‘প্রধানমন্ত্রীর একক নির্বাহী ক্ষমতায় ভারসাম্য আনা হবে’

একাত্তরলাইভ ডেস্ক : বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে সংবিধান সংশোধন করে প্রধানমন্ত্রীর ‘একক নির্বাহী ক্ষমতা’র ভারসাম্য আনবে।

রাজধানীর হোটেল ওয়েস্টিনে বুধবার (১০ মে) বিকেলে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বিএনপির ‘ভিশন-২০৩০’ উপস্থাপনকালে তিনি এ কথা বলেন।

খালেদা জিয়া বলেন, প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধের রাজনীতির বিপরীতে ভবিষ্যতমুখী এক নতুন ধারার রাজনৈতিক সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা করতে চায় বিএনপি। বিএনপি দুর্নীতির সঙ্গে কোনো আপোষ করবে না। সমাজের সর্বস্তরের দুষ্টক্ষতের মত ছড়িয়ে পড়া দুর্নীতির রাশ টেনে ধরার জন্য পদ্ধতিগত ও আইনের সংস্কারের পাশাপাশি স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হবে। প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য সংবিধান অনুযায়ী ন্যায়পাল এর পদ সৃষ্টি করা হবে। বিশেষ ক্ষমতা আইন ১৯৭৪ বাতিল করা হবে। মানবাধিকার সম্পর্কিত জাতিসংঘের সর্বজনীন ঘোষণা বাস্তবায়ন করা হবে।

তিনি আরও বলেন, বিচার বিভাগের কার্যকর স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা প্রতিষ্ঠা করে জনগণের জন্য ন্যায়বিচার ও আইনের শাসন নিশ্চিত করা হবে। অধস্তন আদালতকে নির্বাহী বিভাগের আওতামুক্ত করার লক্ষ্যে সুপ্রিম কোর্টের অধীনে পৃথক সচিবালয় স্থাপন করা হবে। প্রয়োজনীয় সংখ্যক যোগ্য বিচারক নিয়োগের মাধ্যমে মামলার জট কমিয়ে আনা হবে। পুলিশ বাহিনীকে একটি স্বাধীন ও গণতান্ত্রিক সমাজের উপযোগী করে গড়ে তোলা হবে।

খালেদা জিয়া বলেন, পুলিশের কনস্টেবল, এএসআই পর্যন্ত নিম্নপদস্থ পুলিশ কর্মকর্তাদের মাঠপর্যায়ে একটানা ৮ ঘণ্টার বেশি দায়িত্ব দেওয়া হবে না। দায়িত্ব পালনে বাধ্য করা হবে না। ঝুঁকিভাতা ও ৮ ঘণ্টার বেশি দায়িত্ব পালন করলে কর্মঘণ্টা হারে যুক্তিসঙ্গত ওভারটাইম প্রদান করা হবে। এএসআই থেকে কনেস্টবল পর্যন্ত পুলিশের আবাসন সমস্যা সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। দ্রব্যমূল্যের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ভাতাদি ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করা হবে। একটি দক্ষ, স্বচ্ছ, গতিশীল, মেধাবী, জবাবদিহিমূলক যুগোপযোগী ও গণমুখী জনপ্রশাসন গড়ে তোলা হবে। মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, নারী ও প্রান্তিক জাতি-গোষ্ঠী কোটা ব্যতিরেকে কোটা পদ্ধতি বাতিল করা হবে।

তিনি বলেন, বৈদেশিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থ সর্বোচ্চ প্রাধান্য দেওয়া হবে। মুসলিম উম্মাহ ও প্রতিবেশী দেশসমূহের সঙ্গে বিশেষ সম্পর্ক গড়ে তোলা হবে। বিএনপি সকল মুক্তিযোদ্ধাদের ‘রাষ্ট্রের সম্মানিত নাগরিক’ হিসেবে ঘোষণা করবে। মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রণয়নের নামে দুর্নীতির অবসান ঘটানো হবে। বিএনপি একটি স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের সঠিক তালিকা প্রস্তুত করবে।

সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ নিয়ে তিনি বলেন, বর্তমানে সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ ও উগ্রবাদ জাতির জন্য একটি অত্যন্ত বিপজ্জনক সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। গণতন্ত্রের অনুপস্থিতি, আইনের শাসনের অভাব ও মানবাধিকার লঙ্ঘন সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ ও উগ্রবাদ বিস্তারে অন্যতম কারণ। বিএনপি সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ ও উগ্রবাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। জাতীয় ঐকমত্য গঠন ও জনগণের অংশগ্রহণে সন্ত্রাসবাদকে নির্মূল করা হবে।

খালেদা জিয়া বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি আধুনিক, গণতান্ত্রিক উচ্চমধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করতে চায় বিএনপি। এ সময়ের মধ্যে মাথাপিছু আয় ৫০০০ মার্কিন ডলারে উন্নীত করতে চাই। এক দশকের মধ্যে নিরক্ষরতা দূর করা হবে। শিক্ষাখাতে জিডিপির ৫ভাগ অর্থ ব্যয় করা হবে। মেয়েদের ও ছেলেদের জন্য স্নাতক ও সমপর্যায় পর্যন্ত অবৈতনিক শিক্ষা নিশ্চিত করা হবে। ছেলে-মেয়েদের জন্য শিক্ষা উপবৃত্তি কার্যক্রম সম্প্রসারণ করা হবে। বিএনপির শিক্ষানীতি হবে জীবনমুখী, ডিগ্রিমুখী নয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে ও উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র-সংসদের নির্বাচন নিশ্চিত করে ছাত্রদের মধ্য হতে ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব বিকাশের পথ সুগম করা হবে। তথ্য ও প্রযুক্তি খাত বিএনপির বিশেষ অগ্রাধিকার খাত হবে এমন দাবি করে খালেদা জিয়া বলেন, ভিওআইপি উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। এর ফলে বহির্বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ সহজ সাশ্রয়ী ও সুলভ হবে। ইন্টারনেট অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে দ্রুততম সময়ের মধ্যে মোবাইল ডাটার জন্য এবং ব্রডব্যান্ডের ক্ষেত্রে সাশ্রয়ী মূল্যে সময়োপযোগী সর্বোচ্চ গতির ইন্টারনেট নিশ্চিত করতে হবে। মোবাইল কোম্পানিগুলোর মাধ্যমে সারা দেশে বিশেষ করে মফঃস্বলে উচ্চ গতির ৪জি কভারেজ নিশ্চিত করা হবে।

সাংবাদিকদের পেশাগত স্বাধীনতা নিশ্চিত করা, গঠনমূলক ও বস্তুনিষ্ঠ সমালোচকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিএনপি সথেষ্ট থাকবে এমন দাবি করে খালেদা জিয়া বলেন, সাগর-রুনি হত্যাসহ সব সাংবাদিক হত্যার বিচার নিশ্চিত করবে বিএনপি। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহার করা হবে। তথ্য-প্রযুক্তি আইনের বিতর্কিত ৫৭ধারা বাতিল করা হবে।

প্রত্যেক জেলায় ‘স্মার্ট স্কুল’ প্রতিষ্ঠা করা হবে।

ভিশন ২০৩০ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ৩৭টি পয়েন্ট উল্লেখ করে খালেদ জিয়া তার লিখিত বক্তব্যের শেষ পর্যায়ে বলেন, আমরা যে ভিশন উপস্থাপন করলাম তা অর্জন করা কঠিন কিন্তু অসম্ভব নয়। আমরা লড়াই করে দেশ স্বাধীন করেছি। এই দেশটাকে উন্নত ও মর্যাদাবান দেশে পরিণত করা আমাদের সকলের পবিত্র দায়িত্ব। আমরা আশা করি ভিশন দেশবাসীর সক্রিয় সমর্থনের পাশাপাশি উন্নয়ন সহযোগী রাষ্ট্র ও প্রতিষ্ঠান সমূহেরও সহযোগিতা পাবো।