বরগুনার ক্রোক কেরামতিয়া মাদ্রাসার টাকা আত্মসাতের অভিযোগে সুপার বরখাস্ত

বরগুনা সংবাদদাতা :বরগুনা সদর উপজেলার ক্রোক কেরামতিয়া ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার মোঃ মাহবুবুর রহমানকে অর্থ আত্মসাত ও জাল জালিয়াতির মাধ্যমে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পাদনসহ নানা অনিয়মের অভিযোগে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৬ তারিখ মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভায় সুপারকে বরখাস্তের এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তার বিরুদ্ধে মাদ্রাসার বিভিন্ন উৎস থেকে আয় হওয়া প্রায় ২৩ লক্ষাধিক টাকা অবৈধ পন্থায় আত্মসাত করিয়াছেন এমন অভিযোগ করেছে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। মাদ্রাসা সূত্রে জানাগেছে, মাওঃ মাহবুবুর রহমান ১৯৮৬ সালে ক্রোক কেরামতিয়া দাখিল মাদ্রাসায় সহকারী মৌলভী হিসেবে যোগদান করেন। এরপর ১৯৯১ সালের পহেলা জুলাই মাদ্রাসা কর্তৃকপক্ষ তাকে সুপার পদে পদায়ন করেন। কিন্তু তিনি নিয়মিত ছাত্রাবস্থায় তথ্য গোপন করে সহকারী মৌলভী হিসেবে যোগদান করেন। তার নিয়োগের বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিলে তিনি ১৯৮৫ ও ১৯৮৬ সালের শিক্ষক হাজিরা খাতা গোপন করে সিডরে হারিয়ে গেছে বলে একটি মিথ্যা অজুহাত তুলে ধরেন। সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, মাদ্রাসার রেজিউলেশন বইতে লেখা আছে ২২-১২-১৯৮৫ খ্রি. তারিখে সহকারী মাওঃ মাহবুবুর রহমান, সহ-শিক্ষক মো. হারুনুর রশিদ এবং ইবতেদায়ী প্রধান মো. গোলাম সরোয়ারকে নিয়োগের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় এবং ২৫-১২-১৯৮৫ খ্রি. তারিখে যোগদানের জন্য চিঠি প্রেরণ করা হয়। তিনজনই ১-১-১৯৮৬ খ্রি. তারিখে মাদ্রাসায় যোগদান করেন। এবং রেজিউলেশন খাতার তারিখ গুলো ওভার রাইটিং করা। তার যোগদানের তারিখ দেখিয়েছেন এক বছর পর ১-১১-১৯৮৬ খ্রি. তারিখ। ঐ যোগদানের নিয়োগ পত্রটি কম্পিউটার কম্পজে মাধ্যমে অত্র মাদ্রাসার সহ-মৌলভী শিক্ষক আঃ আলীমের তার হাতে লেখিয়ে জালিয়াতি করেছে। যেটি কমিটির সামনে সীকার করেণ ঐ শিক্ষক আঃ আলীম।
মাদ্রাসার আয়ব্যয়ের হিসাব পরিচালনার একাউন্ট খোলা হয় যা পরবর্তীতে সুপারের চাকুরিকালীন একক স্বাক্ষরে পরিচালিত হয়। এ সুযোগে মাদ্রাসা সুপার ম্যানেজিং কমিটিকে অবমূল্যায়ন করে রেজিলিউশন ছাড়াই বিভিন্ন ব্যয় দেখানোর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের ৭ লাখ ৬১ হাজার ১৩ টাকা আত্মসাত করেন। এরমধ্যে রয়েছে পিএমটিভূক্ত শিক্ষার্থীরা দাখিল পাসের পরে সেকায়েপ থেকে ২০১২ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ২৭ হাজার টাকা, সহ-শিক্ষক, সহ-মৌলভী এবং ইবতেদায়ী প্রধানের কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে ১ লাখ ৭৮ হাজার টাকা, মোটর সাইকেল ও মোবাইল ফোনের খরট বাবদ ৪৮ হাজার টাকা, উপবৃত্তি ও টিউশন ফি বাবদ ১৯৯৪ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত মোট বরাদ্দের শিক্ষক ও কর্মচারীর স্থানীয় বেতন বাবদ না দিয়ে এক লাখ ১৭ হাজার ৫ শত টাকা এবং ভূয়া ব্যয় ভাউচার দেখিয়ে এক লাখ ৮৯ হাজার ৯৩২ টাকা, এফডিআর এর মুনাফার ২০ হাজার ৯৫৩ টাকা, প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব জমি থেকে ২৩ বছরে ৯৩ হাজার ৩৭১ টাকা, এতিমখানার নিজস্ব জমি থেকে ২৩ বছরে ৮৬ হাজার ২৫০ টাকাসহ মোট ৭ লাখ ৬১ হাজার ১৩ টাকা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন শিক্ষক জানিয়েছেন অন্যান্য শিক্ষক নিয়োগে মাদ্রাসার উন্নয়নের ফান্ডের কথা বলে শিক্ষকদের কাছ থেকে এবং সরকারি বিভিন্ন অনুধান থেকে প্রতিষ্ঠান নামে বরাদ্দসহ ১৫ লক্ষাধিক টাকা নিয়ে ফান্ডে জমা না দিয়ে আত্মসাত করেছেন।
মাদ্রাসা সুপার মাওঃ মাহবুবুর রহমান তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমাকে বিধিবর্হিভূত অন্যায়ভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। মাদ্রাসা সভাপতি ফাতেমা খাতুন বলেন, জৈনপুরী হজরত পীর সাহেবের নামে প্রতিষ্ঠিত ক্রোক কেরামতিয়া ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার সার্বিক দ্বায়িত্ব বিশ্বাস করে সুপার মাওঃ মাহবুবুর রহমানকে দেয়া হয়েছিল। আমি সভাপতির দ্বায়িত্ব নেয়ার পর অর্থআত্মসাতসহ বিভিন্ন অনিয়ম নজরে আসলে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয় । দূর্নীতিরি বিষয়টি নীরিক্ষা কমিটির রিপোর্টেও উল্লেখ করা হয়েছে। জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সুকুমার চন্দ্র হালদার বলেন, সুপারের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ পেয়েছি তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে ।