ফুটপাত দখলমুক্ত করতে কঠোর পদক্ষেপ নিন

রাজধানীর ফুটপাত নিয়ে রীতিমতো ইঁদুর-বিড়াল খেলা চলছে। উচ্ছেদের ২৪ ঘণ্টা না পেরুতেই দখল হয়ে যাচ্ছে ফুটপাত। দখলকারীদের এ ধরণের শক্তিপ্রদর্শণ এই ইঙ্গিত দেয় যে, তাদের পেছনে প্রশাসনের প্রচ্ছন্ন সহযোগিতা রয়েছে।

গত মাসে রাজধানীর গুলিস্তান এলাকায় ফুটপাত দখলমুক্ত করতে অভিযানে নেমেছিলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) কর্মকর্তারা। এ নিয়ে অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটেছে। তবে এরপরও আমরা দেখলাম, একদিন না যেতেই আবারও ফুটপাত হকারদের দখলে চলে গেছে। ডিএসসিসির মেয়র এরপর অভিযোগ করেছেন, গুটিকয়েক পুলিশ সদস্যের কারণে রাজধানীর ফুটপাত দখলমুক্ত করা যাচ্ছে না। তারাই ফুটপাতে হকার বসতে সহযোগিতা করেন। খোদ মেয়রের গলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে এ ধরণের অভিযোগ যেমন আশ্চর্যের তেমনি উদ্বেগজনকও বটে।

রাজধানীর রাস্তা ও ফুটপাত দখলমুক্ত করতে আদালতের নির্দেশনা অনুসরণ না করায় রোববার চার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) প্রতি আদালত অবমাননার রুল দিয়েছেন হাইকোর্ট। প্রায় চার বছর আগে একটি সংগঠনের করা রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানিতে আদালত অন্তর্বর্তীকালীন আদেশে জিরো পয়েন্ট থেকে সদরঘাট পর্যন্ত এলাকার ফুটপাত বা রাস্তার ওপর বালু, রড বা যে কোনো পণ্য রাখা, ভ্যানগাড়ি এবং ঠেলাগাড়ি রাখা, রাস্তার পাশে দোকানের পণ্য ফুটপাত বা রাস্তা দখল করে না রাখা, দোকান ও ফেরিওয়ালা এবং ফলের দোকান যেন না বসতে পারে সেজন্য ব্যবস্থা নিতে বলেছিলেন। ওই রায়ের পরও দখলমুক্ত হয়নি রাস্তা ও ফুটপাত। এ বিষয়ে চার থানার ওসিকে আইনি নোটিশ দেওয়া হলেও জবাব না আসায় আবারও আদালতের দ্বারস্থ হতে হয়েছে সংগঠনটিকে।

রাজধানীতে ১৬৩ কিলোমিটার ফুটপাত রয়েছে। এর মধ্যে ১০৮ কিলোমিটার দখল করে রেখেছে প্রায় দুই লাখ হকার। জনবহুল রাজধানীর প্রধান সমস্যাগুলোর অন্যতম যানজট। অধিকাংশ স্থানে সড়কের পাশে দোকান বসানোয় গাড়ি চলাচল বাধাগ্রস্ত হয়। আবার যানজটের কারণে পথচারীরা ফুটপাতে হেঁটে যাবেন সে সুযোগও নেই। পথচারীদের ভোগান্তিতে রেখে ফুটপাতে ব্যবসা করা কোনোভাবেই বৈধ হতে পারে না। ফুটপাতের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের রুটি-রুজিতে আঘাত আসাও সমর্থণযোগ্য নয়। এসব ব্যবসায়ীদের পুর্নবাসনের ব্যবস্থাও নিশ্চিত করতে হবে। কিন্তু আমরা লক্ষ্য করেছি, অবৈধ আর্থিক সুবিধা গ্রহণের মাধ্যমে ফুটপাতে হকারদের সমস্যাটিকে জিইয়ে রাখা হচ্ছে দিনের পর দিন। উপরন্তু দখলের পরিধি দিনের পর দিন বিস্তৃত হচ্ছে।

আমরা আশা করি, ফুটপাত নিয়ে রাজনীতির পরিবর্তে জনকল্যাণে তা দখলমুক্ত করার উদ্যোগ নেবে সরকার। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যেসব সদস্যের বিরুদ্ধে ফুটপাত নিয়ে অনৈতিক লেনদেনের অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে।