না:গঞ্জ চীফজুডিশিয়াল আদালতের কর্মচারিকে আ’লীগ নেতা বাদলের মারধর,প্রতিবাদে মানববন্ধন

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধিঃ নারায়ণগঞ্জ চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতের প্রসেস সার্ভার সুমন সরকারকে জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহীদ বাদলের মারধরের ঘটনার প্রতিবাদে ও বিচারের দাবীতে এক ঘণ্টা কর্মবিরতি পালন করেছে নারায়ণগঞ্জ চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের কর্মকর্তা-কর্মচারিরা। রবিবার সকাল ৯ থেকে বেলা ১০ টা পর্যন্ত এ কর্মবিরতি পালন করে তারা নারায়ণগঞ্জ আদালত প্রাঙ্গনে মানববন্ধনে অংশ নেয়।
নারায়ণগঞ্জের ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সামনে অনুষ্ঠিত মানববন্ধন থেকে এ ঘটনার জন্য দায়ি আওয়ামীলীগ নেতা বাদলের কঠোর শাস্তি দাবি করা হয়। অন্যথায় আদালতের চতুর্থ শ্রেনীর কর্মচারীদের এ কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে কর্মচারীরা। মানববন্ধন শেষে চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে বিচারের দাবিতে স্মারকলিপি পেশ করা হয়।
এসময় উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা জাকির হোসেন, নাসির, প্রসেস সার্ভার মাসুদুর রহমান, দেলোয়ার হোসেনসহ চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারি।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, কর্তব্য পালন করতে অন্যান্য দিনের মতো গত ২৫ মে তারিখেও আদালত প্রাঙ্গনে ঢোকেন চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতের কর্মচারি সুমন সরকার। পরিচয় দেয়ার পরও জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহীদ বাদল ও তার সহযোগীরা তাকে লাঞ্চিত করার মতো ঊদ্ধত্যপূর্ন আচরণ করেছে। কোর কমপ্লেক্সের ভিতর এ ধরণের কাজ কোনভাবেই মানা যায় না। তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও প্রধান বিচারপতির কাছে সুমনকে লাঞ্চিত করার বিচার ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।
এ বিষয়ে পাবলিক প্রসিকিউটর এম ওয়াজেদ আলী খোকন কিছু জানেন না বলে জানান। তিনি বলেন, আমি ছুটিতে ছিলাম। কি হয়েছে সে বিষয়ে বাদী বা বিবাদী কেউ আমাকে কিছু জানায় নি। জানানো উচিত ছিলো। তবে আদালত পাড়ায় যেকোন অনাকাঙ্খিত ঘটনা দুঃখজনক।
গত ২৫ মে নারায়ণগঞ্জ চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে হেফাজতের দায়ের করা মামলায় হাজিরা দিতে আসেন খুন হওয়া মেধাবী ছাত্র তানভীর মোহাম্মদ ত্বকীর বাবা সাংস্কৃতিক ব্যাক্তিত্ব রফিউর রাব্বি। তার হাজিরা বাধাগ্রস্থ করতে কয়েকশত আওয়ামীলীগ নেতা-কর্মী ও হেফাজত সমর্থক কোর কমপ্লেক্সের ভেতরে অবস্থান নেয়। তারা আদালতে আসা প্রতিটি মানুষকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ভেতরে প্রবেশ করাচ্ছিলো। ঐদিন সকাল সাড়ে নয়টা চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট এর কর্মচারি সুমন সরকার তার মোটর সাইকেল নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করেন। আওয়ামীলীগ নেতা-কর্মীদের জটলার কারনে তিনি এগুতে পারছিলেন না। এসময় তিনি বারবার হর্ন দিলেও আওয়ামীলীগের নেতা-কর্মীরা সরছিলো না। এক পর্যায়ে জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহীদ বাদলের নির্দেশে প্রথমে তার কর্মীরা ও পরে তিনি নিজে সুমন সরকারকে মারধর করেন। এসময় এক পুলিশ সদস্য তাকে বাঁচাতে এগিয়ে এলে তাকেও লাঞ্ছিত করে বাদলের সহযোগিরা। এ ঘটনার ভিডিও চিত্র বিভিন্ন গনমাধ্যমে প্রচারিত হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা তৈরী হয়। অল্প কয়েকদিন আগে নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক খোকন সাহা সম্পর্কে কুরুচিপূর্ন লিফলেট বিতরনের অভিযোগ ওঠে ভিপি বাদল হিসেবে পরিচত আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহীদ বাদলের বিরুদ্ধে। সে বিতর্কের রেশ কাটতে না কাটতেই তিনি নতুন ঘটনায় জড়ালেন।
এদিকে আদালতের একটি সূত্র জানায়, রোববার বিকেল চারটায় আওয়ামীলীগ নেতা এডভোকেট সামসুল ইসলাম ভূইয়া ও এডভোকেট শরীফকে সাথে নিয়ে চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে গিয়ে সুমন সরকারের সাথে দেখা করেন আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহীদ বাদল। তিনি সুমন সরকারের কাছে তার অপরাধের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
যোগাযোগ করা হলে সুমন সরকার বলেন, আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহীদ বাদল এসেছিলেন। ম্যাজিষ্টেট্র সাহেবের খাস কামরায় গিয়ে তিনি আমার কাছেসহ এ আদালতের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারির কাছে ঐদিনের ঘটনার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন। সুমন জানান, আমার অথরিটি আমাকে এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নিতে বলেছিলো। কিন্তু আমি নেইনি। তার সাথে আপোষ হয়ে গিয়েছি। কেন আইনগত ব্যবস্থা নেননি, নিরপাত্তার কারনে ? এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আপনারা সাংবাদিক, নিরাপত্তার কারনে আইনগত ব্যবস্থা নেইনি তা কি আর বলব আপনাকে ?
যোগাযোগ করা হলে জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহীদ বাদল জানান, ঐদিন ঐ ছেলেটি মোটর সাইকেল নিয়ে এসে আমার গায়ের উপর তুলে দেয়ার উপক্রম করে। এসময় আমার সাথে থাকা আওয়ামীলীগের কর্মীরা তার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। তখন পরিস্থিতি সামলাতে আমি তাকে দু-একটি চর থাপ্পর দেই। তিনি বলেন, আমি সুমন সরকারের কাছে কোনো ক্ষমা চাইনি। বরং সে-ই ঘটনার দিন তার অপরাধের জন্য আমার কাছে ক্ষমা চেয়েছে। রোববার বিকেলে বঙ্গবন্ধু আইনজীবি পরিষদের ইফতার মাহফিলের ব্যাপারে আলোচনা করতে আমি আদালত এলাকায় গিয়েছিলাম। সুমনের সাথে কথা বলতে না। তার বিরুদ্ধে কোনো মানববন্ধন হয়নি বলেও বাদল দাবী করেন।