কে. এম. রুবেল, ফরিদপুর
ফরিদপুরে চলতি বছর বানিজ্যিক ভাবে শুরু হয়েছে ড্রাগন ফল চাষ। গত দুই বছর আগে পরীক্ষামূলক ভাবে ড্রাগন চাষ শুরু করেন কিছু চাষী। পরীক্ষা মূলক ভাবে ড্রাগন ফল চাষ করে ব্যাপক লাভবান হওয়ায় চলতি বছর জেলার নগরকান্দা উপজেলায় ব্যাপক ভাবে শুরু হয়েছে ড্রাগন চাষ। বর্তমানে নতুন ফল হিসেবে ড্রাগন খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ফরিদপুর জেলায়। এ উচ্চফলনশীল ও প্রচুর পুষ্টিগুণ সম্পন্ন ড্রাগন ফলের চাষ হচ্ছে এখন ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায়। ড্রাগন ফল চাষের অনুকূল আবহাওয়া ও উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় নগরকান্দা উপজেলার কৃষকদের কাছে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ড্রাগন ফলের চাষ। দাম ও চাহিদা ভালো থাকায় ড্রাগন ফলের চাষ ছড়িয়ে পড়ছে ফরিদপুর জেলার সর্বত্র।
ড্রাগন ফল ভিয়েতনামের জাতীয় ফল হলেও সম্প্রতি সময় বাংলাদেশে এর ব্যাপক আবাদ হচ্ছে। ক্যাকটাস প্রজাতির বিদেশি এ ফল বাংলাদেশে চাষের উপযোগী হওয়ায় ব্যাপক হারে ড্রাগন ফল চাষ শুরু হয়েছে। লাল ড্রাগন ফল (রঙিন শাঁস) বেশি চাষ হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর এর সহযোগিতায় জেলার নগরকান্দা উপজেলায় চলতি বছর ২৫জন কৃষক বানিজ্যিক ভিত্তিতে শুরু করেছেন ড্রাগন ফলের চাষ। চারা রোপনের এক বছরের মাথায় ফল পাওয়াগেছে। যেসব জমি পূর্ণ সূর্যলোক পায়, বর্ষায় পানি উঠে না বা স্যাঁতসেঁতে থাকে না এমন স্থানে ড্রাগন ফলের চাষের উপযোগী। বাগান করার এক বছরের মধ্যে গাছে ফল ধরতে শুরু করেছে। এক একটি ফলের ওজন ২০০ গ্রাম থেকে ৩০০ গ্রাম পর্যন্ত হয়ে থাকে। একটি পূর্ণাঙ্গ গাছ থেকে ১০০ থেকে ১৩০টি পর্যন্ত ফল পাওয়া যাবে। সঠিক পরিচর্যা করতে পারলে একটি গাছ হতে ৪০ বছর বয়স পর্যন্ত ফলন পাওয়া যাবে। উৎপাদিত ড্রাগন ফল বিক্রি হচ্ছে। খুবই মিষ্টি ও টক-মিষ্টি স্বাদের ড্রাগন ফলে প্রচুর স্বাস্থ্য উপকারিতা ও প্রসাধনী গুণ থাকায় এর ব্যাপক চাহিদা দেখা যাচ্ছে।
নগরকান্দা উপজেলার ড্রাগন চাষী বিমল রায় জানায়, গতবছর আমি ছোট একটি বাগান করেছিলাম। নগরকান্দা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আশুতোষ কুমার বিশ্বাস এর পরামর্শে নতুন এই ফলের বাগান করে ব্যাপক ভাবে লাভবান হই। আর সেজন্য আমি চলতি বছর বড় আকারে ড্রাগন বাগান করেছি। একন আমি নেজেই চারা উৎপাদন করে নিজের বাগানে রোপন করছি। আমার বাগান দেখে এলাকার অনেকেই নতুন বাগান করছে। চলতি বছর আমার বাগানে প্রচুর ড্রাগন ধরেছে। এরই মাছে কিছু ফল বিক্রিয় করেছি। এই ফল বিক্রয় করতে আমার বাজারেও যাওয়া লাগেনা বাগান থেকে এসে নিয়ে যায়। আমার বাগানে এখন প্রচুর ড্রাগন ধরেছে। এখনও অনেক গাছে ফুলে ফুলে ভোওে গেছে। আমি আসা করছি চলতি বছর ব্যাপক লাভবান হব। আর ড্রাগন বাগানে আমি অন্য ফসল করতে পারিছি। এই ফলে কোন পোকা-মাকড় আক্রমন করে না। আর সেজন্য এটি একটি বিষ মুক্ত ফল।
বেকার যুবক সরদার অহিদুজ্জামান বলেন, ড্রাগন চাষে ব্যাপক সফলতা দেখে আমি চলতি বছর ১২৫টি চারা রোপন করেছি। চারা গুরো বেঁচে গেছে ও চারাগুরো পিলারে উঠেগেছে। আশা করছি চলতি বছরই কিছু গাছে ফল আসবে।
এদিকে নগরকান্দা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আশুতোষ কুমার বিশ্বাস বলেন, এটি ভিয়েত নামের জাতীয় ফল। কিন্তু বাংলাদেশেএর সম্ভাবনা খুব বেশী। যেখানে অন্যান্য দেশে দেড় বছর বা দুই বছরে ড্রাগন পাওয়া যায় না কিন্তু আমাদের দেশে একবছরের মধ্যে ড্রাগন ফলাতে সক্ষম হয়েছি। কৃষকরা এ ফল চাষ করে খুশি। এই ফল বর্তমানে ডাক্তাররাও পেসক্রাই করছে ডায়াবেটিকস ও ব্লাড কোলেষ্ট্রোল উচ্চ তাদেরকে এই ফল খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। চলতি বছর ব্যাপক ভাবে নগরকান্দা উপজেলায় ড্রাগন ফলের চাষ শুরু হয়েছে। তিনি আরও বলেন অনেকে বাড়ির সাদেও ড্রাগন চাষ করছেন। সঠিক পরিচর্যা করলে ৪০বছর পর্যন্ত ফল পাওয়া যাবে এবং কৃষক লাভবান হবেন।
সরকারি সহযোগিতা ও সঠিক মূল্য পেলে আগামী এঅঞ্চলে ড্রাগন ফল চাষ আও বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করছেন এ অঞ্চলের কৃষকেরা।