বরুড়া,বুড়িচং,ব্রাহ্মণপাড়ায় তীব্র লোডশেডিং: বিদ্যূৎ সংকটে নাকাল তিন উপজেলার বিপূল সংখ্যক মানুষ

এম এস শফি : সরকার সারাদেশের ন্যায় কুমিল্লায় বিদ্যূৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখলেও পল্লীবিদ্যুতের দায়িত্বগীনতার কারনে প্রতিদিন কুমিল্লা বরুড়া,বুড়িচং ও ব্রাহ্মণপাড়ার বিভিন্নস্থানে দিনে-রাতে সমানে চলছে লোড শেডিংয়ের নামে মানুষের ভোগান্তি। কোন ঘোষনা ছাড়াই এভাবে বিদ্যূৎ বিভ্রাটে নাকাল বিপুল সংখ্যক মানুষ। অভিযোগ কেন্দ্রগুলোতে লোডশেডিংয়ের কারণ জানতে একাধিকবার মোবাইল করেও কোন সন্তোষজনক উত্তর পাওয়া যায়নি।
কুমিল্লার পাশাপাশি ৩ উপজেলা বরুড়া,বুড়িচং ও ব্রাহ্মণপাড়া। প্রতিদিন এই ৩টি উপজেলার কোথাও না কোথাও একাধিকবার লোড শেডিং হচ্ছে। কখনো সকাল,দুপুর কখনোবা সন্ধ্যা বা রাতে দীর্ঘসময় ধরে বিদ্যূৎ বিহীন থাকে এইসকল উপজেলার গ্রামের পর গ্রাম। স্থানীয় বিভিন্ন সুত্রে পাওয়া তথ্যে জানা যায়,কুমিল্লা পল্লী বিদ্যূৎ সমিতি-২ এর আওতায় উল্লেখিত উপজেলা সমুহ। এসকল উপজেলার প্রায় সকল ইউনিয়নে রয়েছে বিদ্যূৎ বিভাগের অভিযোগ কেন্দ্র। গ্রাহকরা যখনই কোন সমস্যাগ্রস্থ হয় তখনই ওই সকল অভিযোগ কেন্দ্রগুলোতে ভীড় করে বা মোবাইল ফোনে সমস্যা জানায়। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যখনই কোনস্থানে বিদ্যূৎ সরবরাহ বিঘিœত বা লোড শেডিং হয় তখন কারণ জানতে বিদ্যূৎ গ্রাহকরা অভিযোগকেন্দ্রগুলোতে মোবাইল ফোন করলেও সেখান থেকে কোন সন্তোষজনক জবাব আসেনা। কখনোবা একাধিকবার মোবাইল করেও কোন সাড়া পাওয়া যায়নি। এমনও দেখা গেছে বিদ্যূৎ চলে যাবার পর অভিযোগ কেন্দ্রগুলোতে ফোন দেওয়ার পর হয়তো মোবাইল ফোন বন্ধ না হয় অপর প্রান্ত থেকে উত্তর আসে রাতে যাওয়া যাবে না ,সকালে লোকজন গিয়ে সমস্যা বের করে সমাধান করবে। বুড়িচং উপজেলার মোকাম ইউনিয়নের নিমসার,কাবিলা,কোরপাই,আবিদপুর,মিথলমা,মনঘাটা,কাকিয়ারচর,লোয়ারচর,পরিহলপাড়া,কেদারপুর,পাচকিত্তা,রুপদ্দি,শিকারপুর,গজারিয়া,বারিকোটা,বারাইল,চাঁনগাছাসহ আশপাশের বিভিন্ন গ্রামের একাধিক নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক লোক জানান,প্রতিদিনই সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ৩/৪ বার লোডশেডিং হচ্ছে। কখনো কখনো এঘন্টারও কম সময়ে বিদ্যূৎ ফিরে এলেও মাঝে মাঝে শোডশেডিং ৩/৪ ঘন্টা দীর্ঘ হয়। একইভাবে ময়নামতি ইউনিয়নের নামতলা,গন্ডুল,চাঁনসার,শাহদৌলতপুর,দেবপুর,বাজেবাহেরচর,গক্ষুল,মিরপুর,হরিণধরা,সিন্ধুরিয়াপাড়া,ফরিজপুর,কাঁঠালিয়া,ভারেল্লা (দক্ষিন) ইউনিয়নের রামপুর,এতবারপুর,শোভারামপুর, সৌন্দ্রম,ইসলামপুর, মজলিসপুর,মাতলারচর,গোবিন্দপুর ভারেল্লা (উত্তর) ইউনিয়নের কুসুমপুর,রামচন্দ্রপুর, কংশনগর,পশ্চিমসিংহ, বরুড়ার বাতাইছড়ি,কুমারপুস্কুরুণী,যশপুর,পদুয়ারপাড়,পেনুয়া,পাকামোড়া,কেমতলী,বগামাইরা,ঝালগাঁও,লক্ষিèপুর,ভবানীপুর,খোশবাঁশ,শিলমূড়ি,শরাফতি,রাজাপুর,মুগুজি,পুরাতন কাদবা,কসমি,এগার গ্রাম,আমড়াতলী,হরিপুর,মহেষপুর,জয়নগর,হোসেনপুর,রামম্হোন এসকল গ্রামগুলোতেও প্রতিদিন চলছে বিদ্যুৎ বিভ্রাট। ঘন্টার পর ঘন্টা বিদ্যূৎ বিহীন থাকছে এসকল গ্রাম। এদিকে বরুড়ার কেমতলী গ্রামের বাসিন্দা মাসুদ রানা বলেন,বরুড়ার মতো বিদ্যূৎ বিহীন উপজেলা মনে হয় বাংলাদেশে নেই। এখানে আকাশ কালো হলেই বিদ্যূৎ চলে যায়। কখন আসবে সেটাও কেউ জানেনা।
দায়িত্বশীল একাধিক সুত্র জানায়,১৪/১৫ লাখ জনসংখ্যা অধ্যূষিত উল্লেখিত তিনটি উপজেলায় প্রতিদিন লোডশেডিং হচ্ছে একাধিকবার। বিদ্যূৎ অভিযোগ কেন্দ্রগুলোতে তখন মোবাইল ফোনে লোডশেডিং এর বিষয়ে জানতে চাইলে অনেক সময় মোবাইল রিসিভড্ করছেনা। বুড়িচং এর পীরযাত্রাপুর ইউনিয়নের এক জনপ্রতি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান,সন্ধ্যার পর ৪ ঘন্টাও বিদ্যূৎ থাকেনা এই ইউনিয়নের গ্রামগুলোতে। একই অভিযোগ পীরযাত্রাপুর ইউনিয়নের গোবিন্দপুর,কণ্ঠনগর,শ্রীপুর,বাহেরচর,কুমাল্লা,সাদকপুর,শামপুর গ্রামেও বিদ্যূতের একই অবস্থা। পীরযাত্রাপুর ইউনিয়নের যাত্রাপুর গ্রামের ছাত্রলীগ নেতা সুমন বলেন,আগে শুনতাম বা দেখতাম মাঝে মাঝে বিদ্যূতের লোডশেডিং হতো। এখন শুনি মাঝে মাঝে বিদ্যূৎ আসে। মোকাম ইউনিয়নের নিমসার এলাকার ব্যবসায়ী জাকির বলেন,লোডশেডিং’র কারনে ব্যবসা বানিজ্য স্থবীর হয়ে পড়েছে। সন্ধ্যার পর ব্যবসা বলে কিছু থাকে না বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারনে। পল্লী বিদ্যূৎ সমিতি( উত্তর রামপুর)-২ এর জেনারেল ম্যানেজার জাহাঙ্গীর আলম জানান,জেলার বুড়িচং ও ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলায় কমপক্ষে ২০ মেগাওয়াটেরও বেশী বিদ্যূৎ প্রয়োজন। চাহিদার সবটুকু সরবরাহ হচ্ছে বলেও জানা যায়। এদুটি উপজেলায় গ্রাহকের সংখ্যা রয়েছে প্রায় ৭০হাজার। তিনি আরো বলেন,দিনের বেলায় উন্নয়নমূলক ও ম্যান্টেনেন্সের কাজ করার কারনে কখনো কখনো সরবরাহ বন্ধ থাকে। এতে কিছু সময় বিদ্যূৎ সরবরাহ বন্ধ থাকে। তাছাড়া সন্ধ্যার পর কিছুটা লোড শেডিং হচ্ছে জানিয়ে তিনি আরো বলেন, গ্রীডে ওভার লোড জাতীয় কারণে কিছুটা লোড শেডিং হচ্ছে। এদিকে বরুড়া এরিয়ার চান্দিনা পল্লী বিদ্যূৎ সমিতি-১ কার্যালয়ে একাধিকবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করেও রিসিভড্ না করার কারনে বরুড়ার বিদ্যূৎ চাহিদা বা গ্রাহকের সংখ্যা জানা যায়নি।