নারায়ণগঞ্জপ্রতিনিধি: আসন্ন নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে নেত্রী শেখ হাসিনা যদি দলীয় প্রতীক ‘নৌকা’ দেন তাহলে আনোয়ার ভাই মেয়র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ শামীম ওসমান। যদিও কয়েকমাস আগে তৃণমূলের সমর্থনের ভিত্তিতে দলীয় মেয়র প্রার্থী হিসেবে আনোয়ার হোসেনের নাম ঘোষণা করেছিলেন শামীম ওসমান।শনিবার (২৯ অক্টোবর) দুপুর সোয়া ৩ টায় মাসদাইর পৌর ওসমানী স্টেডিয়াম সংলগ্ন শামসুজ্জোহা ক্রীড়া কমপ্লেক্স মাঠে নৌকার তৈরী মঞ্চে সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ, মাদক নির্মূল এবং আধুনিক নারায়ণগঞ্জ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে আয়োজিত স্মরনকালের সর্ববৃহৎ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি ঘোষণা দেন।শামীম ওসমানের এই বক্তব্যের সময় উপস্থিত দলীয় নেতাকর্মীরা দুই হাত তুলে মেয়র প্রার্থী হিসেবে মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি আলহাজ্ব আনোয়ার হোসেনকে সমর্থন জানান।নারায়ণগঞ্জ-৪(ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনের সাংসদ একেএম শামীম ওসমান বলেছেন, আমারা রাজনীতি করি আল্লাহকে খুশি করার জন্য। আর মানুষের উন্নয়নের জন্য রাজনীতি করলেই আল্লাহকে খুঁশিকরা সম্ভব। ৯৬’এর রাজনীতির আগে আমার জন্য এবং আমার দলের নেতাদের জন্য রাজনীতি করি। আর বর্তমানে রাজনীতি করি মহান সৃষ্টিকর্তাকে খুশিঁ করার জন্য। তিনি আরো বলেন, ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার বিচার চেয়ে শহর ব্যাপী পোষ্টার লাগিয়েছিলাম। জিয়াউর রহমান নারায়নগঞ্জ আসার পথে জিয়াউর রহমানের পক্ষে শ্লোগান দিয়েছিলাম। আমাদের শ্লোগান শুনে যখন জিয়াউর রহমান হাত নেড়ে সাড়া দিচ্ছেলেন ঐ সময়তে আমাদের শ্লোগান পাল্টিয়ে শ্লোগান ধরি খুনীঁ জিয়াউর রহমানের ফাসিঁ চাই। এরপরেই জিয়াউর রহমানের নির্দেশে আমাদের উপর নেমে আসে অসহনীয় হামলা ও অত্যাচার। কারন, আমি বিশ্বাস করতাম বঙ্গবন্ধু মানেই বাংলাদেশ, আর বাংলাদেশ মানেই বঙ্গবন্ধু।শনিবার দুপুরে মহানগর আওয়ামীলীগের উদ্যোগে আয়োজিত মাদক, সন্ত্রাস ও ইভটিজিংমুক্ত আধুনিক নারায়ণগঞ্জ গড়ে তুলার প্রত্যয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ একেএম শামীম ওসমান একথা বলেন।নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াত আইভীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আইভীর ক্ষমা চাওয়া উচিত। অনেক বার অনুরোধ করেছি নারায়ণগঞ্জবাসীর কাছে যেন আইভী ক্ষমা চান। কিন্তু আইভী নারায়ণগঞ্জবাসীর কাছে ক্ষমা চায়নি। কারন, আইভী ছোট ও বাচ্চা মানুষ, আইভীর জ্ঞানের অনেক অভাব। তবে আইভীর ভূলের জন্য নারায়ণগঞ্জবাসী তাকে ক্ষমা করবে না। নাসিক নির্বাচন প্রসঙ্গে সাংসদ শামীম ওসমান বলেন, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে নেত্রী যাকে মনোনয়ন দিবেন আমরা তার পক্ষেই কাজ করবো। নারায়ণগঞ্জের তৃনমূল আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দ মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেনের পক্ষে সমর্থন দিয়েছেন। যদি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনোয়ার হোসেনকে সমর্থন দেন তাহলে নারায়ণগঞ্জবাসী আনোয়ার হোসেনকে সমর্থন দিবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে নারায়ণগঞ্জবাসী আনোয়ার হোসেনকে হাত নেড়ে সমর্থন করেন। সাংসদ শামীম ওসমান বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদাজিয়ার লংমার্চের গাড়ী আটকানোর প্রসঙ্গে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার বরাত দিয়ে সাংসদ বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের দায়ে অভিযুক্ত সালাউদ্দিন কাদের চেীধুরী এবং বিএনপি নেতা সাদেক হোসেন খোকা ফেনীতে বেগম খালেদাজিয়ার গাড়ী বহরে বোমা হামলা চালিয়ে দেশের মধ্যে অরাজকতার ষড়যন্ত্র করছিলেন। এমন সংবাদে আমি নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ডে বেগম খালেদাজিয়ার লংমার্চের গাড়ী আটকিয়ে বিলম্ব করে ফেনীতে না যাওয়ার জন্য অনৃুরোধ করি। কিন্তু ঐ সময় বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদাজিয়া আমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন “তোমায় আমি দেখে নিব”। বিএনপি নেত্রী সত্যিই আমায় দেখেনিয়েছেন। আমায় মেরে ফেলার উদ্দেশ্যে নারায়ণগঞ্জ আওয়ামীলীগের কার্য্যালয়ে বোমা মেরেছেন। আল্লাহর অশেষ রহমতে আমি বেঁচে গেলেও প্রান দিতে হয়েছে আওয়ামীলীগের ২২ জন নেতৃত্বকে। আহত হয়েছিল বর্তমান ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি আমার বন্ধু চন্দনশীলসহ অসংখ্য নেতাকর্মী। সাংসদ শামীম ওসমান তার ভাষনের এক পর্যায়ে নারায়ণগঞ্জবাসীর গৌরবময় ঐতিহ্য তুলে ধরে বলেন, ৫২’ এর ভাষা আন্দোলন, ৬৯ এর গণ অভ্যুর্থনা ৬ দফা দাবিসহ বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে নারায়ণগঞ্জবাসীর ভূমিকা ছিল ব্যাপক। তিনি আরো বলেন, আমার রাজনীতি জনগনের জন্য, মানুষকে ভালবাসার মধ্য দিয়ে আল্লাহকে খুঁিশ করার চেষ্টা করি। আমি পদ পদবীর রাজনীতিতে বিশ্বাসী নই। আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নের বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে দেশকে এগিয়ে নিতে চাই। এমপি শামীম ওসমান নারায়ণগঞ্জবাসীর উদ্দেশ্যে বলেন, আমি মাদক সেবীকে ঘৃনা করি না কিন্তু মাদক ব্যবসায়ীকে ঘৃনা করি। একটি পরিবার ধ্বংস করার জন্য একজন মাদক সেবীই যথেষ্ট। তাই মাদক ব্যবসায়ীদের প্রতিরোধ করার জন্য প্রতিটি এলাকায় পঞ্চায়েতকে মুখ্য ভূমিকা পালন করতে হবে। পঞ্চায়েত যদি মাদক ব্যবসায়ীদের প্রতিরোধ করতে না পারে তাহলে আমি নিজেই মাঠে নেমে মাদক ব্যবসায়ীদের প্রতিরোধ করব। মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন সভাপতিত্বে তার বক্তব্যে বলেন, গত নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আমি সেলিনা হায়াত আইভীর পক্ষে কাজ করেছি। আইভী নাসিক নির্বাচনে বিজয়ী হলে যে আর্দশে কাজ করার ওয়াদা করেছিল তার বিন্দু পরিমানও সে করেনি। আইভী আমার নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনীতিতে বিশ্বাসী নয়। নেত্রী শেখ হাসিনার আর্দশের রাজনীতি আইভী করেন না বিধায় আইভীর পক্ষে আমি নেই। আইভীকে ছেড়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আর্দশের সৈনিক গণমানুষের নেতা সাংসদ শামীম ওসমানের কাধে কাধ মিলিয়ে আওয়ামীলীগের রাজনীতি করতে এসেছি।