একাত্তলাইভ ডেস্ক: দেশে বিবাহিত নারীদের ৮০ শতাংশ নির্যাতনের শিকার। জীবনের কোনো না কোনো সময়ে তারা স্বামীর মাধ্যমে শারীরিক, মানসিক, যৌন ও অর্থনৈতিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ‘ভায়লেন্স অ্যাগেনিস্ট উইম্যান-২০১৫’ শীর্ষক হালনাগাদ প্রতিবেদনে এই তথ্য ওঠে এসেছে।রোববার শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে বিবিএস আনুষ্ঠানিকভাবে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করে।প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১১ সালে এই হার ছিল ৮৭ শতাংশ। এ হিসাবে চার বছরে বিবাহিত নারীদের ওপর নির্যাতন কমেছে।পরিসংখ্যান ব্যুরোর মহাপরিচালক মো. আবদুল ওয়াজেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি, ইউএনএফপিএ এর বাংলাদেশ প্রতিনিধি আর্জেন্টিনা প্রিসিন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত পিয়েরে মায়েদুন, পরিসংখ্যান বিভাগের সচিব কে এম মোজাম্মেল হক অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।অনুষ্ঠানে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘নারীর প্রতি সহিংসতা একটি বৈশ্বিক সমস্যা। আসলে নারী নির্য়াতন একদম বন্ধ হবে না। তবে আরও অনেক কমিয়ে আনা সম্ভব।’প্রতিবেশী দেশ ভারতে প্রতি তিন মিনিটে একজন নারী কোনো না কোনোভাবে নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন, এমন তথ্য তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, ‘সে তুলনায় বাংলাদেশের পরিস্থিতি ভালো। তবে আমাদের আরও ভালো করার সুযোগ আছে।’বাংলাদেশে পুরুষ নির্যাতনেরও একটি জরিপ হওয়া উচিত বলেও এ সময় মন্তব্য করেন পরিকল্পনামন্ত্রী।মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি বলেন, ‘নারীর ক্ষমতায়নের জন্যই নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা কমাতে হবে।’বর্তমান সরকার নারী নির্যাতন প্রতিরোধে বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নেওয়ায় সহিংসতা আগের চেয়ে কমেছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘তারপরও অনেক চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে।’জরিপে দেখা গেছে, ২০১১ থেকে ২০১৫ এই চার বছরে বিবাহিত নারীদের ওপর যৌন নির্যাতন কমলেও শারীরিক নির্যাতন বেড়েছে। ২০১৫ সালে প্রায় ৫০ শতাংশ বিবাহিত নারী শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এই সময়ে যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ২৭ শতাংশ বিবাহিত নারী। ২০১১ সালে শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের এই হার ছিল যথাক্রমে প্রায় ৪৮ শতাংশ ও ৩৭ শতাংশ।জরিপে বলা হয়, বিভিন্ন ধরনের নির্যাতনের মধ্যে স্ত্রীর আচরণ নিয়ন্ত্রণের জন্য যে নির্যাতন করা হয় তা ১৫ শতাংশ।জরিপের তথ্য অনুযায়ী, ১৫ থেকে ৩৪ বছর বয়সি বিবাহিত নারীরা সবচেয়ে বেশি নির্যাতনে শিকার হয়েছেন। জাতীয় পর্যায় ও গ্রাম পর্যায়ে বিবাহিত নারীদের নির্যাতনের হার প্রায় কাছাকাছি। গ্রামের ৫১ দশমিক ৮ শতাংশ বিবাহিত নারী জীবনের কোনো না কোনোভাবে স্বামীর মাধ্যমে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। জাতীয় পর্যায়ে এই হার ৪৯ দশমিক ৬ শতাংশ। শহরে এই হার ৪৮ দশমিক ৫ শতাংশ। অর্থনৈতিক নির্যাতনের ক্ষেত্রেও জাতীয় ও গ্রামীণ স্তরের চিত্র প্রায় অভিন্ন। গ্রামের ১২ শতাংশ বিবাহিত নারী স্বামীর মাধ্যমে অর্থনৈতিক নির্যাতনের শিকার। শহুরে বিবাহিত নারীদের মধ্যে এই হার ১০ দশকি ২ শতাংশ। জাতীয়ভাবে এই হার ১১ দশমিক ৪ শতাংশ।জরিপে দেখা গেছে, শিক্ষিত স্বামী ও শিক্ষিত স্ত্রী উভয়ের ক্ষেত্রে নির্যাতন করার প্রবণতা এবং নির্যাতিত হওয়ার ঘটনা কম।
বিবাহিত নারীদের ৮০ শতাংশ নির্যাতনের শিকার

October 2, 2016