ধর্ষিতা তরুণীর অনিচ্ছায় বক্তব্য-ভিডিও ধারণ

অনলাইন ডেস্ক :   রাজধানীর বনানীতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ ছাত্রীকে ধর্ষণ মামলার বাদীকে নিজের অনিচ্ছা সত্ত্বেও সাক্ষাৎকারের নামে ভিডিও ধারন করে সেটি ইউটিউবে প্রকাশ করার অভিযোগ উঠেছে। গতকাল শুক্রবার এই ঘটনার প্রতিকার চেয়ে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে অভিযোগ করেন ওই বাদী। তার অভিযোগ- অনেকটা অনিচ্ছাতেই ভিডিওটি ধারণ করা হয়েছে। সেটি করতে গিয়ে তিনি প্রতারণার স্বীকার হয়েছেন।ভিকটিমের অভিযোগ পাওয়ার সত্যতা স্বীকার করে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের ডিসি ফরিদা ইয়াসমিন জানান, অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, গত ২৮ মার্চ বনানীর রেইনট্রি হোটেলে জন্মদিনের অনুষ্ঠানে ডেকে নিয়ে ধর্ষণ করা হয় ২ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীকে। পুলিশ প্রথমে মামলা নিতে না চাইলেও পরে ৬ মে মামলা গ্রহণ করে। এরপর বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে ক্ষোভে ফেটে পড়ে সারাদেশ। ধর্ষকদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে বিবৃতি ও কর্মসূচি পালন করা হয়।
মামলার প্রধান আসামি সাফাত আহমেদ আপন জুয়েলার্সের মালিকের ছেলে। আর সাদমান সাকিফ পিকাসো রেস্তোরাঁর অন্যতম মালিক ও রেগনাম গ্রুপের কর্ণধার মোহাম্মদ হোসেন জনির ছেলে। তাদেরকে সিলেট থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বর্তমানে তারা রিমান্ডে রয়েছেন। মামলার অন্য আসামিরা হলেন- নাঈম আশরাফ (৩০), সাফাতের গাড়িচালক বিল্লাল (২৬) ও অজ্ঞাতনামা দেহরক্ষী।
মামলার পর বনানী থানার পরিদর্শক মতিনকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়। পরে পরে তদন্তকারী কর্মকর্তা বদলানো হয়। এখন তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছে পুলিশের উইমেন সাপোর্ট এন্ড ইনভেস্টিগেশন বিভাগ।
ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে ভিকটিমকে আইনী পরামর্শ দিচ্ছেন দাবিকারী লন্ডন প্রবাসী আইনজীবী নিঝুম মজুমদার বলেন, গুলশানের একটা বিল্ডিং সোসাইটির তরফ থেকে দুটি ছেলেকে বাদীর বাসায় পাঠানো হয়। তারা গিয়ে বাদীকে বলেন, এখনই সেক্রেটারি সাহেবের অফিসে যেতে হবে। বাদী প্রথমে যেতে রাজি না হলেও এক পর্যায়ে তাদের জোরাজুরিতে সেখানে যেতে বাধ্য হন। সেক্রেটারি অফিসে যাবার পর সেক্রেটারি সাহেব বলেন, যেহেতু এই ব্যাপারটা এখন মহল্লার প্রশ্ন, আমাদের সম্মানের ব্যাপার, সুতরাং তোমার কাছ থেকে জানতে হবে যে কি হয়েছিল। আমরা সাহায্য করব।
আইনজীবী দাবি করেন, ওই অফিসে আগে থেকেই ভিডিও করার জন্য ক্যামেরা নিয়ে রেডি ছিল কয়েকটি লোক। মেয়েটা (বাদী) ক্যামেরার সামনে প্রথমে বলতে রাজি হয়নি কিন্তু এক পর্যায়ে সেক্রেটারি তাকে ভুলভাল বুঝিয়ে রাজী করান। মেয়েটির বক্তব্য নিয়ে সেই ভিডিওটা ছেড়ে দিলেন সেক্রেটারি সাহেব। দিয়ে দিলেন একটা বেসরকারি টেলিভিশনকে। তিনি বলেন, মেয়েটি অত্যন্ত বিমর্ষ হয়েছেন তার ভিডিওটি দেখে, যেখানে তার মুখ মোটামুটি ভালোই বুঝতে পারা যায়। এরই মধ্যে ব্যাপারটি ভিকটিম সাপোর্টকে জানানো হয়েছে। তারা আইনী ব্যবস্থা নেবেন এই ব্যাপারে। কিন্তু এর মধ্যে তো মেয়েটির ভিডিও ভাইরাল হয়ে গেছে।
আইনজীবী বলেন, গুলশানের এই বিল্ডিং সোসাইটির সেক্রেটারিকে এখন একই সাথে বিচারের আওতায় আনতে হবে। এটি ছাড়া আমি আর পথ দেখিনা। দুটি বেসরকারি টেলিভিশনে বাদীর মুখ ঢেকে দিয়ে তার সংক্ষিপ্ত সাক্ষাতকার সংবাদে ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু প্রায় আরও ১৮ মিনিটের তার ভিডিও ইউটিউবে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। যেখানে অনেকটাই বাদীর চেহারা স্পষ্ট বোঝা যায়। যেটি বাদী চাননি। ডিসি ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, বিষয়টি ইনভেস্টিগেশনে আছে।