দিনাজপুরে অজ্ঞাত হিংস্র প্রাণীর আক্রমনে আহত ২১ ফাঁদ বসিয়েছেন বনবিভাগ

একরাম তালুকদার, দিনাজপুর : দিনাজপুর সদর উপজেলার পল্লীতে অজ্ঞাত হিংস্র বন্যপ্রাণীর আক্রমনে অন্তত ২১ জন আহত হয়েছে। কেউ বলছেন, এটি মেছো বাঘ, কেউ বলছেন নেকড়ে বাঘ, কেউ বলছেন বাঘদাস আবার কেউ বলছেন এটি হিংস্র বড় শিয়াল। আর এই পরিস্থিতিতে আশেপাশের কয়েকটি গ্রামে বিরাজ করছে চরম আতংক। আতংকিত লোকজন ক্ষেত-খামারে কাজ করতে যেতে পারছেনা। আক্রমন থেকে রক্ষা পেতে লাঠিসোঠা নিয়ে রাত জেগে পাহারা দিচ্ছেন গ্রামবাসী। আর বন বিভাগ প্রাণীটি ধরতে ফাঁদ পেতেও আয়ত্বে আনতে পারছেনা।দিনাজপুর সদর উপজেলার করিমুল্লাপুর গ্রামের শাহপাড়া, সরকারপাড়া, গোরস্থান মোড়, সিকদারহাটের হাজীপাড়া এলাকায় গত বুধবার সন্ধ্যা (২ নভেম্বর) থেকে অজ্ঞাত ওই হিংস্র বন্যপ্রাণীর আবির্ভাব ঘটে। লোকজন ক্ষেতে কাজ করতে গিয়ে আক্রমনের শিকার হচ্ছে।স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য গোলজার হোসেন জানান, ওই হিংস্র বণ্যপ্রানীর থাবায় শনিবার পর্যন্ত সদর উপজেলার ৬নং আউলিয়াপুর ইউনিয়নের করিমুল্লাপুর ও এর আশেপাশের গ্রামের মোট ২১ জন আহত হয়েছে। এদের মধ্যে নুরজাহান বেগম (৭০), আকতারা বেগম (৪০), আনোয়ারা বেগম (২৯), শহরবানু (২৬), সরকা বেগম (৪৪), মুক্তা বেগম (২২), হাসিম উদ্দীন (৫০), সোনিয়া খাতুন (২৬), সোহরাব আলী (৫৫), রুবা খাতুন (৬০) ও মোঃ বাবু (৩২) কে দিনাজপুর জেনারেল হাসপাতালে এনে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। বাকীরা স্থানীয় চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা নিচ্ছেন।করিমুল্লাপুর গ্রামের শহীদুল ইসলামের স্ত্রী নুরজাহান বেগম জানান, ক্ষেতে কাজ করতে গিয়ে আক্রমনের শিকার হয়েছেন তিনি। কিছু বুঝে উঠার আগেই ধান ক্ষেতে ঘাপটি মেরে থাকা ওই প্রানীটি হটাৎ লাফিয়ে তার মাথা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে থাবা বসিয়ে আহত করেছে।একই গ্রামের জাহাঙ্গীর হোসেনের স্ত্রী সোনিয়া বেগম জানান, বাড়ীর পাশে ধান ক্ষেতে ঘাস কাটতে যান তিনি। হঠাৎ পেছন থেকে হিংস্র ওই প্রাণীটি আক্রমন করে পেছনে থাবা বসিয়ে দেয়। এতে হাতে থাকা কাস্তে দিয়ে আঘাত করলে প্রানীটি পালিয়ে যায়। তার চেচামেচিতে স্থানীরা রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে তাকে দিনাজপুর জেনারেল হাসাপাতালে চিকিৎসা দিয়ে বাড়ীতে নিয়ে যায়। তিনি জানান, প্রাণীটি বড় লোম বিশিষ্ট এবং গায়ের রং ধুসর। আকারে প্রাণীটি শিয়ালের চেয়ে একটু বড় বলে জানান তিনি।