নিরাপদ সবজি মিষ্টি কুমড়া চাষে ব্যাপক সফলতা পেয়েছে কৃষকেরা

কে. এম. রুবেল, ফরিদপুর: ফরিদপুর জেলার মধুখালী উপজেলাতে ছলতি বছর কৃষকেরা মরিচ খেতে সাথী ফসল হিসেবে মিষ্টি কুমড়া আবাদ করে ব্যাপক সফলতা পেয়েছে। কোন প্রকার কিটনাশক ও রাসয়নিক সার ব্যবহার না করে শুধু মাত্র বালাই নাশক ও সেক্স ফেরমোন ট্রাপ স্থাপনের মাধ্যমে বিশ মুক্ত নিরাপদ সবজি কুমড়ার চাষ করে ব্যাপক সফলতা পেয়েছে কৃষকেরা।
মধুখালী উপজেলার কৃষকেরা ব্যাপক ভাবে অর্থকরি ফসল মরিচ এর চাষ করে থাকে। মরিচের মৌসম শেষের দিকে মরিচের গাছের মধ্যে কৃষকেরা মিষ্টি কুমড়ার ও লাউ এর আবাদ করে। মরিচ খেতে মিষ্টি কুমড়ার বীজ রোপন করার ফলে কৃষকদের অতিরিক্ত সার ও কিটনাশক এর প্রয়োজন হয় না। এমনকি মিষ্টি কুমড়ার জন্য বাড়তি মাচার দরকার হয় না। মরিচ গাছই মাচার (জাংলার) কাজে ব্যবহার হযে থাকে। ফলে মরিচ খেতে অল্প খরচে মিষ্টি কুমড়ার চাষ করে কৃষকেরা ব্যাপক ভাবে লাভবান হচ্ছেন।
মধুখালী উপজেলা মহিষাপুর গ্রামের কুমড়া চাষী লিয়াকত আলী শেখ, সাহাদাৎ হোসেন, মোতালেব মোল্যা, আলী আকবর জানান, উপজেলা কৃষি কৃর্মকর্তা কৃষিবিদ খালেদা পারভীন এর পরামর্শে চলতি বছর ১৮ হেক্টর জমিতে সেক্স ফেরমোন ট্রাপ এর মাধ্যমে মিষ্টি কুমড়ার আবাদ করেছেন। প্রতি হেক্টর জমিতে লেবার, বীজ, জৈব সার, সেক্স ফেরমোন ট্রাপ মিলিয়ে খরচ হয়েছে ৩৫ হাজার টাকা। আর প্রতিহেক্টোর জমিতে যে পরিমান মিষ্টি কুমড়া উৎপাদন হয়েছে তা প্রায় ২ লক্ষ বিক্রি করতে পারবেন। এতে কৃষকদের প্রতি হেক্টর জমিতে প্রায় ১ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা লাভ হবে। কোন প্রকার কীট নাশক ব্যবহার না করেই নিরাপদ বিশ মুক্ত সবজি উৎপাদন করছে মধুখালী উপজেলার কৃষকেরা।
মধুখালী উপজেলার উৎপাদিত মিষ্টি কুমড়া স্থানীয় চাহিদা পুরন করে দেশের বিভিন্ন জেলার চাহিদাও পুরন করছে। প্রতিদিন ৩/৪শো মন মিষ্টি কুমড়া পাইকাড়ী বিক্রেতারা কৃষকদের কাছ থেকে কিনে ঢাকা কাওরান বাজার, বরিশাল, সাতক্ষীরা, চট্টগ্রাম, খুলনাসহ বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করছেন।
মধুখালী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ খালেদা পারভীন বলেন, মধুখারীতে চলতি বছর মোট ২হাজার ৬শ হেক্টর জমিতে কুমড়ার আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে ৫০ হেক্টর জমিতে কৃষকদের সেক্স ফেরমোন ট্রাপ ব্যবহার করা হয়েছে। সেক্স ফেরমোট ট্রাপ স্থাপনের ফলে ফলন বৃদ্ধি পেয়েছে। আগামিতে প্রতিটি মিষ্টি কুমড়া খেতে সেক্স ফেরমোন ট্রাপ স্থাপন করা হবে। নিরাপদ সবজি উৎপাদনের জন কৃষকদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেওয়ব হয়েছে। কি ভাবে নিরাপদ সবজি উৎপাদন করা হবে সে বিষয়ে প্রশিক্ষনের মাধ্যমে কৃষকদের সচেতন করে গড়ে তোলা হয়েছে। সেক্স ফেরমোন ট্রাপ এর পাশাপাশি বায়োপেস্টিফাইড (জৈব বালাই নাশক) ব্যবহার করে সবজি উৎপাদনে সহযোগিতা করছেন। তিনি জানান, কৃষক প্রতি হেক্টর জমিতে গড়ে ১২ মেট্রিক টন কুমড়ার ফলন হয়েছে। আর খরচ হয়েছে ৩০ থেকে ৩৫হাজার টাকা। ফলে কৃষকরা মিষ্টি কুসড়া আবাদ করে ব্যাপক সফলতা পেয়েছেন বলে মনেকরেন এই কর্মকর্তা।
মধুখালী উপজেলা মহিষাপুর গ্রামে মিষ্টি কুমড়া খেত পরিদর্শন করে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ফরিদপুর অ লের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ কিংকর চন্দ্র দাস। এ সময় তার সাথে ছিলেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা খালেদা পারভীন, সহকারি কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. ইছাক সেখ, উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা সিরাজুল আলম, মো. ছাদেকুল আলমসহ স্থানীয় প্রায় ৬০জন কৃষক উপস্থিত ছিলেন। তিনি সেক্স ফেরমোন ট্রাপের মাধ্যমে মিষ্ট কুমড়া চাষের বিষয়ে স্থানীয় কৃষকদের বিভিন্ন পরামর্শ দেন এবং আগামীতে কুমড়া চাষ কৃষকদের সবধরণের সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন।