নারায়ণগঞ্জে পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ বাড়ছে

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি:  নারায়ণগঞ্জে পুলিশের বিরুদ্ধে সাধারন মানুষের সাথে অন্যায় আচরনের অভিযোগ বাড়ছে। সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসির বিরুদ্ধে এক বিধবা মহিলার ভাইসহ তিনজনকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে সাজা দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। অন্যদিকে সদর থানার ওসি’র উপস্থিতিতে পজেশন কেনা দোকান থেকে এক ব্যাক্তিকে উচ্ছেদের অভিযোগ উঠেছে। সিদ্ধিরগঞ্জের ঘটনা তদন্তে পুলিশ সুপার তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করেছেন।
উজালা প্রিন্টিং এন্ড প্যাকেজিংয়ের মালিক জহিরুল হক নামের এক ব্যবসায়ী গতকাল সকালে নারায়ণগজ্ঞ প্রেসক্লাবের হানিফখাঁন মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন, নারায়ণগজ্ঞ সদর থানার ১৪ নং লয়েল ট্যাংক রোড হোল্ডিংয়ের দোকানটি ৫৪ বছর আগে তার বাবা ফকির চাঁন মিয়া পজিশন ক্রয় করেন। এবং সেখানে ‘উজালা প্রিন্টিং এন্ড প্যাকেজিং’ নামের একটি প্রেস প্রতিষ্ঠা করেন। বাড়িওয়ালার সাথে ভাড়া নিয়ে বিরোধের জের ধরে তিনি মামলা করেন।

এবং আদালতের মাধ্যমে দোকানের ভাড়া পরিশোধ করে আসছিলেন। পরবর্তীতে ২০১৬ সালের ২৭ নভেম্বর জেলা জজ ২য় আদালত উভয় পক্ষকে স্থিতাবস্থা বজায় রাখার আদেশ প্রদান করেন। কিন্তু তা না মেনে ঐবছর ৭ ডিসেম্বর প্রয়াত বাড়িওয়ালার ছেলেরা উজালা প্রেস ভাংচুর ও লুটপাট করে ক্ষতি সাধন করে। এ বিষয়ে সদর থানার ওসিকে আসাদুজ্জামানকে মৌখিক ও লিখিতভাবে জানালে তিনি কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো আমাকে দোকান ছেড়ে দিতে বলে। পরে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা থানার এস.আই. ইমরুলকে দিয়ে উজালার মালিক জহিরুল হককে ডেকে নিয়ে দোকান ছেড়ে দিতে ভয়ভীতি দেখান ও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন।
এরপর গত ৭ মে নারায়ণগজ্ঞ থানাও ওসি আসাদুজ্জামান, সিটি কর্পোরেশনের সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর শারমিন হাবিব বিন্নির সহযোগিতায় মনির হোসেন বিপ্লব, মোঃ সোহেল, মোস্তফা কাউসার, আক্তার হোসেনসহ ২০-২৫ জন তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান উজালা প্রিন্টিং এন্ড প্যাকেজিং-এ ভাংচুর ও লুটতরাজ চালায়। তাকে জোর করে তার দোকান থেকে উচ্ছেদ করে। জহিরুল হক অভিযোগ করেন, থানা কর্তৃপক্ষ আইনী পদক্ষেপ না নেয়ায় বারবার হামলা হচ্ছে। ’
অন্যদিকে ঢাকা-চটগ্রাম মহাসড়ক সংলগ্ন সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল এলাকার মৃত হোসেন আলী সাউদের মেয়ে বিধবা আছমা বেগম অভিযোগ করেন, আছমা বেগম ও তার সাত ভাই বোন তাদের বাবার সিদ্ধিরগঞ্জের ধনুহাজী রোড এলাকার ওয়ারিশসূত্রে পাওয়া ৪৯ দশমিক ৫০ শতাংশ সম্পত্তি গত ৫৭ বছর যাবত ভোগ দখল করে আসছেন। এ জমির বর্তমান মুল্য প্রায় পঁচিশ কোটি টাকা।

এলাকায় সম্পত্তির দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় স্থানীয় প্রভাবশালী সাকিব বিন মাহমুদ, মো. মহসিন, ও মনির এ জায়গা দখলের চেষ্টা করছে। তাদের নানাভাবে উচ্ছেদের চেষ্টা করছে। এ ব্যাপারে আছমা বেগম এ বছরের ২৫ এপ্রিল আদালতের আশ্রয় নিলে আদালত ওই জমিতে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি মুহাম্মদ সরাফত উল্লাহকে আদেশ দেন।
তিনি আদালতের আদেশের নথি নিয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি মুহাম্মদ সরাফত উল্লাহর সাথে দেখা করলে ওসি বিষয়টি দেখবেন বলে তার কাছে দশ লাখ টাকা ঘুষ দাবী করেন। এর মধ্যে ওসিসহ থানার পরিদর্শক আবুল হোসেন, দুই উপ-পরিদর্শক ওমর ফারুক এবং জাহাঙ্গীর আলম মিলে তার কাছ থেকে কয়েক দফায় প্রায় দুই লাখ টাকা আদায়ও করেন।

আসমা বেগমের অভিযোগ, পুলিশ তার কাছ থেকে ঘুষ আদায় করেও ভূমিদস্যুদের কাছ থেকে বিপুল অংকের অর্থ গ্রহন করে আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে তাদের জায়গাটি দখল করতে সহায়তা করেছে।

২৬ এপ্রিল পুলিশ তার ছোট ভাইসহ তিনজনকে ঘটনাস্থলে ডেকে নিয়ে মাদক দ্রব্য দিয়ে গ্রেফতার করে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে তিন মাসের সাজাও প্রদান করে।
স্থানীয় এলাকাবাসীও বলছেন, আসমা বেগমের ভাই মোহাম্মদ আলী মাদক ব্যবসাতো দূরের কথা তিনি ধূমপানও করেন না। মিথ্যা মামলায় তাদেরকে জড়ানো হয়েছে।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি মুহাম্মদ সরাফত উল্লাহ জানান, আদালতের নির্দেশে দুই পক্ষের মধ্যে শান্তি শৃংখলা বজায় রাখার চেষ্টা করেছেন। এখানে কারো পক্ষ নেয়া হয়নি।
এসব ব্যাপারে যোগাযোগ করলে জেলা পুলিশ সুপার মঈনুল হক বলেন, আমরা তথ্য পেয়েছি। সিদ্ধিরগঞ্জের ঘটনার ব্যাপারে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। অভিযোগ প্রমান হলে আইনগতভাবে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া সদরের ঘটনার ব্যাপারে খোঁজ নিচ্ছি।