বিচারে বিলম্ব : বাড়ছে অপরাধ প্রবণতা

একাত্তরলাইভডেস্ক:  বিচার প্রক্রিয়ায় বিলম্বের কারণে মানুষের অপরাধ করার প্রবণতা বেড়ে যাচ্ছে। ঘটছে নির্মম ও নৃশংস ঘটনা। যার শিকার হতে হচ্ছে রিশা ও খাদিজার মত মেয়েদের, এমনটিই বলছেন বিশেষজ্ঞরা।তারা বলছেন, প্রকাশ্যে যারা খাদিজাদের ওপর নির্মম হামলার মত ঘটনা ঘটায় তাদের বিচার তাৎক্ষনিক করা উচিত। এমন শাস্তি দেওয়া উচিত যাতে কেউ ভবিষ্যতে এ ধরনের কাজ করতে সাহস না পায়।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক সৈয়দ মাহফুজুল হক মারজান বলেন, ‘বাংলাদেশে একটা অপরাধের বিচার শেষ হতে অনেক সময় লেগে যায়। বিচারের দীর্ঘসূত্রতার কারণে অপরাধী মনে করে তার কিছুই হবে না।’ খাদিজা বেগম নার্গিসের প্রসঙ্গ টেনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন বলেন, ‘এসব ঘটনায় বিচারের ক্ষেত্রে দেরি করা ঠিক না। ঘটনা যে বদরুল ঘটিয়েছে তা যেহেতু সবার জানা, সুতরাং এখনই তার বিচার করে দেওয়া উচিৎ ।’সিলেটর কলেজছাত্রী খাদিজা বেগম নার্গিসকে গত ৫ অক্টোবর স্কয়ার হাসপাতালে দেখতে যান গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ। এসময় তিনি সংবাদিকদের বলেন, ‘সমাজে যখন অবক্ষয় আসে, যখন আইনের শাসনের অভাব ঘটে তখনই এ ধরনের ঘটনা ঘটে।’বদরুলের মত লম্পটদের দ্রুততম সময়ে বিচার করার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘দৃষ্টান্ত মুলক শান্তি না হলে এ ধরনের ঘটনা ঘটতেই থাকবে। এসব ঘটনার অপরাধীদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি দিতে হবে।’গত ২৪ আগস্ট রাজধানীর কাকরাইলে ছুরিকাঘাতে নিহত হয় উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলের শিক্ষার্থী সুরাইয়া আক্তার রিশা। রিশার হত্যার সন্দেহভাজন যুবক ওবায়েদকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তিনি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। সেখানে তিনি বলেছেন, প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় তিনি রিশাকে ছুরিকাঘাত করেন।রিশার মা তানিয়া হোসেন ৮ অক্টোবর স্কয়ারে খাদিজাকে দেখতে আসেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘যদি রিশা হত্যাকারীর বিচার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে হতো, তাহলে খাদিজার এই অবস্থা হতো না। তাই সরকারের কাছে আমার দাবি, দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে খাদিজাকে কুপিয়ে জখমকারী বদরুল আলমের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি দেওয়া হোক।’২০১৫ সালের ২১ মে সাভারে চলন্ত বাসে এক নারীকে ওই বাসের চালক, হেলপার ও যাত্রীবেশী দুর্বৃত্তরা ধর্ষণের চেষ্টা করেছে বলে অভিযোগ আছে। এ ঘটনায় বাধা দিতে গিয়ে দূর্বৃত্তদের প্রহারে আহত হয়েছেন ওই নারীর স্বামী। দূর্বৃত্তরা দম্পতির কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে মোবাইল ফোন ও নগদ টাকা। এ ঘটনায় বাসটি জব্দ করে পুলিশ।গত ২০ মার্চ কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনুকে সুরক্ষিত সেনানিবাস এলাকায় নৃশংসভাবে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। কিন্তু ঘটনার কোন কুলকিনারা হয়নি এখনো।গত ৬ অক্টোবর ফরিদপুরের ভাঙ্গায় সরকারি কেএম কলেজে প্রেমের প্রস্তাবে সাড়া না পেয়ে মানবিক বিভাগের এক ছাত্রীকে ছুরিকাঘাতের চেষ্টা করেছে ওই কলেজেরই ছাত্র সবুজ মাতুব্বর ও সুজন মোল্লা। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালত ওই দুই ছাত্রকে এক বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন।দেখা যাচ্ছে একের পর এক এ ধরনের নির্মম ঘটনা ঘটেই চলছে। সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, ‘এসব ঘটনাকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা মনে করলে ভুল হবে। এ ধরনের ঘটনা গ্রামে-গঞ্জে প্রতিনিয়ত ঘটছে। সব খবর হয়তো এভাবে আসে না। গ্রামে গঞ্জে অনেক মেয়ে স্কুল-কলেজে যেতে পারে না, এধরনের লম্পট ছেলেদের কারণে।’খাদিজার ওপর যখন হামলা হয় তখন অনেকে দর্শকের মত দাঁড়িয়ে দেখেছেন, কেউ বা ছবি তুলেছেন, ভিডিও করেছেন। কিন্তু কেউ তাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসে নি।এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. নেহাল করীম বলেন, যারা প্রথম থেকে ভিডিও করেছে তারা প্রথমে ধাওয়া দিলে খাদিজার এতো ক্ষতি হতো না। পরে তো বদরুলকে জনগনই ধরেছে। যারা দর্শক হিসেবে দাঁড়িয়ে দেখছেন তারা খারাপ কাজ করেছেন।মানুষের সাহস কিছুটা কমেছে উল্লেখ করে জনগনের এগিয়ে না আসার কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, একদিকে সে ছাত্রলীগের নেতা। অন্যদিকে এধরনের ঘটনায় মামলার পরে সাক্ষ্য দেওয়া, দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়ায় বারবার আইনজীবীর মুখোমুখি হওয়া, এটাকে মানুষ খুবই বিড়াম্বনা মনে করে।