একাত্তরলাইভ ডেস্ক : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে কোনো ষড়যন্ত্র হলেও সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে নির্বাচন অবশ্যই হবে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর যেকোনো ধরনের ষড়যন্ত্র মোকাবিলার ক্ষমতা আওয়ামী লীগের ও সরকারের আছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
সৌদি আরব সফর বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। সোমবার বিকাল ৪টায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে এ সংবাদ সম্মেলন শুরু হয়। সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী তার সাম্প্রতিক সৌদি আরব সফরের বিস্তারিত কর্মকাণ্ড তুলে ধরার পাশাপাশি সমসাময়িক রাজনৈতিক ইস্যুতে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেবেন।
গত শনিবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত এক সমাবেশে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে সংশয় জানিয়েছিলেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। তিনি বলেছিলেন, ‘আর কয়েক মাস পরই নির্বাচন। এ নির্বাচন আদৌ অনুষ্ঠিত হবে কি না, এ নিয়ে আমি প্রবল আশঙ্কায় আছি। আমরা যেকোনো মূল্যে অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চাই।’ তারই কথার সূত্র ধরে আজকে প্রধানমন্ত্রীকে প্রশ্ন করেন ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সভাপতি শাবান মাহমুদ।
প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তারা তাদের মতো প্রস্তুতি নিয়ে নির্বাচন আয়োজন করবে। এখানে সরকার কোনো বিষয় নয়। ইসি স্বাধীন এবং তারা স্বাধীনভাবেই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, একটা কথা বলতে চাই, বাংলাদেশে সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন হোক, এটা আমরাও চাই। এবং সুষ্ঠুভাবেই নির্বাচন হবে, ইনশাল্লাহ। নির্বাচন নিয়ে যারা সংশয় সৃষ্টি করতে চাচ্ছে তাদের উদ্দেশ্যটা কী? গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা যাতে না থাকে, ষড়যন্ত্র বাংলাদেশের একটা চিরাচরিত বিষয়। প্রতিনিয়তই ষড়যন্ত্র হচ্ছে, ষড়যন্ত্র থাকবে, ষড়যন্ত্র চলবেই। এর মধ্য দিয়েই বাংলাদেশকে আর্থসামাজিক উন্নয়নের মাধ্যমে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ষড়যন্ত্র তো কম হয়নি। এর মধ্যেও এগিয়ে যেতে পারছি, তার কারণ একটাই— জনগণই শক্তি। আমরা জনগণের শক্তিতে বিশ্বাস করি। আমার ওপর জনগণের আস্থা, বিশ্বাস আছে বলে মনে করি। সেই বিশ্বাস থেকেই বলতে পারি, সুষ্ঠু নির্বাচন হবে।
নির্বাচন ঘিরে ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় প্রস্তুত জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা আশা করি, সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করেই নির্বাচন করতে সক্ষম হব। ইসি নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তারা নির্বাচনের ঘোষণা দেবে এবং সেই ঘোষণা অনুযায়ী নির্বাচন হবে এবং অবশ্যই হবে। এটাই আমি বিশ্বাস করি। আমি জানি না আপনাদের কী মত। কিন্তু যেকোনো ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করার শক্তি আওয়ামী লীগের আছে এবং সরকারও সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলার শক্তি রাখে।
ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেন যুক্তরাজ্যে বার-অ্যাট-ল পড়তে গিয়ে ইংরেজদের খাবার খাওয়া শিখলেও ইংরেজদের ভদ্রতা শিখতে পারেননি বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, সেই আমলে ব্যারিস্টারি পড়তে যাওয়া কম কথা না। কিন্তু তিনি গিয়ে শিখলেন ইংরেজদের খাবার খাওয়ার কায়দা। ইংরেজ খাবার ছাড়া তিনি খেতে পারতেন না। তার অবস্থাটা কাকের ময়ূরপুচ্ছ পরে ময়ূর হওয়ার মতো। তিনি ইংরেজ খাওয়াটা শিখলেন; কিন্তু তাদের ভদ্রতাটা শিখেননি, অ্যাটিকেট শিখেননি, কথা বলা শিখেননি। এটাই হলো বাস্তবতা, এই হলো সেই লোক।
গত ১৬ অক্টোবর বেসরকারি একটি টিভি চ্যানেলের টক শো’তে সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টিকে ‘চরিত্রহীন’ আখ্যা দেন ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেন। এ প্রসঙ্গে একজন সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একজন নারী সাংবাদিককে তিনি যে ভাষায় আক্রমণ করেছেন তা অত্যন্ত জঘন্য, বাজে। তার বাচনিক ভঙ্গি, অ্যাটিচিউড— সবই খারাপ। তার কাছে কী আশা করব? ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় তো পাকিস্তানের দালালি করেছেন। ইত্তেফাকের সাংবাদিক সিরাজউদ্দিন চৌধুরীকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল রাজাকাররা। এর জন্যও তিনি কম দায়ী নন।
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ১৯৭৫ সালে জাতির পিতাকে হত্যার পর খুনি মোশতাক যে দল করেছিল, সেই দলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল ব্যারিস্টার মঈনুলের। উনি কিন্তু পরে একটা দলও করেছিলেন। জাতির পিতার আত্মস্বীকৃত খুনি যারা, তাদের নিয়ে তিনি দল করেছিলেন। ইত্তেফাকেও তো মার্ডার করে ভাইকে (বর্তমান পানিসম্পদমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু) ফাঁসানোর চেষ্টা করেছেন। তাদের যে জমি, সেটা নিয়েও ঝামেলা রয়েছে। তাদের জমি নিয়ে রাষ্ট্রপক্ষের সঙ্গে মামলা আছে। আপনারা সাংবাদিকরা খুঁজে বের করে দেখেন। তার আসলে গুণের শেষ নেই।