ঢাকায় চীনের প্রেসিডেন্ট, লাল গালিচা সংবর্ধনা

একাত্তরলাইভডেস্ক:ঢাকায় এসে পৌঁছেছেন বিশ্বের অন‌্যতম পরাশক্তি চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং। শুক্রবার বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে তাকে বহনকারী বিশেষ বিমানটি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। শি জিন পিংকে বহনকারী বিমান বাংলাদেশের আকাশ সীমায় ঢোকার পর তাকে পাহারা দিয়ে বিমানবন্দরে নিয়ে আসে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর কয়েকটি বিমান। বিমানবন্দরে চীনের প্রেসিডেন্টকে স্বাগত জানান বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। সামরিক বাহিনীর সুসজ্জিত একটি দল চীনের প্রেসিডেন্টকে সেখানেই গার্ড অব অনার দেয়। বিমানবন্দরে লাল গালিচা সংবর্ধনা দিয়ে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় বিমানবন্দরের সন্নিকটে লা মেরিডিয়ান হোটেলে।এদিকে চীনের প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফর উপলক্ষে তার চলাচলের জন‌্য বিমানবন্দর সড়কে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করছে পুলিশ।জিন পিংয়ের এই সফরে অর্থনৈতিক, বাণিজ‌্যিক, জ্বালানিসহ বিভিন্ন খাতে সহযোগিতামূলক চুক্তি ও সমঝোতার আওতায় চীনের কাছ থেকে ২০ থেকে ২৫ বিলিয়ন ডলারের সহায়তার আশা করছেন বাংলাদেশের কর্মকর্তারা।এদিকে দুপুরে কিছুটা বিশ্রাম ও খাবার খেয়ে লা মেরিডিয়ান হোটেলে থেকে বেলা ৩টার দিকে তেজগাওস্থ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যাবেনচীনের প্রেসিডেন্ট। সেখানে তার ও শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে দ্বিপক্ষীয় চুক্তিগুলো সই হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ফের লা মেরিডিয়ান হোটেলে ফেরার পর সেখানে তার সঙ্গে দেখা করবেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।সন্ধ‌্যায় বঙ্গভবনে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে মিলিত হবেন দুই রাষ্ট্রপ্রধান মো. আবদুল হামিদ ও শি জিন পিং। সফররত প্রেসিডেন্টের সম্মানে নৈশভোজ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি।শনিবার সকালে (১৫ অক্টোবর) ঢাকার অদূরে সাভারে স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন চীনের প্রেসিডেন্ট। এর পরপরই ঢাকা ছেড়ে ভারতের উদ্দেশে রওনা হবেন তিনি।শি জিনপিংয়ের সঙ্গে ১৩ সদস‌্যের উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল ঢাকায় এসেছে। এ দলে ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা ছাড়াও কয়েকজনমন্ত্রীও রয়েছেন।বিশ্ব অর্থনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রকে চ‌্যালেঞ্জ জানানো চীনের প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফরের উপর ওয়াশিংটনের পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়ার প্রভাবশালী রাষ্ট্র ভারতেরও নজর রয়েছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।ভূ-রাজনৈতিক কারণে গুরুত্বপূর্ণ বাংলাদেশের সোনাদিয়ায় একটি গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের কাজটি পেতে চায় চীন, যা নিয়ে ভারতসহ অন‌্য কয়েকটি দেশেরও আগ্রহ রয়েছে। ২০১০ সালে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে সফরে এসে ওই সমুদ্রবন্দরের প্রতি নিজ দেশের আগ্রহের কথা জানিয়েছিলেন তিনি। তবে বাংলাদেশ এখনও সমুদ্রবন্দরটি নিয়ে স্থির সিদ্ধান্তে পৌঁছেনি। যদিও শি জিন পিংয়ের এই সফরে এই সমুদ্রবন্দর আলোচ‌্যসূচিতে নেই।ভূ-রাজনীতিতে ভারতের প্রতিদ্বন্দ্বীহিসেবে চিহ্নিত চীনের প্রেসিডেন্টের এই সফর নিয়ে দেশটির সংবাদপত্র গ্লোবাল টাইমসের এক সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, তা ভারতের ‘দক্ষিণ এশিয়া কৌশল’ পুনর্মূল‌্যায়নে নয়া দিল্লির উপর চাপ তৈরি করতে পারে।’বাংলাদেশ ও চীনের ক্রমবর্ধমান সম্পর্ক নিয়ে ভারতের ঈর্ষান্বিত হওয়ার কিছু নেই বলেও মন্তব‌্য করে সংবাদপত্রটি।তবে চীনের সংবাদপত্রটির সঙ্গে একমত পোষণ করেন না বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী।ভারতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রেখে চলা বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু গৃহীত পররাষ্ট্র নীতিই অনুসরণ করছে বর্তমান সরকার। সেটা হলো- ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে শত্রুতা নয়’।বাংলাদেশের স্বার্থ অক্ষুণ্ণ রেখে চীনের সঙ্গে সব ক্ষেত্রে সম্পর্কের সম্ভাবনাগুলো খুলতে সরকারের নীতির ধারাবাহিকতায়ই শি জিন পিংয়ের এই সফর হচ্ছে বলে জানান তিনি।