একাত্তরলাইভডেস্ক: দোকান আছে, কিন্তু বিক্রেতা নেই। ক্রেতারা পণ্য কিনে নির্ধারিত বাক্সে টাকা রাখছেন। বলুন তো, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কি এমন দোকানের কথা চিন্তা করা যায়? তরুণ প্রজন্মের মধ্যে সততা ও নিষ্ঠা সৃষ্টিতে বিভিন্ন স্কুলে এমন দোকান করার উদ্যোগ নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।এ দোকানের নাম রাখা হয়েছে ‘সততা স্টোর’। এ উদ্যোগের অংশ হিসেবে দেশের প্রতিটি জেলার যেকোনো একটি উপজেলায় একটি বালিকা বিদ্যালয় ও একটি বালক বিদ্যালয়ে সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় সততা স্টোর চালু করা হবে। বিক্রেতাহীন এই দোকান ক্যাম্পাসের উপযুক্ত কোনো কক্ষে স্থাপন করা হবে। এ দোকানে খাতা, কলম, পেন্সিল, ইরেজার, স্কেল, জ্যামিতি বক্স, রং পেন্সিল, চিপস, বিস্কুট ছাড়াও পরিচালনা কমিটির অনুমোদনক্রমে অন্যান্য পণ্যও রাখা হবে। সব পণ্যের দাম হবে বাজারমূল্যের সমান। এ মহৎ উদ্যোগ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ইতিমধ্যে সততা স্টোর স্থাপন ও ব্যবস্থাপনার বিষয়ে দুদক থেকে একটি নীতিমালা করা হয়েছে। এই নীতিমালা এবং বেশকিছু নির্দেশনাসহ দুদক সচিব আবু মো. মোস্তফা কামাল স্বাক্ষরিত একটি চিঠি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, মন্ত্রিপরিষদের সচিব, সব বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে এই কার্যক্রম দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। সততা স্টোর গঠন সংক্রান্ত নীতিমালার বিষয়ে দুদক সূত্রে জানা যায়, দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির গঠনতন্ত্র ও কার্যনির্দেশিকা অনুযায়ী, তরুণ প্রজন্মের মধ্যে সততা ও নিষ্ঠাবোধ সৃষ্টি করা এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে গণসচেতনতা গড়ে তোলার লক্ষ্যে দেশব্যাপী বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে ইতিমধ্যে সততা সংঘ গঠিত হয়েছে। সততা স্টোর গঠন ও কার্যপরিচালনা পদ্ধতির বিষয়ে নীতিমালায় বলা হয়েছে, বিক্রেতাবিহীন ওই দোকানের নাম হবে `সততা স্টোর`। যা স্কুল ক্যাম্পাসের উপযুক্ত কোনো কক্ষে স্থাপন করা হবে। সততা স্টোরের পুঁজির বিষয়ে নীতিমালায় বলা হয়েছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুসারে সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরামর্শক্রমে স্টোরের প্রাথমিক পুঁজি সংগ্রহ ও বিনিয়োগ করবে। সততা স্টোরে পণ্য ক্রয়ের নিয়মাবলীর বিষয়ে নীতিমালায় বলা হয়েছে, সততা স্টোরে প্রবেশের সময়ে রেজিস্টার খাকায় নাম, শ্রেণি ও রোল নম্বর লিখতে হবে। এরপর পণ্যের মূল্য তালিকা দেখে যেসব পণ্য ক্রয় করা হবে তার মূল্য সততা স্টোরে রক্ষিত ক্যালকুলেটরে হিসেব করে পরিশোধ করা হবে। ক্রেতা ছাত্রছাত্রীকে একটি কাগজে পণ্যের নাম ও টাকার পরিমাণ লিখে পণ্যের দামসহ টেবিলে রাখা খামে ভরে নির্ধারিত ক্যাশবাক্সে ফেলতে হবে। যদি চাহিদামতো পণ্য না পাওয়া যায় তবে তা প্রি-অর্ডার বুকে লিখে অর্ডার দেওয়া যাবে। সততা স্টোর পরিচালনার বিষয়ে নীতিমালায় আরো বলা হয়েছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদ ও মহানগর/জেলা/উপজেলার দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি বা সম্পাদক কর্তৃক গঠিত কমিটি এ স্টোর পরিচালনা করা হবে। তবে যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরিচালনা কমিটি নেই, সেসব প্রতিষ্ঠানে প্রধান শিক্ষক কর্তৃক মনোনীত তিন জন শিক্ষকের সমন্বয়ে গঠিত কমিটি এ স্টোর পরিচালনা করবে। সততা স্টোরের মনিটরিংয়ের বিষয়ে নীতিমালায় বলা হয়েছে, সততা স্টোরটি স্কুলের প্রধান শিক্ষকের সমন্বয়ে তিন সদস্যের গঠিত বিশেষ মনিটরিং কমিটি মনিটর করবেন। ওই মনিটরিং কমিটি প্রতিমাসে অন্তত একবার বৈঠক করে হিসাব-নিকাশ যাচাই ও ক্রয়যোগ্য সামগ্রীর তালিকা করে প্রয়োজনীয় অর্থ স্টোর পরিচালনা কমিটির কাছে দেবেন। ওই কমিটিকে এক দিন পর পর স্টোর মনিটর করতে হবে। যেখানে মনিটরিং কমিটি পণ্যের চাহিদা নির্ধারণ, নিয়মিত পণ্য ক্রয়ের ব্যবস্থা, পণ্যের গায়ে মূল্য লেবেল লাগানোর কাজ করবে। আর পণ্যের মূল্যতালিকা স্টোরের দৃশ্যমান স্থানে টাঙানো হবে। এ বিষয়ে দুদক সচিব আবু মো. মোস্তফা কামাল বলেন, আমরা চাই শিশুদের মধ্যে সততার চর্চা হোক। এটা অভ্যাসের বিষয়। শিশুদের মধ্যে সততার অভ্যাস গড়তে আমাদের এ উদ্যোগ। এটা করতে পারলে শিশুদের মধ্যে ভালো অভ্যাস গড়ে উঠবে। তিনি আরো বলেন, প্রতিটি জেলার একটি উপজেলার বালক ও বালিকা বিদ্যালয়ে সততা স্টোর চালুর জন্য দুদক থেকে অনুরোধ করা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে এর পরিধি আরো বাড়ানো হবে।
বিদ্যালয়ে হচ্ছে বিক্রেতাহীন ‘সততা স্টোর’
November 10, 2016