নিশ্চিত হবে শিক্ষার মান

একাত্তরলাইভডেস্ক:বেসরকারি স্কুল কলেজের গভর্নিং বডিতে সংসদ সদস্যদের না রাখতে উচ্চ আদালত রায় দিয়েছেন। এই রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন শিক্ষাবিদরা।তারা বলছেন, শিক্ষাক্ষেত্রে দলীয়করণের যে অভিযোগ এই রায়ের ফলে তা থেকে মুক্তি মিলবে। অন্যদিকে শিক্ষার মান নিশ্চিত হবে।শিক্ষাবিদদের অভিমত, গভর্ণিং বডিতে সংসদ সদস্যদের পরিবর্তে প্রকৃত শিক্ষানুরাগী এবং শিক্ষার প্রতি আন্তরিক ব্যক্তিদের থাকা উচিত।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘আগে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন প্রশ্ন উঠত। উচ্চ আদালতের এমন রায়ে সেটি কমবে বলে আশা করা যাচ্ছে। তবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রকৃত শিক্ষানুরাগী, শিক্ষার প্রতি আন্তরিক ব্যক্তিবর্গের মাধ্যমে কমিটি করা গেলে এটি শিক্ষার মান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখবে।’তিনি বলেন, ‘শিক্ষার মানোন্নয়েনের অন্যতম একটা দিক হলো যোগ্য শিক্ষক। এক্ষেত্রে এনটিআরসিএ পদ্ধতিতে যে নিয়োগ প্রক্রিয়া রয়েছে সেটি সরকারের অন্যতম একটি অগ্রগতি বলা যায়।’বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যাপক ড. ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘রাজনৈতিক ব্যক্তিরা তাদের ব্যক্তিগত ও সরকারি বিভিন্ন কাজে অনেক ব্যস্ত থাকেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তারা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সময় দিতে পারেন না। যার কারণে অনেক সিদ্ধান্ত আটকে থাকে।’উচ্চ আদালতের রায়কে যুগান্তকারী উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সাংসদদের জায়গায় স্থানীয় কাউকে অথবা অভিভাবকদের নিয়ে কমিটি করলে ভাল হবে।’অধ্যাপক ড. আবুল কাশেম ফজলুল হক বলেন, ‘উচ্চ আদালতের এ রায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করবে। তবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিক সমস্যা দিন দিন বেড়ে চলেছে। এটি প্রতিকারে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।’উচ্চ আদালতের এ রায়কে ইতিবাচক উল্লেখ করে বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন বলেন, ‘একজন মন্ত্রী-এমপির চেয়ে স্থানীয় লোকদের নিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কমিটি করা গেলে শিক্ষার মান বৃদ্ধি পাবে। শিক্ষাবিদ, সাংস্কৃতি ব্যক্তিত্ব, প্রবীণ লোকদের নিয়ে এসব কমিটি গঠন করা উচিত। এক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখতে হবে সমাজের লোকজন কাকে গণ্যমান্য হিসেবে সহজে মেনে নিতে পারবে।’শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন সমস্যা সহজে তুলে ধরা এবং এসব সমস্যা সমাধানে করণীয় বিষয়ে যারা কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারবেন এ সকল কমিটিতে তাদের আসা উচিত বলে মনে করেন তিনি।  চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন কলেজের অধ্যক্ষ আবু তালেব বেলাল বলেন, ‘আদালতের এ রায় ঐতিহাসিক। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষক নিয়োগে এতদিন দলীয়করণের যে অভিযোগ ছিল তা থেকে মুক্তি মিলবে।’ এর আগে গত ১ জুন মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডি ও ম্যানেজিং কমিটি প্রবিধানমালা, ২০০৯ এর ৫ ধারাকে বাতিল করেন হাইকোর্ট। এর ফলে এ বিধান অনুযায়ী সংসদ সদস্যরা স্কুল-কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি হতে পারবেন না বলে জানান  রিট আবেদনকারী আইনজীবী ইউনুছ আলী আকন্দ। গত ৩ এপ্রিল এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হিসেবে সংসদ সদস্যদের দায়িত্ব পালন এবং নির্বাচন ছাড়া কমিটি গঠন কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছিলেন হাইকোর্ট। আবেদনকারী আইনজীবী ইউনুছ আলী বলেন, ‘মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের প্রবিধানমালা, ২০০৯ এর ৫ ও ৫০ ধারার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করা হয়েছিল। এর মধ্যে ৫ ধারা হচ্ছে এমপিদের সভাপতি পদ ও ৫০ ধারা হচ্ছে বিশেষ কমিটি গঠন নিয়ে। সোমবার আদালত দুটি ধারা বাতিল করেছেন। সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ঘোষণা করেছেন।’মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক অধ্যাদেশের (১৯৬১) আওতায় ‘মাধ্যমিক-উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডি ও ম্যানেজিং কমিটি প্রবিধানমালা, ২০০৯ এর ৫ ধারা (গভর্নিং বডির সভাপতি মনোনয়ন) এর (১) উপবিধিতে বলা হয়েছে, ‘কোনো স্থানীয় নির্বাচিত সংসদ সদস্য তাহার নির্বাচনী এলাকায় অবস্থিত বোর্ড কর্তৃক স্বীকৃতিপ্রাপ্ত এমন সংখ্যক উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডির সভাপতির দ্বায়িত্ব গ্রহণ করিতে পারিবেন।’ ‘(২) উপ-বিধান ১ এর অধীন সভাপতির দায়িত্বগ্রহণের জন্য স্থানীয় নির্বাচিত সংসদ সদস্য, তাহার নির্বাচনী এলাকায় অবস্থিত যে সকল উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব গ্রহণ করিতে ইচ্ছুক তাহার উল্লেখসহ লিখিতভাবে এই প্রবিধানমালার অধীন বোর্ডের চেয়ারম্যানের নিকট তাহার অভিপ্রায় ব্যক্ত করিবেন এবং উক্তি অভিপ্রায়পত্র সংশ্লিষ্ট বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা প্রতিষ্ঠানসমূহের সভাপতি হিসেবে তাহার মনোনয়নরূপে গণ্য হবে।’ ৫০ ধারায় বলা হয়েছে, ‘বিশেষ ধরনের গভর্নিং বডি বা ম্যানেজিং কমিটি, বিশেষ পরিস্থিতিতে বোর্ড এবং সরকারের পূর্বানুমোদক্রমে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের কোনো বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য বিশেষ ধরনের গভর্নিং বডি বা ক্ষেত্রমতে ম্যানেজিং কমিটি করা যাইবে।’