নগরকান্দার আলোচিত শাজাহান হত্যাকান্ডের অগ্রগতি নেই

কে. এম. রুবেল, ফরিদপুর
ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার রামনগর ইউনিয়নের ব্যবসায়ী ও এনজিও ব্যক্তিত্ব শাজাহান শেখ হত্যার দীর্ঘ সাড়ে তিন মাস পেরিয়ে গেলেও মূল আসামীরা রয়েছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে। স্থানীয় প্রভাবশালী একটি মহল এ হত্যা মামলাটি ধামাচাপা দিতে এবং ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে নানা অপচেষ্টা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন নিহতের পরিবারের সদস্যরা। দ্রুতই মূল আসামীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার দাবী জানিয়েছেন তারা। এদিকে, শাজাহান হত্যা মামলার আসামীরা মামলাটি তুলে নিতে বিভিন্ন সময় চাপ প্রয়োগ করে আসছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। মামলাটি তুলে না নিলে আরো খারাপ পরিনতি হবে বলে হুমকি দেয়া হচ্ছে।
স্থানীয় এলাকাবাসী, মামলার সূত্র, নিহতের পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, রামনগর ইউনিয়নের রাধানগর গ্রামের মৃত লাল মিয়া শেখের ছেলে ব্যবসায়ী, এনজিও ব্যক্তিত্ব শাজাহান খুন হন গত ২২ ফ্রেবয়ারি। নিহত শাজাহানের লাশটি রামনগর রহিম ফকির সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিত্যক্ত টিনের ঘরের পেছনের গম ক্ষেতে পাওয়া যায়। নিহত শাজাহানের শরীরে বেশকিছু আঘাতের চিহৃ ছিল। এ ঘটনায় নিহতের ভাই হাবিবুর রহমান হাবিব শেখ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামাদের আসামী করে নগরকান্দা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে।
মামলার বাদী হাবিবুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, মামলা দায়েরের পর নগরকান্দা থানা পুলিশ মামলাটি নিয়ে টালবাহানা শুরু করে। প্রভাবশালী একটি মহলের ইন্ধনে পুলিশ মামলাটি ধামাচাপা দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। পুলিশের এহেন আচরনে স্থানীয়রা ক্ষুব্দ হয়ে উঠে। হত্যাকান্ডের কয়েকদিন পর স্থানীয় কয়েক হাজার এলাকাবাসী বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা করে। সভা থেকে শাজাহান হত্যাকারীদের গ্রেফতারের জন্য প্রশাসনের প্রতি আল্টিমেটাম ঘোষনা করে। হত্যাকারীদের গ্রেফতার করতে না পারায় বিক্ষুব্দ এলাকাবাসী কঠোর আন্দোলনের ঘোষনা করে। পরে পুলিশ হত্যার সাথে জড়িত সন্দেহে রামনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কুদ্দুস ফকিরের ভাগিনা মোতাহার হোসেন মোল্যাকে আটক করে। সূত্র জানায়, শাজাহানের মোবাইল ফোন কলের সূত্র ধরেই আটক করা হয় মোতাহার হোসেনকে। মোতাহারকে আটকের পর তাকে থানায় এনে জামাই আদরে রাখা হয়। রিমান্ডে নেয়া হলেও তাকে কোন প্রকার জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি। এরপর আটক করা হয় চেয়ারম্যান কুদ্দুস ফকিরের আরেক ভাগিনা সাইফুল ইসলাম মোল্যাকে। তাদের দুজনকেই আটকের পর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এইআই আহাদ মোটা অংকের টাকা খেয়ে তাদের কোন প্রকার জিজ্ঞাসাবাদ না করেই আদালতে পাঠিয়ে দেয়। বিভিন্ন সময় মামলার বিষয়ে থানায় গিয়ে আসামীদের ধরার বিষয়ে কথা বললে এসআই আহাদ কোন গুরুত্ব দেয়নি। অভিযোগ রয়েছে, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তিন লাখ টাকার বিনিময়ে আপোষরফা হয়। দীর্ঘদিন ধরে থানা পুলিশের কাছে ধর্না দিয়ে কোন লাভ না হওয়ায় মামলাটি সিআইডিতে স্থানান্তরের আবেদন করি। সেমতে বর্তমানে মামলাটি সিআইডিতে রয়েছে। হাবিবুর রহমান শেখ বলেন, আমার ভাইকে মোতাহার ও সাইফুল ফোন করে রাতে ডেকে আনে এর পর থেকে সে নিখোঁজ ছিল। পুলিশ শাজাহানের মোবাইল ফোনের কললিষ্টের সূত্র ধরে আটক করে মোতাহার ও সাইফুলকে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করলেই থলের বিড়াল বেড়িয়ে আসবে।
স্থানীয় বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষ জানান, হত্যাকারীরা এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তি। যাদের ধরা হয়েছে তারা শাজাহান হত্যাকারী হিসাবে চিন্থিত হয়েছে। তাদের সাথে আরো যারা জড়িত রয়েছে তাদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনতে হবে।
সিআইডি ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ আফসারউদ্দিন জানান, শাজাহান হত্যা মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব আমাদের উপর পড়েছে। এ বিষয়টি নিয়ে আমরা কাজ করছি। আশা করছি দ্রুতই শাজাহান হত্যার মূল রহস্যটি উদঘাটন করতে পারবো। হত্যাকারীরা যতই ক্ষমতাবান হোকনা কেন তাদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে।