সঙ্গে বেঁধে মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে, এই ভিডিও তুমুল আলোড়ন তোলার পর রাজ্যের পুলিশ সোমবার সেনা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেছে।

বাডগাম জেলায় রুজু করা ঐ মামলাতে ৫৩ রাষ্ট্রীয় রাইফেলসের বিরুদ্ধে অপহরণ ও একজন নাগরিকের জীবন বিপদে ফেলার অভিযোগও আনা হয়েছে।

সেনাবাহিনী নিজেরাও ঐ ঘটনার আলাদা তদন্ত করছে।

তবে তারা দাবি করছে, পাথর নিক্ষেপকারীদের হাত থেকে বাঁচতে বাধ্য হয়েই সেনা কমান্ডার ঐ রাস্তা নিয়েছিলেন।

ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারও অবশ্য এই ইস্যুতে সেনাবাহিনীর পাশেই দাঁড়িয়েছে।

চারদিন আগে ভারত-শাসিত কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ্ নিজের টুইটার অ্যাকাউন্টে একটি ছবি ও ভিডিও পোস্ট করেন, যাতে দেখা যায় ভারতীয় সেনারা এক কাশ্মীরিকে তাদের জিপের সামনে বেঁধে রাস্তা দিয়ে টহল দিচ্ছে।

আর ঐ ব্যক্তিকে জিপের সামনে বেঁধে রাখা হয়েছে।

পনেরো সেকেন্ডের ওই ভিডিও ক্লিপে কিছুটা অস্পষ্ট আওয়াজে সেনাদের এটাও বলতে শোনা যায় – ‘পাত্থরবাজ’ অর্থাৎ যারা পাথর ছুঁড়বে তাদের এই হালই হবে।

এই ভিডিও নিমেষে ভাইরাল হয়ে ওঠে।

 কাশ্মীরে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ঢিল ছুঁড়ে বিক্ষোভ দেখাচ্ছে প্রতিবাদকারীরা

 

একজন নিরীহ কাশ্মীরিকে ভারতীয় সেনারা যেভাবে মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছে, তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদও শুরু হয়ে যায় উপত্যকা জুড়ে।

এমনই একটি প্রতিবাদের নেতৃত্বে দেওয়া, রাজ্যের ল্যানগেট আসনের এমএলএ ইঞ্জিনিয়ার রশিদ বলছিলেন, এই ঘটনা সারা দুনিয়ার সামনে ভারতীয় সেনার আসল চেহারা ফাঁস করে দিয়েছে।

তিনি বলেন, সারা দুনিয়ায় নিজেদের সবচেয়ে শৃঙ্খলাবদ্ধ বাহিনী বলে ভারতীয় সেনারা যে দাবি করে থাকে, তা যে বিরাট একটা জালিয়াতি ও ধোঁকা, তা এতে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

বিব্রত সেনাবাহিনীও এই ঘটনায় অভ্যন্তরীণ তদন্তের নির্দেশ দেয়। তবে সেই সঙ্গেই তারা জানায়, প্রাথমিকভাবে দেখা গেছে ওই ভিডিওটি ৯ই এপ্রিলের, যেদিন বাডগামে উপনির্বাচন চলছিল।

পাথর-নিক্ষেপকারীরা সেনা-জওয়ানদের ঘিরে ফেলেছে, এটা বুঝেই সংঘর্ষ এড়ানোর শেষ চেষ্টা হিসেবে তাদের কমান্ডার মানবঢাল ব্যবহার করেছিলেন, এই যুক্তিও দিচ্ছে সেনা সূত্রগুলো।

তবে রাজ্যের শাসক দল পিডিপি-ও গোটা ঘটনায় তাদের অস্বস্তি এড়াতে পারছে না।

রাজ্য সরকারের মুখপাত্র সুহেল বুখারির কথায়, “একের পর এক ভিডিও – যেগুলো বেশিরভাগ ভোটের দিন তোলা – যেভাবে ছড়িয়ে পড়ছে, তা দুর্ভাগ্যজনক। এর কোনটায় সেনা জওয়ানদের স্থানীয়দের হাতে হেনস্থা হতে দেখা যাচ্ছে। আবার কোনটায় তারা কাশ্মীরিদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছেন।

“তবে আমি মনে করি ভারতীয় সেনারা যে নৈতিকতা ও পেশাদারিত্বের মান সৃষ্টি করেছে, তাতে তাদের এই ঘটনার উপযুক্ত তদন্ত করা উচিত, এবং তারা তা করছেও।”

তবে মানবঢাল ব্যবহারের ঘটনায় জনরোষ বাড়ছে, এটা বুঝেই রাজ্য সরকার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে।

কেন্দ্রের বিজেপি সরকার অবশ্য মনে করছে, আত্মরক্ষার উদ্দেশ্যেই সেনারা এমন চরম রাস্তা নিয়েছেন, এ জন্য তাদের দায়ী করাটা ঠিক নয়।

দিল্লিতে বিজেপির পলিসি রিসার্চ গ্রুপের অনির্বাণ গাঙ্গুলি বিবিসিকে বলছিলেন, “সেনাধ্যক্ষ জেনারেল বিপিন রাওয়াত তো আগেই সতর্ক করেছিলেন যে জঙ্গি-দমনের কাজে সেনাবাহিনীকে বাধা দিলে অসামরিক জনতার বিরুদ্ধেও কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর এই পাথর নিক্ষেপকারীদের ইতিহাস – এরা কারা, কারা এদের মদত দেয় বা পয়সা জোগায় সে তো আমরা জানিই।”

“ভারতীয় সেনার বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ উঠলে, কিছু এদিক-ওদিক হলে তারা সঙ্গে সঙ্গে নিজেরাই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়। কিন্তু তাই বলে কেউ যদি ভাবেন কাশ্মীরে যাই ঘটুক, সেনারা নিজেদের হাত পেছনে বেঁধে রাখবে আর চোখে ঠুলি পরে থাকবে, সেটাও কিন্তু ঠিক হবে না।”

ভারত-শাসিত কাশ্মীরে যে আফস্পা বা সশস্ত্র বাহিনীর জন্য বিশেষ ক্ষমতা আইন জারি আছে, তাতে সেনা সদস্যরা আইনি রক্ষাকবচ পেয়ে থাকেন।

ফলে এই মানবঢাল ব্যবহারের ঘটনায় কোনও সেনা সদস্যের শাস্তি হবে, সেই সম্ভাবনা ক্ষীণ।

তাই কাশ্মীরে স্থানীয় মানুষের মন জয় করার যুদ্ধ যে তাদের জন্য আরও কঠিন হয়ে উঠবে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই।