ফরিদপুরে আমন ধানের বাম্পার ফলন।। কৃষকের মুখে হাঁসি

কে. এম. রুবেল, ফরিদপুর: ফরিদপুর জেলায় চলতি বছর আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। বাজারে ধানের মূল্য বেশী পাওয়ায় কৃষকের মুখে হাঁসি। কম খরচে অধিক ফলন পেয়েছে এবছর ফরিদপুর অ লের কৃষকেরা। চলতি বছর জেলার বেশ কিছু জমিতে রাইস প্লান্টার মেশিন এর সাহায্যে ধান রোপন করায় কৃষকের উৎপাদন খরচ বিগত বছরের চেয়ে অনেক কম হয়েছে। এছাড়াও আমন মৌসুমে ধান উৎপাদনের জন্য বাড়তি স্বেচ দেওয়ারও প্রয়োজন হয়নি।
চলতি আমন মৌসুমে নিরাপদ ফসল উৎপাদনের লক্ষে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরামর্শে কৃষকেরা ধান ক্ষেত পোকার আক্রমন থেকে রক্ষা করার জন্য ধান ক্ষেতে ডাল পারসিং করে পোকা দমন ও আলোর ফাঁদ দিয়ে ক্ষতিকর পোকা চিহ্নিত করেছেন। পাসিং এর ফলে ধানের ফলনও বৃদ্ধি পেয়েছে।
চলতি বছর ফরিদপুর জেলার সদর উপজেলা, বোয়ালমারী, সদরপুর, চরভদ্রাসন, নগরকান্দা ও মধুখালী উপজেলায় আমন ধানের আবাদ হয়েছে। আগাম জাতের আমন ধান পেকে সোনালী আকার ধারণ করেছে। এখন চলছে ধান কাটা ও মাড়াই কাজ। ধান কাটা নিয়ে ব্যস্ত সময় পারকরছে কৃষকেরা। বসে নেই কৃষাণীরাও তারাও ব্যস্ত আছে ধান উড়ানো ও শুকানোর কাজে। আগাম জাতের আমন ধান কৃষক ঘরে তুলছেন।
কৃষকরা জানিয়েছে চলতি মৌসুমে ১মন ধান উৎপাদন করতে খরচ হয়েছে ৫শ থেকে সাড়ে ৫শটাকা। আর বাজারে এখন ১মন ধান বিক্রি হচ্ছে ৭শ থেকে সাড়ে ৭শ টাকা। কৃষকরা ধানের মূল্য এক হাজার টাকা দাবী করেছেন।
কৃষক আবুল কালাম বলেন, ধানের ফলন ভাল হয়েছে। এখন দামও ভাল পাচ্ছি। কিন্তু কিছুদিন পর ধানের মূল্য কমে যাবে। তখন বমবদের উৎপাদন খরচও উঠবেনা। তিনি আখেপ করে বলেন, সারাজীবন শুনে আসছি সরকার ধান ক্রয় করে। কিন্তু কার কাছ থেকে সরকার ধান ক্রয় করে? আমি ৩০বছর ধরে কৃষিকাজ করি আমি আজ পর্যন্ত কেজি ধানও সরকারের কাছে বিক্রি করতে পারিনি। আমি চাই সরকার সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ধান ক্রয় হরুক। কৃষকের কাছ থেকে ধান ক্রয় করলে কৃষক উপকৃত হবে।
এদিকে ফরিদপুর সদর উপজেলার কৃষিকর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. আবুল বাসার মিয়া বলেন, চলতি বছর আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। কৃষকরা এবার কম খরচে অধিক ফসল ঘরে তুলছেন। তিনি বলেন, কৃষকদের কথা চিন্ত করে বর্তমান সরকার কৃষকদের বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতা করেছে। চলতি বছর অতি বৃষ্টি জনিত কারনে আমন মৌসুমের শুরুতে সদর উপজেলার কিছু এলাকা ক্ষতিগ্রস্থ হয়। ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকরা যাতে তাদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারেন সে জন্য সরকারের পক্ষ থেকে কৃষকদের বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ, বিনামূল্যে বীজ, সারসহ সকল ধরনের সহযোগিতা করা হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর ফরিদপুর অ লের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ কিংকর চন্দ্র দাস বলেন, চলতি বছর ফরিদপুর অ লে ১লাখ ২৯হাজার ৬শ হেক্টোর জমিতে আমন ধানের আবাদ হয়েছে। যা গত বছরের চেয়ে প্রায় ১০হাজার হেক্টোর জমিতে বেশী আবাদ হয়ছে। তিনি জানান চলতি বছর ধানের উৎপাদন খরচ বিগত বছরের চেয়ে অনেক কম হয়েছে। কৃষিতে যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে কৃষিতে আধুনিক যন্ত্র ব্যবহার করা ফলে উৎপাদন খরচ অনেক কমেগেছে। ফলে কৃষক বেশী লাভবান হচ্ছেন।
এদিকে বুধবার বিকেলে সদর উপজেলার মাচ্চর ইউনিয়নের শিবরামপুর মাঠে খামার যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে ফসল উৎপাদন (২য় পর্যায়ে) এর আওতায় রিপার যন্ত্রের মাধ্যমে আমন ধান কর্তন উদ্বোধন করেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ফরিদপুর অ লের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ কিংকর চন্দ্র দাস। এসময় উপস্থিত ছিলেন, কৃষিবিদ গোপাল কৃষ্ণ দাস, সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. আবুল বাসার মিয়া, আবুল কালাম, শহিদুল ইসলাম ও শতাধিক কৃষক ও কৃষাণী।