শাহ আলম শফি, কুমিল্লা প্রতিনিধিঃ
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে পকেটে ইয়াবা ও ফেনসিডিল দিয়ে একের পর এক আটক বাণিজ্যের অভিযোগে জেলা পুলিশের গোয়েন্দা (ডিবি) শাখার একটি দলকে আটকের পর তাদের বহনকারী মাইক্রোবাস ভাঙচুর করেছে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। এ সময় ডিবি পুলিশকে বহনকারী ওই মাইক্রোবাস থেকে ইয়াবা ও ফেনসিডিল পাওয়া গেছে বলেও অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। এছাড়া ডিবির ব্যবহৃত ওই মাইক্রোবাসের সামনে এক আর পেছনে আরেক নম্বর যুক্ত প্লেট ব্যবহার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে এলাকাবাসী। শনিবার রাত ১২টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে উপজেলার মিয়াবাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় চৌদ্দগ্রামের মিয়াবাজার এলাকার ব্যাবসায়ী ও বাসিন্দা মোঃ রতন মিয়া, সোহেল রানা, মাহবুব আলম, পেয়ার আহম্মদ, রাসেল মিয়া, জালাল আহমেদসহ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এশাধিক ব্যক্তির সাথে কথা বলে জানা গেছে, বেশ কিছু দিন ধরে কুমিল্লা জেলা ডিবি পুলিশের সদস্যরা মাদক ব্যবসায়ীদের ধরার নামে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মিয়াবাজার এলাকায় নিরীহ লোকদের পকেটে ইয়াবা, ফেনসিডিলসহ বিভিন্ন প্রকার মাদক ঢুকিয়ে দিয়ে তাদের আটক করে ধরে নিয়ে যাচ্ছেন।
পরে ৫০ হাজার থেকে এক লক্ষ টাকা নিয়ে আবার তাদের ছেড়ে দিচ্ছেন। এতে এলাকার মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। গত শনিবার রাত প্রায় ১২ টায় একই কায়দায় ডিবি পুলিশের একটি দল মিয়া বাজার এলাকা থেকে স্থানীয় রিকশা চালক আবদুল জলিলকে আটকে ফেনসিডিল পকেটে দিয়ে ধরে নিয়ে যায়। পরে তাঁর স্ত্রীর কাছ থেকে এক লক্ষ টাকা দাবি করে তারা। এ ঘটনায় এলাকাবাসী ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। কিছুক্ষণ পর ডিবি পুলিশের এসআই নজরুল ইসলামের নেতৃত্বে আরেকটি দল মিয়াবাজার এসে অবস্থান নিলে স্থানীয় জনতা তাদের উপর চড়াও হয়।
এক পর্যায়ে তাদের বহনকারী মাইক্রোবাসটি ভাঙচুর করে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। পরে গাড়ির ভেতর থেকে আলাদা দুইটি ব্যাগে থাকা ইয়াবা ও ফেনসিডিল দেখতে পায় এলাকাবাসী।
স্থানীয়রা আরও জানান, এসব ইয়াবা আর ফেনসিডিল দিয়েই ফাঁসানো হয় নিরীহ লোকদের। আর এই কাজে নিজেদের সুরক্ষিত রাখতে ডিবি পুলিশকে বহনকারী গাড়ির সামনে এবং পেছনে পৃথক নম্বর প্লেট ব্যবহার করেন তারা। স্থানীয় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সুত্র আরো জানায়,গত কয়েক দিনের ব্যবধানে মিয়া বাজার এলাকার ছিদ্দিক মিয়ার ছেলে মো. শরিফ, এছাক মিয়ার ছেলে আরিফ, মিজানুর রহমানের ছেলে কাউসার, আলী আকবরের ছেলে মনির, বাহার, শহিদ, কুদ্দুসসহ বেশ কয়েকজন যুবককে ইয়াবা আর ফেনসিডিল দিয়ে ফাঁসিয়ে আটক করে ধরে নিয়ে যায় ডিবি পুলিশ।
পরবর্তীতে অস্ত্র মামলা অথবা ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে প্রত্যেকের কাছ থেকে ৫০ হাজার থেকে ১ লক্ষ টাকা আদায় করে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। একের পর এক এসব ঘটনার কারনে বর্তমানে স্থানীয়রা সর্বদা ডিবি পুলিশের আতঙ্কে থাকেন। যার কারনে এলাকার মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে এ ঘটনা করেছে।
এদিকে ডিবি পুলিশকে আটক করে গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছান চৌদ্দগ্রাম থানার ওসি আবু ফয়সল।
পরে স্থানীয় উজিরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন খোরশেদসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ আলোচনা করে রিকশা চালককে ছেড়ে দেওয়াসহ এ ঘটনার সুষ্ঠু সমাধানের আশ্বাস দিয়ে ডিবি পুলিশের সদস্যদের উদ্ধার করেন তিনি ।
এ ব্যাপারে উজিরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন খোরশেদ সাংবাদিকদের বলেন, আমি জেনেছি দীর্ঘদিন ধরে এভাবে মানুষকে ধরে নিয়ে টাকার বিনিময়ে ছাড়ছেন ডিবি পুলিশের সদস্যরা। যার কারনে সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে এমন ঘটনা করতে বাধ্য হয়েছে। জানতে চাইলে কুমিল্লা জেলা পুলিশের গোয়েন্দা (ডিবি) শাখার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মন্জুর আলম বলেন, এ ঘটনা চৌদ্দগ্রামের তাই চৌদ্দগ্রামের ওসি এ ব্যাপারে ভালো বলতে পারবেন।
সেখানে কি হয়েছে আমি কিভাবে বলবো। এ ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না। রোববার বিকেলে এরিপোর্ট লেখার সময় চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু ফয়সালকে একাধিকবার মোবাইলে কল করলেও তিনি রিসিভড করেন নাই।