নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি : নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে গুলিবিদ্ধ চার যুবকের মধ্যে ৪ জনেরই পরিচয় শনাক্ত হয়েছে। নিহতদের নাম লুৎফর মোল্লা, সবুজ সরদার, ফারুক প্রমানিক ও জহিরুল। এদের মধ্যে সবুজ সরদার, ফারুক প্রমানিক ও জহিরুল পাবনার আতাইকুলা থানাধীন পুষ্পপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। এই তিনকে ডিবি পরিচয়ে তুলে নেয়া হয়েছিলো বলে দাবি করেছেন স্বজনরা।
সোমবার সকালে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল (ভিক্টোরিয়া) হাসপাতালে এসে নিহত সবুজ সরদার ও ফারুক প্রমানিকের লাশ শনাক্ত করেন তাদের পিতা খাইরুল সরদার ও জামাল প্রমানিক। নিহত জহিরুলের লাশ তার শ্বশুর নজরুল ইসলাম শনাক্ত করেন। নিহত সবুজ সরদার, জহিরুল ও ফারুক প্রমানিক তিনজনই পাবনার আতাইকুলা থানাধীন পুষ্পপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। এর আগে রোববার (২১ অক্টোবর) নিহত লুৎফর মোল্লার লাশ শনাক্ত করেন তার স্ত্রী রেশমা আক্তার।
নিহত লুৎফর মোল্লারা স্ত্রী রেশমা আক্তার সাংবাদিকদের জানান তার স্বামী বাস চালক। শুক্রবার বিকাল ৫টার দিকে বাসা থেকে বের হন। এবং সন্ধ্যা ৭টার দিকে গাড়ি নিয়ে রাস্তায় নামেন। রাত ১টায় স্বামীর সাথে তার শেষ বারের মতো কথা হয়। এরপর থেকে স্বামীর মোবাইল ফোন বন্ধ পান। রোববার সকালে টেলিভিশনে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে ৪ জনের লাশ উদ্ধারের খবর পেয়ে নারায়ণগঞ্জ হাসপাতাল মর্গে ছুটে আসেন তিনি।
লুৎফরের স্ত্রী আরো জানান, লুৎফর রাজধানীর রামপুরা থানার বাগিচারটেক এলাকায় ভাড়া বাড়িতে থাকত। লুৎফর মোল্লার গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরের ভাঙ্গা থানার উত্তর আকনবাড়িয়া কালীবাড়ি এলাকায়। তার পিতার নাম মুনসুর মোল্লা।
নিহত ফারুকের পিতা জামাল প্রমানিক বলেন, ১৫ বছর ধরে রূপগঞ্জের গাউছিয়ায় বাস চালাতো। গত সোমবার (১৫ অক্টোবর) ডিবি পরিচয়ে গাউছিয়া থেকে একই গ্রামের ৪ জনকে ধরে নিয়ে যায়। যার মধ্যে ৩জনের লাশ আড়াইহাজারের অজ্ঞাতদের মধ্যে পাওয়া গেছে। সবুজ সরদার, ফারুক প্রমানিক ও জহিরুল।
এদিকে সবুজ সরদারের স্বজনরা জানান, খাইরুল সর্দার পেশায় অটোরিকশা চালক। স্বজনরা জানান সবুজ ঢাকায় বেকারিতে চাকরি নেয়ার কথা বলে ২ সপ্তাহ আগে গ্রাম ছাড়ে। তার সাথে আরও দুইজন নিখোঁজ আছে কিন্তু মর্গে রাখা দুইজন তারা না বলে জানান খাইরুল সর্দারের ভায়রা।
জহিরুলের শ্বশুর নজরুল বলেন, জহিরুল বেকারীতে কাজ করতো। জহিরুলকে বেকারিতে কাজ করার জন্য গ্রাম থেকে নিয়ে এসেছিল ফারুক। ফারুক ছিনতাইতারী চক্রের সাথে জড়িত বলে শুনেছি। ফারুকই গ্রাম থেকে তিনজনকে শহরে নিয়ে এসেছে কাজ করানোর জন্য।
এদিকে উদ্ধার হওয়া গুলিবিদ্ধ ৪ যুবকের লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. আসাদুজ্জামান বলেন, ৪টি লাশের মধ্যে তিনজনের মাথায় গুলির চিহ্ন রয়েছে। তবে চারজনেই মাথার পেছন থেকে আঘাত করা হয়েছে। এবং ভারী কোন বস্তু দিয়ে মাথা ও মুখমন্ডল থেতলে দেয়া হয়েছে। তিনি আরো বলেন, শনিবার রাতের কোন এক সময়ে চারজনকে হত্যা করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গতকাল রোববার (২১ অক্টোবর) সকালে উপজেলার ঢাকা-সিলেট মহাসড়েকের সাতগ্রাম ইউনিয়নের পাচঁরুখী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে থেকে ৪ যুবকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এইসময় লাশের পাশ থেকে দুটি পিস্তল ও একটি মাইক্রোবাস উদ্ধার করা হয়েছে। পরে ময়নাতদন্তের জন্য পুলিশ লাশগুলো নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল মর্গে নিয়ে আসে।