নিজস্ব প্রতিবেদক
ছয় বছর আগে সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিহত কিশোরী ফেলানী হত্যার বিচার দ্রুত শেষ করার উদ্যোগ নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে তার পরিবার। তারা অভিযোগ করেন, কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসকসহ কেউই তাদের খোঁজ রাখেন না। এমনকি ঘটনার পর পর তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন বাড়িতে গিয়ে তাদের (ফেলানীর পরিবারে) দায়িত্ব নেওয়ার অঙ্গিকার করলেও গত ৬ বছরে কখনো কোনো খোঁজ নেননি।
ফেলানী হত্যার ষষ্ঠ বার্ষিকীতে শনিবার রাজধানীর শিশু পরিষদ মিলনায়তনে নাগরিক পরিষদ নামের একটি সংগঠন আয়োজিত এক মুক্ত আলোচনায় তারা এই দাবি করেন।
ফেলানীর মা জাহানারা বেগম মেয়ের কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। ঘটনার সময় তিনি ভারতে ছিলেন জানিয়ে জাহানারা বলেন, ‘ফেলানীকে বিয়ে দিতে তার বাবার সঙ্গে পাঠিয়েছিলাম। ঘটনার তিনদিন পর মেয়ের মৃত্যুর বিষয়টি জানতে পারি। আমি চাই সীমান্তে যেন গুলি না চলে। কোন মায়ের সন্তানকে যেন গুলি খেয়ে মারা যেতে না হয়। এজন্য ফেলানী হত্যার বিচার দ্রুত যেন শেষ হয় সেই উদ্যোগ নিতে সরকারের কাছে অনুরোধ জানাই।’
নাগরিক পরিষদের আহ্বায়ক মো.শামসুদ্দীনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে নাগরিক পরিষদের নারী বিষয়ক সম্পাদক মুশতারি বেগম, জাগো বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি বাহরাইনে সুলতান বাহার, মানবাধিকার কর্মী মঞ্জুর হোসেন ঈসা, গণতান্ত্রিক লীগের সভাপতি হারুনুর রশীদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। নাগরিক পরিষদের আহ্বানে কুড়িগ্রাম থেকে ঢাকার অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আসেন ফেলানীর মা জাহানারা বেগম ও বাবা নুরুল ইসলাম।
অনুষ্ঠানে মো. শামসুদ্দীন ৭ জানুয়ারিকে ফেলানী দিবস হিসেবে ঘোষণা করার আহ্বান জানান। তিনি অভিযোগ করেন, ফেলানী হত্যার বিচার নিয়ে দীর্ঘসূত্রতা তৈরি হচ্ছে। ফেলানী হত্যা মামলা নিয়ে এখন সেখানকার আদালতে দুটো মামলা চলছে। একটি মামলা হলো রিট মামলা ও অন্যটি করেছে মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চ ‘মাসুম’ নামে ওই দেশের একটি মানবাধিকার সংগঠন। সেখানে তারা ফেলানী হত্যা মামলার পুনঃতদন্ত দাবি করেছেন। এতে মামলা নিস্পত্তিতে দীর্ঘসূত্রতা তৈরি হচ্ছে। চলমান দুটো মামলা সমন্বয় করা সম্ভব হলে দ্রুত নিস্পত্তি করা সম্ভব হতো বলেও মনে করেন তিনি।
২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীর অনন্তপুর সীমান্ত হয়ে বাবার সঙ্গে বাংলাদেশে ঢোকার সময় বিএসএফ সদস্যদের গুলিতে প্রাণ হারায় কিশোরী ফেলানী। পরে বাংলাদেশ সরকার ও মানবিকার সংস্থাগুলোর কড়া প্রতিবাদে বিচারের ব্যবস্থা হলেও ২০১৩ সালের ৬ সেপ্টেম্বর বিএসএফের আদালত আসামি বিএসএফের কনস্টেবল অমিয় ঘোষকে বেকসুর খালাস দেয়। ফেলানীর পরিবারের আপত্তিতে বিএসএফ মহাপরিচালক রায় পুনর্বিবেচনার আদেশ দিলে ২০১৪ সালের ২২ সেপ্টেম্বর নতুন করে শুনানি শুরু হয়। কিন্তু পুনর্বিচারে একই আদালত তাদের পুরনো রায় বহাল রাখে।