একাত্তরলাইভডেস্ক: দেশে প্রতিদিন পানিতে ডুবে মারা যাচ্ছে ৪৯ শিশু। প্রতিবছর মারা যাচ্ছে প্রায় ১৮ হাজার শিশু। যার মধ্যে ১২ হাজার শিশু ১ থেকে ৪ বছর বয়সী। এর কারণ হিসেবে পরিবারের অসচেতনতা ও শিশুদের ওপর নিয়ন্ত্রণ না থাকার কথা বলেছেন বিশেষজ্ঞরা। সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিচার্স বাংলাদেশের (সিআইপিআরবি) মতে, প্রতিবছর পানিতে ডুবে মারা যায় প্রায় ১৮ হাজার শিশু। তবে ইউনিসেফের তথ্যানুযায়ী বাংলাদেশে প্রতিবছর গড়ে ১৭ হাজার শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়। ইউনিসেফের তথ্যানুযায়ী বাংলাদেশে প্রতিবছর গড়ে ১৭ হাজার শিশু পানিতে ডুবে মারা যাওয়ার সংখ্যাটি বিশ্বের সর্বোচ্চ। এদিকে বাংলাদেশ হেলথ অ্যান্ড ইনজুরি সার্ভের (বিএইচআইএস) গবেষণায় বলা হয়েছে, এক থেকে ১৭ বছরের শিশুদের মধ্যে অন্য যে কোনো রোগে আক্রান্ত হয়ে শিশু মৃত্যৃর চেয়ে পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। যা মোট শিশু মৃত্যুর ২৮ ভাগ। বিশেষজ্ঞরা জানান, বিগত কয়েক বছরের তুলনায় দেশে শিশু মৃত্যুর হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। তবে পানিতে ডুবে মারা যাওয়া শিশুর সংখ্যা বাড়ছে। বেশির ভাগ পানিতে ডোবার ঘটনা ঘটছে পুকুর, খাল, নদীতে এবং এগুলো ঘটছে তাদের নিজ বাড়ি থেকে সামান্য দূরেই। দেখা গেছে, বর্ষা পরবর্তী সময়ে অধিকাংশ ডোবা, খালে পানি থাকে। এ সময় বাড়ির আশপাশে শিশুরা খেলতে গিয়ে এ ধরনের দুর্ঘটনায় শিকার হয়। এ বিষয়ে সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিচার্স বাংলাদেশের (সিআইপিআরবি) নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক একেএম ফজলুর রহমান রাইজিংবিডিকে বলেন, সিআইপিআরবি ২০০৫ সাল থেকে শিশু মৃত্যুর উপর মাঠ পর্যায়ে পর্যবেক্ষণ করে আসছে। সম্প্রতি আমরা সারা দেশে পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর উপর জরিপ করেছি। আগের থেকে এ হার সামান্য কিছুটা কমলেও, তা লক্ষণীয় নয়। তিনি বলেন, আমাদের গবেষণায় দেখা গেছে পানিতে ডুবে বেশিরভাগ শিশু মৃত্যুর ঘটনাগুলো ঘটেছে সকাল থেকে দুপুর ১টার মধ্যে। কারণ এসময় মায়েরা গৃহস্থলীর কাজে ব্যস্ত থাকেন। সন্তানদের সময় দিতে পারেন না। কিন্তু একটু সচেতন হলেই কিন্তু এ ধরনের ঘটনা থেকে আমরা পরিত্রাণ পেতে পারি। শিশু মৃত্যু ও ইনজুরি রোধে প্রমাণিত কার্যক্রমগুলো সরকারের সহায়তায় অগ্রাধিকার প্রদানসহ স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটির মাধ্যমে কার্যক্রম গ্রহণের কথা জানান তিনি। সিআইপিআরবি গবেষণার মাধ্যমে প্রমাণ করেছে, শিশুদের প্রাতিষ্ঠানিক কোনো তত্ত্বাবধানে রাখলে শিশু মৃত্যুর হার কমানো সম্ভব। তিনি আরো বলেন, আমারা দেশের বিভিন্ন জায়গায় শিশুদের প্রাতিষ্ঠানিক তত্ত্বাবধানের (আঁচল) ব্যবস্থা করেছি। আঁচল একটি কার্যকরী কৌশল এবং নিরাপদ শিশু কেন্দ্র। এখানে সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত এলাকার ২০-২৫ জন শিশুকে একজন প্রশিক্ষিত আঁচল মা (যত্নকারী) ও সহকারীর তত্ত্বাবধানে রাখা হয়। এর ফলে শিশু ইনজুরি প্রতিরোধ ও শিশু বিকাশ কার্যক্রমের সমন্বয় ঘটানো হয়।এদিকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমও সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর হার ও ইনজুরির হার কমাতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করেন।
প্রতিদিন পানিতে ডুবে মারা যায় ৪৯ শিশু
November 9, 2016