নিজস্ব প্রতিবেদক :
রাজধানীর বনানীর রেইনট্রি হোটেলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের মামলায় নাঈম আশরাফের (হাসান মোহাম্মদ হালিম) সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
বৃহস্পতিবার বিকেলে ঢাকা মহানগর হাকিম এস এম মাসুদ জামানের আদালত রিমান্ডের আদেশ দেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নারী সহায়তা ও তদন্ত বিভাগের পুলিশ পরিদর্শক ইসমত আরা এমি মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে আসামির ১০ দিন রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন।
রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, গত ২৮ মার্চ ওই দুই শিক্ষার্থীকে জন্মদিনের অনুষ্ঠানের কথা বলে বনানীর ‘দ্য রেইনট্রি’ হোটেলে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে সেখানে তাদের জোরপূর্বক মদ পান করিয়ে রাতভর ধর্ষণ করে সেটা ভিডিও করা হয়। ওই দুই শিক্ষার্থীর মধ্যে একজনকে ধর্ষণ করেন নাঈম আশরাফ। মামলার সুষ্ঠু তদন্ত, ঘটনার সাথে আর কেউ জড়িত আছে কি না তা জানার জন্য এবং সেই ধারণ করা ভিডিও উদ্ধারের লক্ষ্যে তার রিমান্ড মঞ্জুর করা হোক।
রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু রিমান্ড মঞ্জুরের পক্ষে শুনানি করেন। শুনানিতে তিনি বলেন, এটা ন্যক্কারজনক ঘটনা। ওই দুই শিক্ষার্থীকে অস্ত্রের মুখে ভয়-ভীতি দেখিয়ে সারা রাত ধর্ষণ করা হয়। এ আসামির বিরুদ্ধে একজনকে ধর্ষণের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে। এ ঘটনায় কারা কারা জড়িত তা জানা, সেই ভিডিও উদ্ধার এবং মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তার ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হোক।
এ সময় রাজধানী মানবাধিকার সংস্থার পক্ষে সৈয়দ নাজমুল হুদা এবং মহিলা আইনজীবী সমিতির পক্ষে ফাহমিদা আক্তার উপস্থিত ছিলেন।
অপরদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী খায়রুল ইসলাম (লিটন) রিমান্ড বাতিল চেয়ে শুনানি করেন। তিনি বলেন, এটি মিথ্যা মামলা। সাজানো মামলা। ষড়যন্ত্র করে তাকে ফাঁসানো হয়েছে।
উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত নাঈম আশরাফের সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
নাঈম আশরাফকে গতকাল বুধবার রাতে মুন্সীগঞ্জের লৌহজং থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এদিকে ওই ঘটনায় অপর দুই আসামি সাফাত আহমেদ ও সাদমান সাকিফ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিচ্ছেন।
বৃহস্পতিবার আসামিরা স্বেচ্ছায় জবানবন্দি দিতে সম্মত হওয়ায় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তাদের আদালতে হাজির করে জবানবন্দি রেকর্ড করার আবেদন করেন।
আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর হাকিম আহসান হাবিবের আদালতে প্রধান অভিযুক্ত সাফাত আহমেদ ও মহানগর হাকিম সাদবীর ইয়াছির আহসান চৌধুরীর আদালতে সাদমান সাকিফের জবানবন্দি গ্রহণ চলছে।
গত ১৩ মে সাফাত আহমেদের ছয় দিন এবং সাদমান সাকিফের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। এই মামলায় গত ১৬ মে সাফাতের গাড়িচালক বিল্লালের চার দিন এবং তার দেহরক্ষী রহমত আলীর তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, গত ২৮ মার্চ রাত ৯টা থেকে পরদিন সকাল ১০টা পর্যন্ত আসামিরা মামলার বাদী, তার বান্ধবী ও বন্ধু শাহরিয়ারকে আটকে রাখে। অস্ত্র দেখিয়ে ভয়-ভীতি প্রদর্শন ও অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করে। বাদী ও তার বান্ধবীকে জোর করে একটি কক্ষে নিয়ে যায় আসামিরা। বাদীকে সাফাত আহমেদ একাধিকবার ও তার বান্ধবীকে নাঈম আশরাফ একাধিকবার ধর্ষণ করে। আসামি সাদমান সাকিফকে দুই বছর ধরে চেনেন মামলার বাদী। তার মাধ্যমেই ঘটনার ১০-১৫ দিন আগে সাফাতের সঙ্গে দুই ছাত্রীর পরিচয় হয়।
এজাহারে আরো বলা হয়েছে, ঘটনার দিন দুই ছাত্রী সাফাতের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে যান। সাফাতের গাড়িচালক বিল্লাল ও দেহরক্ষী তাদের বনানীর ২৭ নম্বর রোডে দ্য রেইনট্রি হোটেলে নিয়ে যায়। হোটেলে যাওয়ার আগে বাদী ও তার বান্ধবী জানতেন না সেখানে পার্টি হবে। তাদের বলা হয়েছিল, এটা একটা বড় অনুষ্ঠান, অনেক লোকজন থাকবে। অনুষ্ঠান হবে হোটেলের ছাদে। সেখানে যাওয়ার পর তারা কোনো ভদ্রলোককে দেখেননি। সেখানে আরো দুই তরুণী ছিল। বাদী ও তার বান্ধবী দেখেন সাফাত ও নাঈম ওই দুই তরুণীকে ছাদ থেকে নিচে নিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় বাদীর বন্ধু শাহরিয়ার ও আরেক বান্ধবী ছাদে আসেন। পরিবেশ ভালো না লাগায় তারা চলে যেতে চান। এ সময় আসামিরা তাদের গাড়ির চাবি শাহরিয়ারের কাছ থেকে নিয়ে নেন। তাকে খুব মারধর করেন। ধর্ষণ করার সময় সাফাত গাড়িচালককে ভিডিও করতে বলেন। বাদীকে নাঈম আশরাফ মারধর করেন। পরে বাদী প্রতিবাদ করবেন বলে জানান।
এরপর বাদী ও বান্ধবীর বাসায় রহমতকে পাঠানো হয় তথ্য সংগ্রহের জন্য। তারা এতে ভয় পান। লোকলজ্জার ভয় এবং মানসিক অসুস্থতা কাটিয়ে উঠে পরে আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে আলোচনা করে তারা মামলার সিদ্ধান্ত নেন। এ কারণে মামলা দায়ের করতে বিলম্ব হয়।