অপর আহতরা প্রাণীটি সম্পর্কে অনুরূপ বর্ণনা দেন।আতঙ্কিত গ্রামবাসীরা জানান, হিংস্র ওই প্রাণীর ভয়ে তারা ক্ষেতে কাজ করতে যেতে পারছেন না। গোটা এলাকাটি বিস্তির্ণ ধান ক্ষেত হওয়ায় প্রাণীটি কোথায় লুকিয়ে আছে তাও তারা নিশ্চিত করে কিছু বলতে না পারায় আতঙ্কে এলাকায় চলাফেরা করছে। তবে সন্ধ্যার আগেই তারা বাড়ীতে ফিরে লাঠিসোঠা নিয়ে অবস্থান করছে।সুফিয়া বেগম নামে এক মহিলা জানান, এলাকায় হিংস্র প্রানীর আক্রমনের ভয়ে তার সন্তানকেই স্কুলে পাঠাচ্ছেন না।করিমুল্লাপুর গোরস্তান মোড় জামে মসজিদের মোয়াজ্জিন আব্দুল ওয়াহেদ জানান, হিংস্র প্রাণীর ভয়ে ভোরে মসজিদে আযান দিতে গিয়েও ভয় পাচ্ছেন তিনি । অবশেষে হাতে মোটা লাঠি নিয়ে তিনি রোববার ভোরে মসজিদে এসেছেন বলে জানান।হিংস্র প্রাণীর ভয়ে এলাকার প্রায় সবাই এখন নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন বলে জানান এলাকাবাসী। অনেকে সংঘবন্ধ হয়ে রাতে পাহারা দিচ্ছেন। পাহারায় অংশ নেয়া যুবক সোহরাব হোসেন জানান, একটি নয়, তারা একই সাথে একই ধরনের ৫টি প্রাণী দেখতে পেয়েছেন। শনিবার দিবাগত রাতে ওই প্রাণীগুলোকে তাড়া করেও পায়নি বলে জানান তিনি।রোববার সকালে ওই এলাকায় গেলে এই প্রতিবেদককে এলাকাবাসীর কেউ জানান এগুলো মেছো বাঘ, কেউ বলছেন নেকড়ে বাঘ, কেউ বলছে বাঘদাস আবার কেউ বলছে এটি হিংস্র বড় শিয়াল।এদিকে অজ্ঞাত এই হিংস্র প্রানীর বিষয়টি স্থানীয়রা প্রশাসনকে জানালে বনবিভাগের লোকজন সেখানে যায় এবং এলাকায় প্রাণীগুলোকে ধরার জন্য ফাঁদ বসিয়েছেন।অজ্ঞাত এই হিংস্র প্রাণীর আবির্ভাব ও আক্রমনের সত্যতা নিশ্চিত করে দিনাজপুর বনবিভাগের কর্মকর্তা আব্দুস সালাম তুহিন জানান, গ্রামবাসীর দেখা বিবরন মতে তাদের ধারনা প্রাণটি বাঘদাস হতে পারে। তবে ধরা না পড়া পর্যন্ত নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছেনা। বন বিভাগের এই কর্মকর্তা জানালেন প্রানীটিকে ধরতে এলাকায় একটি ফাঁদ বসানো হয়েছে। ফাঁদে মুরগী দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, প্রানীটির মুরগী পছন্দ না হওয়ায় হয়তো ফাঁদের আশে-পাশে আসেনি। তাই রোববার দিবাগত রাতে আরও ৪টি ফাঁদ বসিয়ে সেখানে ছাগল দেয়া হবে বলে জানান তিনি। এলাকাবাসীকে আতঙ্কমুক্ত করতে প্রানীটিকে ধরার জোর চেষ্টা চলছেন বলে জানান তিনি।