আনোয়ার হোসেন আবেগ আপ্লুত কন্ঠে অভিযোগ করে বলেন, আমি আইভীর অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় আমাকে বেঈমান বলেছে। আমার রক্তে বেঈমানীর রাজনীতি নেই। আমি শেখ হাসিনার আর্দশে আর্দশিত হয়ে জনগনের রাজনীতি করে। নারায়ণগঞ্জবাসীর উন্নয়নের রাজনীতি করি। আমি মনে করি জনগন আমার শক্তি শেখ হাছিনা আমার প্রেরনা। আইভীর পাশে থাকাকালীন সময়ে জামায়াত শিবিরের বিরুদ্ধে অবস্থানের অনুরোধ করেও তাকে আমি পাইনি। তাহলে কেন আমি আইভীর পক্ষে থাকবো? যে আইভী কিনা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে জনসভায় অংশগ্রহন করতে গড়িমসি করেন তার পক্ষে আমি থাকতে পারি না। আমি আওয়ামীলীগের তৃণমূলের রাজনীতিতে বিশ্বাসী আমি সুবিধাভোগীদের পক্ষে নেই। তিনি তার বক্তব্যে জনগনের পাশে থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত জনগনের স্বার্থের রাজনীতি করে যাওয়ার জন্য ওয়াদা করেন।এর আগে ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ শ্লোগান দিতে দিতে ব্যানার, প্ল্যাকার্ড, ফেস্টুন হাতে নিয়ে জেলা, মহানগর, ফতুল্লা, সিদ্ধিরগঞ্জ, বন্দর, সোনারগাঁ থানা আওয়ামীলীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা সমাবেশ স্থলে এসে যোগ দেয়।মঞ্চে উপবিষ্ট মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক এড. খোকন সাহা সমাবেশস্থলে আগত নেতৃবৃন্দদের শুভেচ্ছা জানান।উক্ত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি হোসনে আরা বাবলী, তারাব পৌরসভা মেয়র হাসিনা গাজী, জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আঃ হাই, সাধারন সম্পাদক আবু হাসনাত শহীদ বাদল, মহানগর আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি চন্দন শীল, সহ-সভাপতি রোকন উদ্দীন আহাম্মেদ, সাধারন সম্পাদক খোকন সাহা, গোপীনাথ দাস, জেলা জাসদের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সাত্তার, সাধারন সম্পাদক মোহর আলী, নারায়ণগঞ্জ আদালতের পিপি ওয়াজেদ আলী খোকন, নাসিক কাউন্সিলর ও জেলা মহিলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদিকা ইসরাত জাহান স্মৃতি, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি মজিবর রহমান, ফতুল্লা থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি এম সাইফউল্লাহ বাদল, সাধারন সম্পাদক এম শওকত আলী, বন্দর থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি এম এ রশীদ, আইনজীবি সমিতির সভাপতি এড.আনিছুর রহমান দিপু প্রমুখ।এছাড়া সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি মোঃ রবিউল হোসেন, যুগ্ন সাধারন সম্পাদক জাকিরুল আলম হেলাল, সাংগঠনিক সম্পাদক জিএম আরাফাত, মহানগর যুবলীগ সভাপতি শাহাদাত হোসেন সাজনু, ফতুল্লা থানা যুবলীগের সভাপতি মীর সোহেল আলী, ছাত্রলীগের সভাপতি আবু মোঃশরীফুল হক, স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি ফরিদ আহাম্মেদ লিটন, ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক এম এ মান্নান, নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী প্রচারলীগ সাংগঠনিক সম্পাদক অজয় সূত্রধর, মাসুদুর রহমান মাসুদ, বন্দর থানা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খাঁন মাসুদ, মাসদাইর এলাকার আওয়ামীলীগ নেতা মতি প্রধান, রন্জিত মন্ডল, গাফ্ফার প্রমুখ।
আইভীর ক্ষমা চাওয়া উচিত:শামীম ওসমান

October 29, 2016