পলাতক সন্ত্রাসী জাকির খান নারায়ণগঞ্জে

নিজস্ব প্রতিবেদক:নারায়ণগঞ্জের আলোচিত-সমালোচিত সাবেক ছাত্রদল নেতা জাকির খান নারায়ণগঞ্জে ফিরে এসেছেন বলে নারায়ণগঞ্জে গুঞ্জন চলছে। কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় দুই আওয়ামীলীগ নেতা তাকে নারায়ণগঞ্জে এনেছেন বলে জানা গেছে। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে স্থানীয় আওয়ামীলীগের একটি গ্রুপ তাকে দেশে এনেছে। জাকির খানের বিরুদ্ধে দুইটি হত্যাসহ বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে। একটি মামলায় সে আট বছরের সাজাপ্রাপ্ত। নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি ও ছাত্রদলের বেশ কয়েকজন নেতা জানান, গত পনের বিশ দিন ধরে জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি জাকির খান ঢাকার গুলশানে আওয়ামীলীগের এক নেতার বাসায় অবস্থান করছেন। নারায়ণগঞ্জ বিএনপি’র একটি অংশ নিয়মিত গিয়ে তার সাথে দেখা করে আসছে। বর্তমানে তার সাথে সবচেয়ে বেশি সময় দিচ্ছে মহানগর ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আবুল কাওসার আশা। আশা বিএনপি থেকে নির্বাচিত সাবেক এমপি আবুল কালাম এর ছেলে। গত মঙ্গলবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত জাকির খান নারায়ণগঞ্জে তার দেওভোগের বাসায় দিনের বেলা এসে অবস্থান করেন। তবে সন্ধা নামার আগেই তিনি ঢাকায় চলে যান। এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে যুবদল নেতা ও জাকির খানের ঘনিষ্ঠজন জাহিদ হাসান রোজেল জানান, আমিও আপনার মতো শুনেছি যে জাকির খান কয়েকদিন ধরে দেশে এসেছেন এবং তিনি নারায়ণগঞ্জেও আসছেন। কিন্তু তার পরিবারের কেউ আমাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেনি। আর জাকির খান নিজেও আমাকে এ ব্যাপারে কিছু জানাননি। তবে জাকির খানের ভাই কবির খান বলেন, জাকির খান কয়েক দিন আগে এসেছিলো। কিন্তু সে চলে গেছে। নারায়ণগঞ্জ সদর থানার ওসি আসাদুজ্জামান জানান, ‘জাকির খানের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলা আছে। সে থানার তালিকাভূক্ত সন্ত্রাসী। সে দেশে আছে কিনা তা জানিনা। মামলার সংখ্যা ও কোনটায় সাজাপ্রাপ্ত কিনা তা থানায় গিয়েবলতে হবে। আমি এই মূহূর্তে থানার বাইরে আছি।’ পরে তাকে ফোন দেয়া হলে তিনি ধরেননি। তবে পুলিশের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, জাকির খানের পক্ষে মিছিল সমাবেশ করতে দেয়ার ব্যাপারে তাদের উপর এক এমপি’র চাপ রয়েছে। তিনি জানান, জাকির খানের বিরুদ্ধে বিকেএমইএ’র সাবেক সহ-সভাপতি সাব্বির আলম খন্দকার, দয়াল মাসুদ হত্যা মামলাসহ বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে। সামায়ুন কবির নামের এক ব্যবসায়ীর কাছে চাদা দাবীর অভিযোগে দায়ের করা মামলায় এ বছরের ৩১ জুলাই তাকে আট বছরের সশ্রম কারাদন্ড দিয়েছে হাইকোর্টের বিচারপতি শহীদুল ইসলাম ও বিচারপতি আব্দুল কাদের এর বেঞ্চ। তাকে এক মাসের মধ্যে আদালতে হাজির হয়ে আত্মসমর্পন করতে বলা হয়েছিলো। কিন্তু সে নির্ধারিত সময়ে হাজির হয়নি। জাকির খানের পিতা দৌলত খান ছিলেন তৎকালীন টানবাজার পতিতালয়ের গডফাদার। ১৯৮৯ সালে নাসিম ওসমানের হাতে ধরে জাতীয় ছাত্র সমাজে যোগ দিয়ে ক্যাডার হিসেবে উত্থান ঘটে জাকির খানের। নাসিম ওসমানের সাথে বিরোধ বাঁধলে তিনি ১৯৯৪ সালে বিএনপিতে যোগ দেন। ১৯৯৫ সালে দেওভোগ এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী দয়াল মাসুদকে শহরের সোনার বাংলা মার্কেটের পেছনে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করেন। ১৯৯৬ সালে বিএনপি সরকারের শেষ দিকে জাকির খান শহরের খাজা সুপার মার্কেটে হামলা ও ভাংচুরের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় ৭ বছরের সশ্রম কারাদন্ড প্রাপ্ত হয়ে জেলে যান। সে সময়ের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মতিন চৌধুরীর নাতি হিসেবে শহরে পরিচিত হয়ে ওঠেন জাকির খান। রাষ্ট্রপতির সাধারণ ক্ষমায় তিনি মুক্ত হন। ১৯৯৬ সালে কাশীপুর এলাকায় এক ঠিকাদারের কাছে চাঁদা দাবির অভিযোগে দ্বিতীয় দফায় জাকির খানের ৫ বছরের সশ্রম কারাদন্ড হয় । আওয়ামীলীগের ৪ বছর জাকির খান থাকেন জেলে। ১৯৯৯ সালে স্বল্প সময়ের জন্য জেল থেকে বের হয়ে জাকির খান জেলা ছাত্রদলের সভাপতির পদটি পেয়ে যান। নগরীতে প্রচলিত আছে যে এমপি শামীম ওসমান জাকির খানকে তার জন্য হুমকি মনে করতেন। এ কারনে শামীম ওসমান, টানবাজার ও নিমতলী পতিতালয় উচ্ছেদ করেন। এখানে জাকির খান পরিবারের বেশ কয়েকটি বাড়ি ছিলো। এছাড়া সেসময় পতিতাপল্লীর নিয়ন্ত্রন ছিলো তার হাতে। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পরও প্রায় ৫ মাস জেলে থাকেন জাকির খান। ২০০৩ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি বিএনপি নেতা তৈমুর আলম খন্দকারের ছোট ভাই ব্যবসায়ী নেতা সাব্বির আলম খন্দকার খুন হন। এ ব্যাপারে জাকির খানকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন তৈমুর আলম খন্দকার। এর পর জাকির খান প্রথমে সিঙ্গাপুর ও পরে থাইল্যান্ডের সুকুমবিতে পালিয়ে যান। সেখানে কয়েক কোটি টাকা দিয়ে ‘গ্রেস’ নামের ৮তলা বিশিষ্ট একটি থ্রি-স্টার হোটেল কেনেন। পরে জাকির খান চলে যান দুবাইতে। তিনি সেখানে নারায়ণগঞ্জের আওয়ামীলীগের এক প্রভাবশালী নেতার মাধ্যমে ব্যবসা শুরু করেন।